জন্ডিসে কি খাবেন?
এটা সত্যি বলা হয়েছে যে, পেটের ওপর নির্ভর করে সারা শরীর চলে এবংযদি শরীর ঠিক না থাকে তবে পুরো শরীর বিকৃত হয়ে যায়। তাই জন্য যদি পেটে কোন সমস্যা হলে তাহলে তার প্রভাব পড়ে মুখে। এবং পেটের হাজার সমস্যার মধ্যে অন্যতম হল জন্ডিস। রক্তে বিলরুবিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে জন্ডিস হয়। পাচনতন্ত্র দুর্বল হওয়া জন্ডিসের প্রধান কারণ। জন্ডিস রোগের প্রভাব শরীরে রক্ত তৈরিতে পড়ে, যার ফলে শরীরে রক্তের পরিমাণ কম হতে থাকে। এই রোগে যদি অবহেলা করেন তাহলেকালো জন্ডিস হয়ে যাবে, যার ফলে মৃত্যুও ঘটতে পারে। সাধারণভাবে শরীরে বিলরুবিনের মাত্রা ০.২ থেকে ১.২ মিলিগ্রাম/ডিএল এর কম থাকে, কিন্তু যখন এটা ৩মিলিগ্রাম/ডিএল এর বেশি বেড়ে যায় তখন সেটি জন্ডিস রোগে পরিণত হয়। জন্ডিসের শুরুর দিকে এর লক্ষণ গুলি সেভাবে দেখা যায় না। যখন এই রোগ বাড়তে শুরু করে তখন রুগীর চোখ এবং নখ হলুদ হয়ে যায়। অন্যদিকে প্রস্রাবও হলুদ রঙের হয় এবং ঠিক ভাবে খাবার হজম হয় না।এছাড়াও শরীরের নানান পরিবর্তন ঘটে, যা দেখে জন্ডিসকে চিহ্নিত করা হয়।
জন্ডিসের লক্ষণ
শরীরে এর মধ্যে কোন পরিবর্তন এলে, জানবেন এগুলি জন্ডিসের লক্ষণ এবং দ্রুত এর চিকিৎসা করাবেন।
- ত্বকের রঙ হলুদ হয়ে যাওয়া
- ত্বক চটচটে হওয়া
- চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া
- পেট ব্যথা এবং জ্বলন অনুভব করা
- বমি হওয়া
- গা গোলানো
- দুর্বলতা
- মাথা ব্যাথা
- ক্ষুধার্ত অনুভব না করা
- অস্থিরতা
মূলতঃ দু ধরণের জন্ডিস হয়। যথা- সার্জিক্যাল জন্ডিস এবং মেডিক্যাল জন্ডিস।
জন্ডিসের কারণ-
- সংক্রমণ
- লিভারে দুর্বলতা
- শরীরের রক্তের অভাব
- রাস্তার পাশে কাটা ফল এবং দূষিত খাবার খাওয়া
জন্ডিসে উপযুক্ত খাদ্য
জন্ডিস নতুন হোক বা পুরনো কিছু ঘরোয়া খাবারের সাহায্যে জন্ডিস সারিয়ে তোলা সম্ভব। এইরোগ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য কিছু খাবার গ্রহণের সাথে কিছু খাবার ত্যাগ করা উচিৎ।
আপনি যদি জন্ডিসের লক্ষণ গুলি উপলব্ধি করেন তাহলে নিম্নে দেওয়া খাদ্য গুলি নিয়মিত খাওয়া শুরু করে দিন।
- পিঁয়াজ জন্ডিসের প্রতিকার হিসাবে খুব উপযোগী। পিঁয়াজকে টুকরো টুকরো করে কেটে তাতে গোলমরিচ গুঁড়ো, বিট নুন এবং লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে এবং বিকালে খান।
- তাজা মুলোর পাতা বেঁটে রস বের করে নিন এবং তা ছেঁকে পান করুন। এটি লিভারের দুর্বলতা কম করে, পেট পরিষ্কার করে এবং খিদেও বাড়ায়।
- জন্ডিস রোগের প্রতিকার হিসাবে টমেটোও খুব ভালো একটু উপায়। এক গ্লাস টমেটোর রসে স্বাদমত নুন এবং গোল মরিচ মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন। ধনের বীজকে সারা রাত ভিজিয়ে রেখে দিন এবং সকালে উঠে সেই বীজ খান।
- আয়রন এবং ক্যালসিয়াম জন্ডিসের সাথে লড়াই করার জন্য খুব দরকারি। তাই এই দুই উপাদান যুক্ত ঘোল খেলে সুবিধা পাওয়া যাবে।
- পেঁপে খেলে এনজাইম অ্যালবুমিনের মাত্রা সঠিক থাকে।
- আখের রস পান করুন, এটি রক্তে অতিরিক্ত বিলিরুবিন পরিমাণ সঠিক করে দেয়।
- দই জন্ডিসের সাথে লড়াই করার জন্য উপযোগী। এর মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া, জন্ডিসকে বাড়তে দেয় না।
- রসুনের তিন থেকে চার খোয়া নিয়ে বেটে নিন এবং সেটিকে দুধে মিশিয়ে খান। এতে জন্ডিস রোগের ভিতর থেকে চিকিৎসা হয় এবং লিভারে শক্তি প্রদান করে।
- ছোলার ডাল রাতে জলে ভিজিয়ে রেখে দিন। সকালে জলটা ফেলে দিয়ে ডালের সাথে গুড় মিশিয়ে খান। কয়েকদিন ক্রমাগত এই প্রতিকারকে ব্যবহার করলে আপনি জন্ডিস থেকে রেহাই পেতে পারেন।
- জন্ডিসের রোগীকে গাজর এবং কপির রস সমপরিমাণে একটি গ্লাসে মিশিয়ে খাওয়ান। এই রস ক্রমাগত কয়েকদিন খেলে আপনি জন্ডিস থেকে রেহাই পেতে পারেন।
- লেবুর রস জন্ডিসের জন্য খুব উপকারী। জন্ডিসের রুগীকে ১৫থেকে২০ মিলি লেবুর রস দিনে দু থেকে তিন বার পান করান।
- তাজা ভেষজ রসের সাথে মধু মিশ্রিত করুন এবং প্রতিদিন পান করুন, এটি দুই থেকে তিন সপ্তাহে জন্ডিস নিরাময় করবে।
- নবজাত শিশুরও যদি জন্ডিসের লক্ষণ দেখা যায় তাহলে স্তন্যপান করানো মায়েদেরও সকালে উঠে এক গ্লাস টমেটোর রস খাওয়া দরকার।
অন্যান্য সাবধানতা-
- গরম জিনিস খাবেন না।
- বেশি চলাফেরা করবেন না এবং আরাম করবেন।
- এই রোগে লঙ্কা, মশালাদার খাবার, ময়দা, মিষ্টি, বিউলির ডাল এবং তৈলাক্ত কোন খাবার খাবেন।
- সহজে হজম হয়ে যায় এমন খাবার খাবেন।
- জন্ডিস হলে এই উপায়গুলি ব্যবহারের পাশাপাশি ডাক্তারকেও দেখান।