টিউবারকুলোসিস
টিউবারকুলোসিস বা টিভি নামে পরিচিত রোগটি খুবই বিপদজনক। এটি একটি এমন রোগ যা সহজে চিহ্নিত করা যায় না সেই জন্য ইহার লক্ষণ গুলি জেনে রাখা খুবই জরুরী। পৃথিবীতে ৬-৭ কোটি লোক এই রোগের দ্বারা আক্রান্ত এবং প্রতি বছরে ২৫ থেকে ৩০ লাখ মানুষ মৃত্যুর পথে চলে যায় এই রোগের জন্য। দেশে প্রত্যেক তিনটি মানুষের মধ্যে দুজন এই রোগের কারণে মারা যায়। প্রত্যেকদিন ৪০ হাজার মানুষের এটির সংক্রমণ হয়।
এই রোগটি আসলে মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যা আমাদের ফুসফুসকে ক্ষতি করে। এই রোগটি ফুসফুসের রক্ত প্রবাল এর সাথে শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যেমন হাড়, হাড়ের জোড়, লিম্ফ গ্রন্থি, অঙ্গ, মূত্র বা প্রজনন তন্ত্রের অঙ্গ, টক এবং মস্তিষ্কের উপরিভাগের ঝিল্লি ইত্যাদি। এই জীবাণু দূষিত জল বা মাটির মাধ্যমে পাওয়া যায়। এটি হাওয়ার সাহায্যে এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে ছড়িয়ে পড়ে। টি.বি. এর ব্যাকটেরিয়া শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। কোন রোগীর কাশি, হাঁচি, কথা বলা অথবা থুতু ফেলার সময় শ্লেষ্মা বা থুতুর অনেক ছোট ছোট বিন্দুর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যাতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত হওয়াতে উপস্থিত থাকে এবং অন্য ব্যক্তির শরীরে পৌঁছে এই রোগটি সৃষ্টি করে।
যক্ষ্মা ও টিউবারকুলোসিস লক্ষণ
- টিবি জেনেটিক নয় বরঞ্চ একটি সংক্রামক রোগ। এর প্রভাব পড়ার পর ব্যক্তিটি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। এবং সাধারণত ফুসফুসে টিবি হওয়ার পর ব্যক্তিটির মস্তিষ্ক,যুটরস,মুখ , যকৃত, কিডনি, গলা, হাঁড় ইত্যাদি শরীরের কোন অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে।
- টিবি এর সব থেকে সাধারণ লক্ষণ হলো, দুসপ্তাহ এর থেকেও বেশি সময় ধরে কাশি হওয়া এবং তীব্র জ্বর হওয়া।
- কাশি শ্লেষ্মা এর সাথে কখনো কখনো রক্ত বেরিয়ে আসতে পারে। এছাড়াও খিদে কম হওয়া, ওজন কমে যাওয়া, সন্ধ্যে অথবা রাত্রিবেলায় জ্বর আসা, সর্দিতেও ঘাম বেরোনো, শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে ব্যথা ঘর লক্ষণ হতে পারে এবং কখনো এর লক্ষণ গোপনও হতে পারে। টিবির লক্ষণ চিহ্নিত হলে দ্রুত ডাক্তার কে দেখান এবং চিকিৎসা করান। এই কথার অবশ্যই খেয়াল রাখুন যে টিবি এর ওষুধের পুরো কোর্স যেন হয়। মাঝখান থেকে ওষুধ ছেড়ে দেওয়া ক্ষতিকারক হতে পারে।
টিবি এর অনেক লক্ষণ ক্যান্সার এবং ব্রংকাইটিস এর লক্ষণ এর মতই। এই তিনটি অসুখ এর মধ্যে পার্থক্য বোঝার প্রধান লক্ষণ গুলি হল:
- ক্যান্সারে মুখ থেকে বেশি রক্ত নির্গত হয়। ওজন কমে যায় কিন্তু জ্বর সব সময় দেখা যায় না।
- ব্রংকাইটিস এ শ্বাস নিতে অসুবিধা হয় এবং শ্বাস নেওয়ার সময় সিটির মতো আওয়াজ আসে।
- টিবিতে শ্বাসকষ্ট হয় না, কাশি এবং জ্বর আসে।
রোগের কারণ
ঠিকঠাক খাবার দাওয়া না করা লোকেদের বেশি পরিমাণে টিবি দেখা যায় কারণ কমজোর অনাক্রমতা হওয়ার দরুন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ এরা সহ্য করতে পারে না। যখন কম স্থানে বেশি লোক থাকে তখন দ্রুত ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে। অন্ধকার এবং আর্দ্র স্থানে টিবি এর ইনফেকশন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে কারণ টিভির ব্যাকটেরিয়া অন্ধকারে সৃষ্টি হয়। এই রোগটি সবারই হতে পারে কারণ এটি সংক্রমণ এর মাধ্যমে এক ব্যক্তির থেকে অন্য ব্যক্তিতে প্রবেশ করে। ধূমপান করা ব্যক্তিরও টিবির আশঙ্কা থাকে। ডায়াবেটিস রোগী, স্টেরয়েড গ্রহণকারী ব্যক্তি এবং এইচ আই ভি এর রোগীরা দ্রুত এই রোগের দ্বারা আক্রান্ত হন।
টিবি এর প্রভাব থেকে বাঁচতে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি
- ২০০ গ্রাম মধু, ২০০ গ্রাম মিছরি, ১০০ গ্রাম গরুর ঘি, এই তিনটি কে মিশিয়ে নিন। রোগীকে ৬-৬ গ্রাম ওষুধ দিনে কয়েকবার দিন। সাথে পানীয় হিসেবে গরু অথবা ছাগলের দুধ দিন।
- রোজ সকাল এবং সন্ধ্যেবেলায় যখন পেট খালি থাকে, তখন অর্ধেক কাপ পেঁয়াজ এর রস এক চুটকি হিং দিয়ে পান করুন।
- কলা শক্তিশালী অনাক্রমতা প্রস্তুত করতে পারে। একটা পাকা কলা নিন। সেটা চটকে তাতে এক কাপ নারকেলের জল,অর্ধেক কাপ দই এবং এক চামচ মধু মেশান। ইহাকে দিনে দুইবার গ্রহণ করুন।
- টাটকা কমলা লেবুর রসে একটুখানি নুন এবং মধু মিশিয়ে তাকে প্রত্যেক দিন সকাল-সন্ধ্যে পান করুন। কমলালেবু অনাক্রমতা শক্তিশালী করে এবং সাথে সাথেই ফুসফুসের কফ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
- টিবি নিরাময়ের জন্য কাস্টার্ড অ্যাপলও খুব উপকারী। কাস্টার্ড অ্যাপেলের সজ্জা বের করে খেয়ে ফেলুন।
- আখরোট টিবি রোগীদের শক্তি প্রদান করে, তাদের অনাক্রমতা বাড়ায় এবং তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে সাহায্য করে।