টিউবারকুলোসিস বা টিবি বা যক্ষ্মার লক্ষণ
অসুখের কোনও বিশ্বাস নেই, কেউ জানে না কখন কাকে অসুখের কবলে পড়তে হবে। অতএব, আমাদের সকলকে রোগ প্রতিরোধের উপায় এবং তাদের প্রাথমিক লক্ষণগুলি সম্পর্কে জানতে হবে। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে যক্ষ্মার উপসর্গগুলির দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করা যেতে পারে। তাই জন্য আজ আমরা জানব যক্ষ্মা রোগ কি এবং তার উপসর্গ কি?
প্রকৃতপক্ষে যক্ষ্মা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি রোগ, যা বাতাসের মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এটি সাধারণত ফুসফুস দিয়ে শুরু হয়। সাধারণত ফুসফুসে যক্ষ্মা হয়, তবে এটি ব্রেইন, জরায়ু, মুখ, লিভার, কিডনি, গলা, হাড়ের মতো শরীরের যে কোনো অংশেও হতে পারে।
যেহেতু যক্ষ্মা ব্যাকটেরিয়া বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে, এই সংক্রমণ কাশি এবং হাঁচির সময় মুখ এবং নাক থেকে বেরিয়ে বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি যদি রোগীর কোনো কাশি নাও থাকে, রোগীর সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে বসে বা শুয়ে থাকলেও এটির সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। তবে, ফুসফুস ছাড়া অন্য কোনো যক্ষ্মা এক থেকে অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে না এবং এটি বংশগত রোগ নয় বলে এটি এক প্রজন্মের থেকে অন্য প্রজন্মে সরবাহ হয় না।
যদি যক্ষ্মার লক্ষণ সম্পর্কে বলি, তাহলে এই ব্যাকটেরিয়া শরীরের যে অংশে হয়, সেই অংশের টিস্যুকে পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়। যদি ফুসফুসে যক্ষ্মা হয় তাহলে ফুসফুসে ধীরে ধীরে কার্যক্ষমতা কমে যায়, যদি এটি ইউটেরাসে থাকে, তাহলে উর্বরতার সমস্যা হতে পারে, এটি হাড়ে হলে হাড়কে গলিয়ে দেয় এবং যখন লিভারে হয় তখন পেটে জল ভরতি হয়ে যায়। তাদের যক্ষ্মা হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে প্রবল, যারা পুষ্টিকর খাবার খায় না এবং তাদের শরীরের দুর্বল প্রতিরক্ষা সিস্টেম ব্যাকটেরিয়া মারতে সক্ষম হয় না। ছোট জায়গায় বেশি লোক থাকলে যক্ষ্মা আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অন্ধকার এবং স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বেশি যক্ষ্মা হয় কারণ যক্ষ্মা ব্যাকটেরিয়ার ওপর ভিত্তি করে বাড়ে।যক্ষ্মা যে কারোর হতে পারে কারণ যক্ষ্মা একটি সংক্রমাণক রোগ এবং একজনের থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ধূমপায়ীদের মধ্যে যক্ষ্মা হবার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। ডায়াবেটিস রোগী, যারা স্টেরয়েড নেয় এবং এইচআইভি রোগীদেরও বেশি ঝুঁকি রয়েছে। উপরন্ত, যক্ষ্মা হবার সম্ভাবনা সেই সব মানুষের মধ্যে বেশি আছে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এবার আমাদের যক্ষ্মার লক্ষণ গুলি জানতে হবে-
- ২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি
- কাশির সঙ্গে কফ
- মাঝে মাঝে মলের সঙ্গে রক্তপাত
- ক্ষুধা হারানো
- ক্রমাগত ওজন হ্রাস
- সন্ধ্যায় বা রাতে জ্বর আসা
- শীতকালেও ঘাম হওয়া
- শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে ব্যথা
উল্লিখিত যে কোন লক্ষণই যক্ষ্মার লক্ষণ হতে পারে। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হল অনেক সময় লক্ষণগুলিনজরে পড়ে না। অনেক সময় যক্ষ্মার লক্ষণ ক্যানসার এবং ব্রঙ্কাইটিসের লক্ষণগুলির সাথে মিলে যায়। এই ক্ষেত্রে, এই উপসর্গগুলির কারণ কী তা নির্ধারণ করার জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, তিনটি রোগের মধ্যে পার্থক্য খোঁজার জন্য কিছু প্রধান লক্ষণ রয়েছে।
- ব্রঙ্কাইটিসে শ্বাস নিতে অসুবিধা হয় এবং শ্বাস নেওয়ার সময় সিটির মতো আওয়াজ হয়।
- ক্যানসারে মুখে রক্ত আসে।
- ওজন হারানোর মতো সমস্যা হতে পারে তবে সাধারণত কোন জ্বর নেই।
- যক্ষ্মা হলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় না এবং জ্বর হয়।
- এটি সত্যি যে যক্ষ্মা যে কারোর হতে পারে, তবে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করা হলে রোগটি সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হয়ে যায়।