গাঁটে ব্যথার চিকিৎসা:
শরীরে এমনি তো প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ তাই কোন অঙ্গের প্রতি অবহেলা করা উচিত নয় কিন্তু কয়েক টা এমন অঙ্গ আছে যেগুলিতে আপনার কখনো ব্যথা হলে তা কে বল সেই জায়গাতে সীমিত না থেকে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং আপনি সকাল-সন্ধ্যেঅসুবিধায় পড়ে যান এরকম একটি ব্যথা হিসেবে গাঁটের ব্যথাকে ধরা যায়। শরীরের যেসব জায়গায কতগুলি হাঁড় মিলিত হয়, তাকে গাঁট বলে, যেমন হাটু কাধ এবং কনুই ইত্যাদি। এইসব গাঁটে প্রচন্ড বেদনার দ্বারা কোনো অসুবিধা যা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাকে জয়েন্ট পেইন অথবা গাঁটের ব্যথা বলে।গাঁট শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যার কারণে ওঠাবসা, চলা ,শরীরকে মোড়ানো ইত্যাদি সম্ভব হয়। এরকম অবস্থায় শরীরে গাঁটে ব্যথা হলে পুরো শরীরের স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়ে এবং ব্যথার সাথে মানসিকভাবে দুর্বলতা অনুভব করেন। এখন জানা যাক জয়েন্ট পেনের লক্ষণ কারণ এবং চিকিৎসা কি।
গাঁটে ব্যথার লক্ষণ
- গাঁটকে মুড়তে অসুবিধা হয়।
- গাঁটের জায়গাটি লাল হয়ে যায়।
- গাঁটে টান অনুভব হয়।
- গাঁটে অসুবিধা হয়।
- চলতে-ফিরতে অসুবিধা হয়।
- গাঁটে কঠিনতা আসে।
- গাঁটে ব্যথা বেদনা হয়।
- গাঁট দুর্বল হয়ে পড়ে।
গাঁটে ব্যথার প্রধান কারণ
বয়স বাড়ার সাথে হওয়া কিছু অসুবিধা গাঁটে ব্যথার প্রধান কারণ হতে পারে যেমন-
- হাড়ে রক্তের অপূর্তির কারণে রক্ত চলন বাধা প্রাপ্ত হওয়া।
- রক্তের ক্যানসার হওয়া
- হাড়ে মিনারেল অর্থাৎ খনিজ কম হওয়া
- গাঁটে প্রচন্ড বেশি চাপ পড়া।
- গাঁটে ইনফেকশন হওয়া।
- হাড় ভেঙে যাওয়া।
- মচকে যাওয়া অথবা ব্যথা পাওয়া
- হাড়ে টিউমার ইত্যাদি হওয়া।
- আর্থ্রাইটিস
- সহজে ছড়ে যাওয়া
- অস্ট্রিওকনড্রাইটিস
- কার্টিলেজের ফেটে যাওয়া।
- কার্টিলেজের ঘষে যাওয়া
বন্ধুরা আমরা জয়েন্ট পেইন হওয়ার কারণ এবং লক্ষণ জেনে নিয়েছি এখন এর থেকে আরাম পাওয়ার উপায় জানানোর আগে এটি জানিয়ে দিই জয়েন্ট পেইন হওয়ার সমস্যা অনেক বেশি লোক এদের মধ্যে পাওয়া যায় এবং এর জন্য ডাক্তার ও হাসপাতালের চক্কর কাটার বেশি উপকারী হবে যদি আমরা আমাদের কিছু অভ্যাসের পরিবর্তন করি, কিছু সাবধানতা অবলম্বন করি এবং ব্যবহার করুন কিছু সহজ ঘরোয়া টোটকা যা আমরা তো পেয়ে যাব গাঁটের ব্যথার জন্য যা কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া ঘটাবে না।
গাঁটের ব্যথা থেকে আরাম পাওয়ার উপায়
- রসুন
রসুনের দুটি কোয়া প্রত্যেকদিন সকালে খালিপেটে জলের সাথে খান। যে কোন তেলের খাবার তৈরি হওয়ার সময রসুন এর কয়েক কোয়া দিয়ে রান্না করুন। এই তেলের উষ্ণ হওয়া অবধি অপেক্ষা করুন এবং প্রভাবিত অংশে মালিশ করুন। এই পদ্ধতি দিনে দু'বার ব্যবহার করা যেতে পারে। রসুনের ঔষধি গুণ ঘাড়ের ব্যথা ফুলে যাওয়া এবং জ্বালা ভাব ঠিক করে।
-
হলুদ
হলুদ রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দিয়ে গাঁটের ব্যথায় আরাম দেয় এবং ঘাড়ের কঠিনতা কম করে। এই জন্য বেশি করে হলুদের ব্যবহার করুন।
-
দুধ পান করুন
দুধ এর ফলে হাড়ে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি পাওয়া যায় যা হাড়কে মজবুত করে। যদি দুধ পছন্দ না হয় তাহলে দুধ দিয়ে তৈরি অন্য খাদ্য পদার্থ যেমন পনির, দই ইত্যাদি খেতে পারেন।
-
আদা
আদা ঔষধি গুণ দ্বারা ভরপুর যা রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে দেয় যা ঘাড়ের ব্যথা থেকে আরাম দেয়। জলকে আদা দিয়ে ফোটান এবং তা ঠান্ডা করে তাতে মধু মেশান। এবং দিনে তিনবার এই চা পান করুন। প্রভাবিত অংশে আদা যুক্ত তেল দিয়ে মালিশ করলে আরাম পাওয়া যায়।
-
আপেল সাইডার সিরকা
কোন কাপড় কে আপেলের সিরকায় ভিজিয়ে ব্যথা যুক্ত স্থানে ঢেকে দিন এবং কিছু ঘন্টার জন্য রেখে দিন। দিনে দুইবার এই পদ্ধতির ব্যবহার করুন। ২ কাপ আপেল সাইডার সিরকাকে উষ্ণ গরম জলে ঢেলে স্নান করতে পারেন। এক গ্লাস জলে কাঁচা আপেল সাইডার সিরকা এবং মধু মিশিয়ে পান করলে ব্যথায় আরাম পাওয়া যায়।
-
লঙ্কার গুঁড়ো
এক কাপ নারকেলের তেল কে গরম করে তার মধ্যে বড় চামচ লঙ্কার গুঁড়ো মেশান। এই মিশ্রণ প্রভাবিত অংশে লাগিয়ে প্রায় কুড়ি মিনিট এর জন্য ছেড়ে দিন। বেশি আরামের জন্য এই মিশ্রণকে প্রতিদিন ব্যথার অংশে লাগান।
-
সক্রিয় থাকুন
গাঁটের ব্যথা থেকে আরাম পাওয়ার জন্য সবসময় অ্যাক্টিভ বা সক্রিয় থাকুন অর্থাৎ গাঁটের মুভমেন্ট করতে থাকুন। লম্বা সময় ধরে একই ভাবে থাকলে গাঁটে কঠোরতা অনুভব হয়।
-
গরম এবং ঠাণ্ডা সেঁক
গরম সেক এর জন্য গরম জল কে বোতলে ঢেলে তোয়ালে দিয়ে ঢেকে ঘাড়ের সেঁক দিন। অন্যদিকে ঠান্ডা সেঁকের জন্য বরফের টুকরোকে তোয়ালে দিয়ে মুড়িয়ে ওই তোয়ালে দিয়ে সেঁক দিন। সেক দেওয়ার সময় কম করে ২ থেকে ৩ মিনিট ঘাড়ে একটানা সেঁক হওয়া উচিত। এই সম্পূর্ণ পদ্ধতি কে ১৫-২০ মিনিট পর্যন্ত করুন। এই পদ্ধতিটি আরাম পাওয়া পর্যন্ত দিনে দুবার করুন। গাঁটের ব্যথা থেকে আরাম পাওয়ার জন্য গরম এবং ঠাণ্ডা সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায় এবং গরম সেঁক দিলে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় যখন ঠাণ্ডা সেঁক দিলে ফোলা ভাব এবং ব্যথা কম হয়।
-
গাঁটকে আঘাত পাওয়া থেকে রক্ষা করুন
গাঁটে ব্যথা লেগে তার থেকে হাড় ভাঙতে পারে এইজন্য গাঁটকে ব্যথা থেকে দূরে রাখুন। যদি কোন এমন খেলা খেলেন যাতে গাঁটে ব্যথার সম্ভাবনা থাকে তাহলে জয়েন্ট প্যাড ব্যবহার করুন। টেনিস এবং গলফ খেলার সময়ও ব্রেসেস পরুন।
-
ওজন নিয়ন্ত্রণ
শরীরে বেশি ওজন হাঁটু এবং কোমরে প্রভাব ফেলে ।যার ফলে কার্টিলেজের ভাঙার সম্ভাবনা থাকে এর জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
-
স্ট্রেচিং বেশি করবেন না
ব্যায়াম করলে স্ট্রেচিং কেবল সপ্তাহে ৩ বার করুন। স্ট্রেচিং শুরু করবার আগে ওয়ার্ম আপ ব্যায়াম করুন।
-
সঠিক ভঙ্গিমা বানিয়ে রাখুন
গাঁটের ব্যথা থেকে আরাম পেতে সঠিকভাবে ওঠা, বসা এবং চলা খুবই দরকারি। সঠিক ভঙ্গিমা ঘাড় থেকে শুরু করে হাঁটু পর্যন্ত গাঁটের রক্ষা করে।
-
ব্যায়াম
গাঁটের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ব্যায়ামকে দৈনিক দিনচর্যার অংশ বানান। সাঁতারও গাঁটের ব্যথা থেকে আরাম দিতে একটি ভালো ব্যায়াম।
-
মালিশ
মালিশ শরীরের ব্যথাতে আরাম দেয়, একই পদ্ধতি গাঁটের ব্যথাতেও প্রযোজ্য। নারকেল, জলপাই, সরষে বা রসুন তেল দিয়ে প্রভাবিত অংশ মালিশ করুন। আস্তে চাপ দিয়ে ব্যথা প্রাপ্ত স্থানে মালিশ করুন। এরকম করলে ব্যথা যুক্ত স্থানে আরাম পাওয়া যাবে।