জন্ডিসের প্রতিকার
জন্ডিস এমন অবস্থাকে বলে, যখন রোগীর ত্বক এবং চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়। রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। যদিও এটা কোন রোগ নয়, কিন্তু এটা একটা রোগের বা পরিস্থিতির লক্ষণ, যেখানে ততক্ষণা সাবধানতা গ্রহন করা দরকার।
জন্ডিস অনেক রোগের কারণ হতে পারে। ম্যালেরিয়া, এনিমিয়া এবং থ্যালাসেমিয়ার মত রোগ বিলিরুবিন তৈরির গতিকে বাড়িয়ে দেয়। যেখানে হেপাটাইটিস, অ্যালকোহলিক লিভারের রোগ, গ্রন্থিতে জ্বর, লিভারে ক্যান্সার, এমনকি অত্যাধিক মাত্রায় মদ খেলে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়, যার ফলে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও অন্যান্য পরিস্থিতি, যেমন গলব্লাডারে পাথর এবং প্যানক্রিয়াটিক্স, শরীর থেকে বিলিরুবিনকে বার করে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে থাকে।
জন্ডিস হবার কারণ
জন্ডিস হবার মূল কারণ হল রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা অধিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়া। বিলিরুবিন এক ধরণের হলুদ রঙের পদার্থ, যেটা রক্তে উপস্থিত লাল রক্ত কনিকার ১২০ দিনের চক্র পূরণ হলে ভেঙ্গে তৈরি হয়। বিলিরুবিনে বিলি থাকে, যেটা লিভারে তৈরি পাচক তরল পদার্থ এবং এটি গলব্লাডারে থাকে। এটা খাবারকে হজম করতে এবং মল তৈরি হতে সাহায্য করে। যদি কোন কারণের ফলে বিলিরুবিন বিলির সাথে মিশতে না পারেকিংবা যখন লাল রক্ত কনিকা সামান্য থেকে কম পরিমাণে ভাঙতে শুরু করে, তখন রক্তে বিলিরুবিনের স্তর দ্রুত বাড়তে থাকে। আর এই ভাবে এটা অন্য অঙ্গে পৌঁছে সেখানে হলুদ ভাবের সৃষ্টি করে।
- এছাড়াও নোংরা জলের ব্যবহার করলে জন্ডিস হয়।
- অধিক পরিমাণে মদ খাওয়াও জন্ডিস হবার একটি মুখ্য কারণ।
- মশলাদার খাবার খেলে জন্ডিস হতে পারে।
- ভাইরাস জনিত সংক্রমণের কারণেও জন্ডিস হতে পারে।
- শরীরের রক্তের পরিমাণ কম হওয়ার কারণেও জন্ডিস হতে পারে।
জন্ডিসের লক্ষণ
জন্ডিসের নাম শুনেই বোঝা যায় এটা একটা হলুদ রোগ। এই রোগে শরীরের বিভিন্ন অংশ হলুদ হয়ে যায়। এছাড়াও জন্ডিসের অনেক লক্ষণ আছে যে গুলো দেখে বোঝা যাবে মানুষটির জন্ডিস হয়েছে কি না।
- চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাওয়া
- বমি বমি ভাব
- বমি হওয়া
- ত্বকের রঙ হাল্কা হলুদ হওয়া
- ডান দিকের পাঁজরের নিচের অংশ ভারি মনে হওয়া এবং ব্যথা অনুভব করা।
- পেটে ব্যথা হওয়া
- ক্রমাগত ওজন কমতে থাকা
- সন্ধ্যের সময় ক্লান্তি অনুভব করা
- ১০২ ডিগ্রির আসে পাশে জ্বর থাকা
- পায়ে ব্যথা হওয়া
- শরীরে চুলকানি হওয়া
বেশির ভাগ মানুষ জন্ডিস হল বৈজ্ঞানিক ঔষধের বদলে ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করে থাকে। এইজন্য আসুন আমরা জানি, কিছু ঘরোয়া উপায় যেগুলি ব্যবহার করে আপনি জন্ডিসের চিকিৎসা করতে পারবেন।
- আঁখের রস
আঁখের রস দিনে কয়েকবার পান করা উচিৎ। জন্ডিসের জন্য এটা খুব উপকারী। আঁখের রস পান করলে জন্ডিস খুব দ্রুত সেরে যায়।
-
ঘোল
জন্ডিস হলে প্রতিদিন এক গ্লাস ঘোল খাওয়া দরকার। এতে গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে পান করলে এর গুন আরও বেড়ে যায় এবং এটি কিছুদিনের মধ্যেই জন্ডিসকে পুরোপুরি শেষ করে দেয়।
-
পেয়াজ দিয়ে চিকিৎসা
পেয়াজ জন্ডিসে খুব লাভবান হয়। পেয়াজকে কেটে নিন এবং লেবুর রস দিয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। কিছু ঘণ্টা পর এই পেয়াজকে বাইরে বার করে নিন। এতে লবণ এবং গোলমরিচ মিশিয়ে রোগীকে খাওয়ান। দিনে দুবার এই পিয়াজকে খেলে জন্ডিস খুব তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে যায়।
-
ফল
ফলের মধ্যে তরমুজ এবং খারবুজা, দুটোই জন্ডিস দূরীকরণে খুব উপকারী। এগুলিকে বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিৎ। এতে জন্ডিস দ্রুত ঠিক হয়ে যায়।
-
লেবুর রস
লিভার কোষের সুরক্ষা বৃদ্ধি করার জন্য দিনে ৩-৪ বার লেবুর রস জলে মিশিয়ে পান করুন।কিছু দিনের মধ্যেই আপনি জন্ডিস থেকে ছুটি পেতে পারেন।
-
মুলো পাতা
মুলো পাতা জন্ডিসের চিকিৎসার জন্য খুব উপকারী। পাতা গুলিকে বেটে তার থেকে রস বার করে সেটিকে খেলে খুব ভাল হয়। এটি খিদে বাড়াবে এবং পেট পরিষ্কার করবে। এবং আপনি জন্ডিস থেকে ছুটি পাবেন।
-
টমেটোর রস
টমেটোর রস জন্ডিসের জন্য খুব উপকারী। টমেটোর রসের সাথে লবণ এবং গোলমরিচ মিশে পান করুন।
-
বিশেষ সাবধানতা গ্রহণ করুন
স্বাস্থ্যে উন্নতি আনার জন্য এক দুই কিলোমিটার ঘুরুন এবং কিছুক্ষন রোদ্দুর বসে থাকুন। ভোজনের সময় সেই সব খাবার গ্রহণ করুন যেগুলির মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন C, ভিটামিন E এবং ভিটামিনB এর উপাদান বর্তমান রয়েছে।পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলেও খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে কোন অবেহেলা করবেন না। ব্যায়াম করুন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন থাকুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
-
জন্ডিসে যে সব খাবার খাবেন না
চর্বি জাতীয় খাবার যেমন তেল, ঘি, মাখন কমপক্ষে ১৫ দিন পর্যন্ত খাবেন না। এর কিছু দিন পর থেকে মাখন বা জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করতে পারেন। ডাল খাবেন না।