জন্ডিস আসলে কি?
রক্তে বিলিরুবিনের ক্রমশ বৃদ্ধি থেকে ত্বক, নখ এবং চোখের সাদা অংশ বাইরে থেকে দেখে হলুদ বলে মনে হয়-- সাধারণত এই পরিস্থিতিকেই জন্ডিস বলা হয়ে থাকে। জন্ডিস আক্রান্ত রোগীর প্রস্রাবের রঙ ও হলুদ হয়। জন্ডিস একটি সাধারণ রোগ মনে হতে পারে, কিন্তু সঠিক সময়ে এর প্রতিকার না হলে, পরবর্তী সময়ে এর ফলাফল ভয়ানক হয়ে দেখা দেয়। এটি লিভার ঘটিত একটি রোগ এবং রোগীর জীবন পর্যন্ত শেষ করে দেওয়ার মত মারাত্মক। এই সমস্যা নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে বেশী দেখা যায় বটে, কিন্তু প্রাপ্তবয়স্করাও এর শিকার হয়এ থাকেন।
জন্ডিস কেন হয়?
বিলিরুবিন একটি হলুদ রঙের পদার্থ। এটি রক্ত কোষে পাওয়া যায়। কোষ মৃত হয়ে গেলে, লিভার তাদের রক্ত থেকে ফিল্টার করে। কিন্তু যকৃতের কিছু অসুবিধা হওয়ার কারণে লিভার এই পদ্ধতিটি সঠিকভাবে যখন করতে পারে না তখন বিলিরুবিন ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই কারণে, আমাদের ত্বক হলুদ বর্ণের হয়। জন্ডিস প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বিরল একটি রোগ। এই সমস্যার পিছনে যা কিছু কারণ আছে, তা নিম্নরূপ--
- যকৃতের প্রদাহ।
- অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার।
- পিত্ত নালী বন্ধ হয়ে যাওয়া।
- অ্যালকোহোল সম্পর্কিত লিভারের রোগ।
- রাস্তার পাশে, কাটা, দূষিত খাদ্যবস্তু গ্রহণ করা এবং ময়লা পানীয় পান করার মাধ্যমে।
- কিছু ঔষধের কারণেও এই সমস্যা ঘটতে পারে।
সঙ্গে এই লক্ষণ শনাক্ত করুন--
- রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ত্বক, নখ এবং চোখের সাদা অংশ খুব দ্রুত হলুদ হয়ে ওঠে।
- ফ্লু এর লক্ষণগুলি একই সাথে উপস্থিত থাকে।যেমন, এই ক্ষেত্রে রোগীর ঠান্ডা লাগা ভাব লেগে থাকে, জ্বর আসে, বমি শুরু হয়।
- যকৃতের রোগের মতো। বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা, ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া এবং খাবার হজম না হওয়ার মত উপসর্গও দেখা যায়।
- ওজন কমে যাওয়া।
- ফ্যাকাশে / হলুদ প্রস্রাব হওয়া।
- ক্লান্ত বোধ করা।
এটা পরীক্ষা করে দেখুনঃ
উপরের উপসর্গগুলির উপর ভিত্তি করে যদি আপনি সন্দেহ করেন যে আপনার জন্ডিস হয়েছে, তবে সেই মূহুর্তে চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসক আপনার শারীরিক পরীক্ষা করে নির্ণয় করতে পারবেন যে আপনার জন্ডিস হয়েছে কি না। এটি বিশেষ করে চোখের ও ত্বকের রঙ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। তারপর বিলিরুবিন পরীক্ষা, রক্ত কণিকার পূর্ণগণনা (এফ বি সি) অথবা সম্পূর্ণ রক্ত গুনতি (সি বি সি) এবং হেপাটাইটিস এ, বি এবং সি পরীক্ষা করান। চিকিৎসকের পরামর্শ ভুলবেন না।
এগুলি অবশ্যই মনে রাখবেনঃ
- সঠিক ডায়েট যে কোন রোগের সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। জন্ডিসের সময়ে নিয়মিত ডায়েট এবং লাইটওয়েট ব্যায়াম করা যেতে পারে। তবে আপনার শারীরীক পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয় তবে এটিকে এড়িয়ে যান এবং সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিন। এছাড়াও, তরল খাদ্য গ্রহণ করুন এবং পানীয় রূপে ফলের রস পান করুন। কমলা লেবু, পাতি লেবু, পার্সলে, আঙ্গুর, গাজর, মটর শুটি এবং আমলার রস খুব উপকারী।
- ভারী খাবার খাবেন না। ভারী খাবারের পরিবর্তে ডালিয়া বা পোরিজ খেলে উপকার পাবেন।
- সকালের জলখাবারে আঙ্গুর, ন্যাসপাতি, পেঁপে খেতে পারেন।
- নারকেল জল এই সময় খুব উপকারী। দিনে অন্তত দুইবার এটা পান করুন।
- এ ছাড়াও, সিদ্ধ পালং , মেথি, গাজর, দুইটি গমের রুটি এবং এক গ্লাস করে ছাতুর শরবত খান।
- কমপক্ষে ১৫ দিনের জন্য মেদ যুক্ত পদার্থ যেমন, তেল, মাখন, ঘি, ক্রিম খাবেন না। এর পর, অল্প পরিমাণে মাখন বা জলপাই তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। এই সময়ের খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের উপস্থিতি থাকা উচিত। সুস্থ হওয়ার পরেও, খাবারে প্রতি অবহেলা করবেন না। নিজের যত্ন নেবেন।
এই ঘরোয়া উপায় প্রয়োগ করে দেখুনঃ
- জন্ডিস রোগের উপশমে পেঁয়াজ খুব উপকারী। পেঁয়াজ পাতলাভাবে কেটে এবং তার উপর কালো মরিচ, একটু কালো লবন এবং লেবুর রস দিয়ে প্রস্তুত করুন এবং দিনে দু’বার করে গ্রহণ করুন।
- আখের রস জন্ডিসে খুব উপকারী কিন্তু খেয়াল রাখুন এটি বিশুদ্ধতার সাথে প্রস্তুত করা হয়েছে কিনা।
- তিনটি, চারটি রসুনের কোয়া পিষ্ট করে সেই মিশ্রণ যদি দুধ সহযোগে গ্রহণ করেন, জন্ডিস থেকে দ্রুত আরামপাওয়া যায় এবং যকৃতও শক্তিশালী হয়।
- মুলোর সবুজ পাতা জন্ডিস অত্যন্ত উপকারী ভূমিকা পালন করে। পাতা পিষ্ট করে এর রস বের করে নিন এবং ছেঁকে নিন। তারপর পান করুন। এর ফলে ক্ষুধা বাড়বে এবং অন্ত্র পরিষ্কার হবে।
- টমেটোর রস জন্ডিসে খুব উপকারী। একটু লবণ এবং কালো মরিচ মিশিয়ে রস প্রস্তুত করুন এবং পান করুন। স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য এক- দুই কিলোমিটার হাঁটার জন্য যান এবং কিছু সময়ের জন্য সূর্যের আলোর নীচে থাকুন। টমেটো স্যুপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
- রাতে ছোলার ডাল জলে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে সেই জল ফেলে দিয়ে কিঞ্চিৎ নুন দিয়ে তা খেয়ে নিন। নিয়মিত এটা করলে জন্ডিসের উপশম সম্ভব।
এটা চেষ্টা করে দেখুনঃ
একটি খাওয়ার মত বাংলা পান (খাদ্য হিসাবে সামান্য তেতো লাগবে) নিন এবং এই পানের মধ্যে চুন দিয়ে পানটি প্রস্তত করুন। এখন পানের মধ্যে ৩-৪ ফোঁটা আখের দুধের মিশ্রণ দিয়ে সকাল বেলা খেয়ে নিন।