টনসিলের লক্ষণ
টনসিল জিনিসটি কি? টনসিল গলার পিছনে অবস্থিত নরম টিস্যুর সমষ্টি। টনসিল লসিকা প্রণালীর একটি অংশ, যা সংক্রমনের সময় লড়তে সাহায্য করে। সংক্রমণের প্রতিক্রিয়ার উপর এর আকার এবং ফোলা ভাবে ভিন্নতা দেখা। যদিও টনসিলকে ব্যতিরেকে সংক্রমণের প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি দেখা যায় না। টনসিল নিজের যৌবনারম্ভের কাছাকাছি এসে সব থেকে বড় আকার পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং এর পরে ধীরে ধীরে ইহার ক্ষয় হতে থাকে। যদিও গলার চওড়ার সাথে টনসিলের আকারের তুলনা করা হয় তাহলে ইহার পরিমাপ ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বড় হয়। সাধারনত প্রত্যেক টনসিল ২.৫ সেন্টিমিটার লম্বা, ২.০ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ১.২ সেন্টিমিটার মোটা হয়।
টনসিলাইটিস কি?
টনসিল একটি রক্ষা তন্ত্র হিসেবে কাজ করে। ইহা সংক্রমণ থেকে আপনার শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। যখন টনসিলের সংক্রমণ হয়, তখন সেই পরিস্থিতিকে 'টনসিলাইটিস' বলা হয়। টনসিলাইটিস যে কোন বয়সে হতে পারে এবং ইহা শৈশবে হওয়া একটি সাধারণ সংক্রমণ। পূর্ব-স্কুলীয় বয়স থেকে মধ্য কিশোর অবস্থার বাচ্চাদের মধ্যে টনসিলের রোগ দেখতে পাওয়া যায়। টনসিলাইটিস এর লক্ষণ এর মধ্যে গলা খুশখুশ, টনসিল ফুলে যাওয়া এবং জ্বর অন্তর্গত। ইহা সংক্রামক হয় এবং বিভিন্ন ভাইরাস এবং জীবাণুর কারণে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ স্ট্রেপটোকক্কাল ব্যাকটেরিয়া যা স্ট্রেপ থ্রোট (একটি জীবাণুর সংক্রমণ যার কারনে গলা ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়) এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্ট্রেপ থ্রোট এর কারণে হওয়া টনসিলাইটিসের যদি চিকিৎসার না করানো হয় তাহলে গভীর সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। টনসিলাইটিসের নির্ণয় সহজে করা যায়। এর লক্ষণ সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। টনসিলাইটিস এর সাধারণ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার আবশ্যকতা নেই, বিশেষত যখন এই ভাইরাস জ্বরের কারণে হয়। টনসিলাইটিসের প্রচন্ড গুরুতর সমস্যার প্রতিকার করতে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ অথবা টনসিলেক্টমি (টনসিলকে বের করার একটি সার্জারি) হতে পারে।
টনসিলের লক্ষণ
টনসিলাইটিস এর চিহ্ন এবং লক্ষণ সব থেকে বেশি লক্ষ্য করা যায় মাঝবয়সী বাচ্চাদের মধ্যে তথা মধ্য কিশোর অবস্থা এর বাচ্চাদের মধ্যে হয়। টনসিলাইটিস এর সাধারণ সংকেত এবং লক্ষণ গুলি হল:
- লাল এবং ফুলে যাওয়া টনসিল ,টনসিলের উপর সাদা অথবা হলুদ রংয়ের আবরণ অথবা ছোপ, গলায় খুশখুসশ, ঢোক গিলতে অসুবিধা অথবা ব্যথা সহ জ্বর ঘাড়ে উপস্থিত মুলায়াম গ্রন্থি (লিম্ফ নোডস) বেড়ে যাওয়া , খরখরে, ধীরে অথবা ভারী আওয়াজ, নিঃশ্বাসের সময় দুর্গন্ধ, পেটে ব্যথা (বিশেষত ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে) ঘাড়ে কঠিনতা, মাথা ব্যথা।
- খুব ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যারা কথা বলতে অক্ষম, তাদের টনসিলাইটিস এর লক্ষণ গুলি হল-গিলতে অসুবিধা অথবা ব্যথা হওয়ার কারণে লালা পড়া, খেতে অনীহা, অস্বাভাবিক ভাবে খিটখিটে হওয়া। ইহার চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- যদি আপনার বাচ্চার মধ্যে এরকম লক্ষণ থাকে যা টনসিলাইটিস এর সংকেত হতে পারে তাহলে ইহার সঠিক প্রতিকার করা খুবই জরুরি। ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন যদি আপনার বাচ্চা এইসব অনুভব করে।
- গলা খুশখুশ ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত চলতে থাকা, গিলবার সময় ব্যথা অথবা অসুবিধা, অত্যাধিক দুর্বলতা, ক্লান্তি অথবা খিটখিটেমি যদি আপনার বাচ্চার মধ্যে উপরোক্ত কোন লক্ষণ দেখা যায় তাহলে তা লক্ষ্য করুন। অনেক সময় লোকেরা এটিকে অবহেলা করে ফেলে।
- এর অনেকগুলি লক্ষণ এর মধ্যে একটি হলো যে নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা এবং গিলতে অনেক বেশি অসুবিধা। অনেক সময় তো আপনি লালা পড়ার মতো সমস্যা দেখতে পারেন। টনসিলের লক্ষণ দেখার পর আপনার তাড়াতাড়ি কোন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তার ফলে আপনি এর প্রতিকার করতে পারবেন।