বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধ ক'রে সন্তানধারণের উপায়
যদিও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা প্রায় অসম্ভব হিসাবে প্রমাণিত হচ্ছে তবুও এটি সত্য যে যাদের সন্তান নেই তাদের জন্য সারা পৃথিবী বড় নিঃসঙ্গ। একজন বাবা বা বা মা হওয়া হল বিশ্বের সবচেয়ে আনন্দের অনুভূতি। তবে, গর্ভবতী হওয়া খুব সহজ হলেও এই ভাগ্য সবার হয় না। এমন অনেক দম্পতি রয়েছে যাদের দুর্বল বা কম শুক্রাণু গণনার কারণে সন্তানধারণ করতে সমস্যা হচ্ছে। অনেক সময় একজন মহিলার শরীর সন্তানধারণের মতো এত বড় দায়িত্বের জন্য প্রস্তুত থাকে না, আবার কখনও কখনও পুরুষ সঙ্গীর কিছু শারীরিক অসুবিধা থাকে। আর কিছু সময় এরকমও হয় যে নারী পুরুষ উভয়েরই সঙ্গমের ধরণে বা ঠিক সময়ে কিছু ভুল হয়ে যায় যাতে তাদের মনে হয় যে সবকিছু চেষ্টা করা সত্ত্বেও সন্তানধারণ করতে পারছেন না এবং এতে অদৃষ্টের ত্রুটি রয়েছে। কিন্তু ভাগ্যের হাতে সবকিছু ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃতির ওপরে আস্থা রাখার পাশাপাশি উভয় সঙ্গীকেই একসাথে কিছু করতে হবে।
প্রথমত, উভয় সঙ্গীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে নেওয়া উচিত যে কোনও অভ্যন্তরীণ ঘাটতি আছে কি না। গর্ভধারণ শুরু হলে ডিম্বাশয় থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে ডিম্বাণুটি গর্ভনালী থেকে জরায়ুর দিকে এগোতে শুরু করে। একটি ডিম্বাণু খুব বেশি হলে ২৪ ঘণ্টা জীবিত থাকে, কিন্তু একটি শুক্রাণু নারীদেহে ৫ দিন পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু একসঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য সক্রিয় থাকা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় সন্তানধারণ সম্ভব নয়। তাই এই কথাগুলি মাথায় রাখলে সন্তানধারণে সাহায্য করবে।- সঠিক সময়ে চেষ্টা করুন
কিছু মানুষ কাজের চাপ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত কারণে পর্যাপ্ত যৌনকর্ম সঞ্চালন করতে সক্ষম হন না। কিন্তু যদি আপনি সন্তানধারণ করতে চান এবং একবার যৌনসঙ্গম করেই কোনও সুবিধা না হয়, তাহলে উর্বর দিনগুলোতে(ফার্টিলাইজিং ডে) ফের যৌনসঙ্গম করলে তা কার্যকর হতে পারে। মহিলাদের মাসিকচক্রের সময়কাল ২৮ থেকে ৩০ দিনের হয়, যার মধ্যে ১৪তম দিনে তারা সবচেয়ে উর্বর অবস্থায় থাকে। অতএব, আপনার যৌন কার্যকলাপের জন্য ওই দিনের আশেপাশের সময় নির্বাচন করা উচিত। এই সময়ে, গর্ভধারণের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
-
যৌনসঙ্গমের ভঙ্গিমা
যৌনসঙ্গমের ভঙ্গিমা সন্তানধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। গর্ভবতী হওয়ার জন্যে সর্বোত্তম ভঙ্গিমায় যৌনসঙ্গম করা মানে শুক্রাণুগুলো সঙ্গিনীর গলদেশের একদম কাছাকাছি নির্গমন করা যাতে তা গর্ভস্থল অব্ধি পৌছয়। দম্পতিদের সন্তানধারণের জন্য দাঁড়িয়ে, বসে বা নারীদের পুরুষ সঙ্গীর ওপর বসার মত যৌন ভঙ্গিমা এড়িয়ে চলতে হবে কারণ এই অবস্থানগুলি শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুর একত্রিত হওয়া কঠিন করে তোলে। তাই গর্ভাবস্থার জন্য যৌনমিলনের সময়ে ভঙ্গিমা বা পজিশনের দিকে বিশেষ যত্ন নিন। সন্তানধারণের জন্য ‘ডগি স্টাইল’ অর্থাৎ পিছন থেকে সঙ্গম করার ভঙ্গিমা, ‘মিশনারি স্টাইল’ এবং বিভিন্ন যৌন ভঙ্গিমা যেমন স্পুন সেক্স, পাশাপাশি যৌনসঙ্গমের মত যৌন অবস্থান অভ্যাস এবং সঙ্গমের সময় নিতম্ব উচ্চতায় রাখুন।
-
ওজন ঠিক রাখুন
প্রায়ই, অত্যধিক ওজনের কারণে মহিলাদের সন্তানধারণে অসুবিধা হয়। অতএব, সন্তানধারণের জন্য পুরুষ ও নারী উভয়েরই স্বাস্থ্যকর হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অত্যন্ত স্থূল মহিলাদের প্রজননে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অর্থাৎ, সন্তানধারণ করবার চেষ্টা করার আগে, মহিলাদের ২ থেকে ৩ মাস ব্যায়াম করে ওজন কমানোর চেষ্টা করা উচিত।
-
রাসায়নিক থেকে দূরে থাকুন
বিভিন্ন কারখানা যেমন, কীটনাশকের কারখানা, বিভিন্ন পরীক্ষাগারের কাছাকাছি থাকলে মহিলাদের মধ্যে প্রজননের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হতে পারে। তাই যদি আপনি সন্তানধারণ করতে চান তাহলে এই ধরনের জায়গা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।
-
দুজনেরই অর্গ্যাজম হওয়া বেশি ভাল
গর্ভধারণের জন্য দুজনেরই অর্গ্যাজম হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটার সাথে যৌন অবস্থানের কোনও সম্পর্ক নেই কিন্তু যৌনসঙ্গমের সময় নারীদেরও পুরুষের সঙ্গে অর্গ্যাজম হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুজনেরই অর্গ্যাজম হলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, মহিলাদের অর্গাজমের সময় অঙ্গে এক ধরনের সংকোচন হয় যেটা শুক্রাণুকে গলদেশের দিকে ঠেলে দেয়।
-
সঙ্গমের পরের কথা
সবসময় এই কথাটা মনে রাখতে হবে যে শুক্রাণুটি গলদেশের দিকে গিয়ে ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হওয়ার পরিবর্তে যাতে কখনও শুক্রাণুগুলো যোনি থেকে বেরিয়ে না আসে। সঙ্গমের সময় নারীর নিতম্ব এমন অবস্থায় থাকা উচিত যাতে সঙ্গমের পরে শুক্রাণুগুলি মুক্তি পেয়ে ভেতরেই যায় এবং গলদেশে পৌঁছানোর জন্য প্রচুর সময় পায়। যৌনসঙ্গমের সময় কোনও গর্ভ-নিরোধক বড়ি অথবা তেল বা কোনও ধরনের জেলি ব্যবহার করবেন না। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে আপনি এই পরামর্শগুলো মেনে তো চলবেনই তবে মানসিক চাপ নেওয়ার পরিবর্তে সঙ্গম উপভোগ করা উচিত।