ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা
ডেঙ্গু একটি ভাইরাল রোগ। রোগটি মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং এর প্রথম উপসর্গ প্রবল কাঁপুনি দিয়ে জ্বর। এই রোগের সময় শরীরের প্লেটলেট সংখ্যা হ্রাস পায়। ডেঙ্গু এডিস নামক মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগ বর্ষাকালে প্রতি বছর ছড়িয়ে পড়ে এবং হাজার হাজার মানুষ এই রোগের শিকার হয়ে মারা যান।
ডাক্তাররা ব্যাখ্যা করেছেন যে শরীরের ১ মিলি লিটার রক্তে ৩০-৪০ হাজার প্লেটলেট থাকে সাধারণত। এই প্লেটলেট প্রতিদিন ধ্বংস হয় এবং তারা প্রতিদিন গঠিত হয়। ডেঙ্গু শরীরের কাজের গতিকে হ্রাস করে, যা প্লেটলেট তৈরির গতি কমিয়ে দেয়। এই ক্ষেত্রে, শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতার উপর সরাসরি প্রভাব পড়ে। ডেঙ্গু রোগের বাহক মশা (এডিস মশা) বেশিরভাগ দিনের বেলায় কামড়ায় এবং পরিষ্কার জলে ছড়িয়ে পড়ে বংশ বিস্তার করে। ড্রাম, ট্যাঙ্ক এবং গামলায় সংগৃহীত পানিতে এরা ডিম পাড়ে এবং মশার বংশ বিস্তারের মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে।
ডেঙ্গুর লক্ষণ--
এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ডেঙ্গুর ভাইরাস শরীরে পৌঁছায়। এই রোগের প্রধান উপসর্গ প্রবল জ্বর। এ ছাড়াও, মাথাব্যথা, শরীরের জোড় এবং মাংসপেশীর স্থানগুলিতে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয়। শরীরের উপর লাল লাল চাকা চাকা দাগ দৃশ্যমান হয়। এ ছাড়াও বার বার বমি, ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, দুর্বলতা এবং ক্ষুধার অভাব অনুভূত হওয়া ডেঙ্গুর অন্যতম উপসর্গ গুলির মধ্যে রয়েছে।
ডেঙ্গু থেকে নিরাময়ের জন্য--
- নিম, তুলসী, গুলঞ্চ, পিপুল, পেঁপে পাতার তাজা রস, গম থেকে প্রস্তুত বার্লি, আমলার রস এবং অ্যালোভেরা ব্যবহার ডেঙ্গুতে খুব উপকারী। এই সকল প্রকার রস শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং প্লেটলেটের সংখ্যাও একই সাথে বৃদ্ধি করে।
-
পেঁপে পাতা:
পেঁপে- এর তাজা পাতাগুলি ডেঙ্গুতে প্লেটলেটের সংখ্যা পুনরুদ্ধারের জন্য খুবই উপযোগী বলে মনে করা হয়। এই রস তৈরি করার জন্য, জল দিয়ে ভালো ভাবে কিছু পাতা ধুয়ে নিন এবং তাদের পিষ্ট করুন। মনে রাখবেন, পেঁপে পাতাগুলি কিন্ত তাজা হতে হবে। আক্রান্ত রোগীকে দিনে দুই থেকে তিন চামচ এই পাতার মিশ্রণ খাওয়ান। এটি দেহের বিষাক্ত বর্জ্য বাইরে বের করে দেয়। একই সাথে রক্তের প্লেটলেট সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
-
গুলঞ্চের শিকড়ের রস:
২৫ গ্রাম তাজা গুলঞ্চের শিকড় নিয়ে তাকে কেটে নিন, ৫-৬ টি তুলসী পাতা এবং ৩-৪ টি কালো মরিচ নিয়ে ১ লিটার জলের সাথে ফোটান। এটি ২৫০ মিলি গ্রাম না হওয়া পর্যন্ত ফোটান। এর পর এই মিশ্রণটিকে তিন ভাগে বিভক্ত করুন। ডেঙ্গু রোগ থাবা বসালে এই মিশ্রণ পান করুন, এটি ভাইরাল সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাবার জন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন।
-
তুলসী:
তুলসীর পাতা সব ধরণের সংক্রামক রোগের প্রতিকারে খুব উপকারী ভূমিকা নেয়। চা- এর মধ্যে তুলসীর পাতা দিয়ে নিয়মিত পান করলে সংক্রামক রোগ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়। ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে তুলসীর পাতাগুলি ফুটিয়ে নিন, এটি শরীরকে রোগ প্রতিরোধে শক্তি দেয়। দারুচিনি এবং মটরশুটির রস ডেঙ্গুর রোগীদের জন্য দারুন লাভজনক ও উপকারী। দারুচিনি রক্তের অভাব দূর করে।
-
অ্যালোভেরাঃ
অ্যালোভেরা- এর রস রোগ প্রতিরোধক শক্তি বাড়ায় এবং পাচন ক্ষমতার বৃদ্ধি করে। রোগীকে ডেঙ্গু হলে অ্যালোভেরার রস পান করান, এটি শরীরকে শক্তি দেয়।
-
আমলাঃ
আমলাতে ভিটামিন সি রয়েছে, এটি শরীরের প্রতিরক্ষা বাড়ায়। দেহে পৌঁছানোর মাধ্যমে এটি লোহার উপাদানকে আরো শোষণ করে, যা শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
এই সমস্ত ব্যবস্থা ডেঙ্গু- এর লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণের জন্য। ডেঙ্গু থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে অবশ্যই পরামর্শ করুন।
ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায়ঃ
ডেঙ্গুর মোকাবিলা করা বেশ মুশকিল। ভাইরাস সংক্রমণের পরে পরেই খুব দ্রুত প্লেটলেট সংখ্যা কমে যেতে থাকে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সময় পাওয়া যায় না। অতএব, এই রোগ থেকে রক্ষা পেতে গেলে প্রথমেই সতর্কতা অবলম্বন খুব জরুরী।
- খেয়াল রাখবেন ঘরের কোন জায়গায় যাতে জল না জমতে পারে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষ যত্ন নিন।
- কুলার ইত্যাদির মধ্যে থাকা জল নিয়মিত বদল করুন এবং তা পরিষ্কার রাখুন। যেখানে জল জমছে সেখানে কেরোসিন তেল ঢেলে দিন যাতে মশার প্রসব করা ডিম ফেটে মশার লার্ভা বেরোতে না পারে।
- গামলার মধ্যে জল জমা হতে দেবেন না। মাটি আর্দ্র রাখুন এবং বাকি জল ফেলে দিন।
- বাসনপত্র ধোবার জায়গাতেও জল জমা হতে দেবেন না। সম্ভব হলে, সমস্ত বাসনপত্র উল্টানো অবস্থায় রাখুন।
- বাড়িতে মশা মারার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। নিম পাতা জ্বালান, মশা প্রতিরোধক ক্রীম প্রয়োগ করুন এবং মশারী স্থাপন করে ঘুমান। শিশুদেরকে পুরো পোষাক পরিয়ে রাখুন এবং বিশেষ করে দিনের বেলায় মশা তাড়ানোর ব্যবস্থা করুন।
- মশা কর্পূরের ধোঁয়া থেকে পালিয়ে যায়। কর্পূর জ্বালিয়ে রাখুন এবং ঘরে ঐ ধোঁয়া প্রবেশ করতে দিন। বাড়িতে কারোর যদি ডেঙ্গু হয়ে থাকে, তবে বিশেষ রূপে সতর্ক হন।