কোলেস্টেরল কম করার উপায়
বর্তমানে,শরীরের কিছুসমস্যাচোরের মত হয়ে গেছে। যেমন রক্তচাপ, সুগার, থাইরয়েড, কোলেস্টেরল ইত্যাদি। এবং আজকের যুগে আমরা যে কোন সাধারণ মানুষের মধ্যে কোলেস্টেরলের বৃদ্ধি সমস্যা দেখতে পাওয়া যায়। কোলেস্টেরল হল যকৃত দ্বারা উৎপাদিত চর্বি। আমাদের শরীরের কাজের ক্ষেত্রে কোলেস্টেরল খুব গুরুত্বপূর্ণ। রক্তে লোয়ার কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া মানে এটা বিভিন্ন রোগের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। সুতরাং উচ্চ কোলেস্টেরল কমানোর উপায় জানতে হবে। এটা জানা জরুরি যে কোলেস্টেরল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভাল। সমস্যা তখনই উৎপন্ন হয় যখন এগুলি রক্ত কোষে জমতে শুরু করে। এই অবস্থায় রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয় যার ফলে হার্টকে বেশি পাম্প করতে হয় রক্তকে শরীরের অন্যান্য অংশে পৌঁছে দেবার জন্য।
কোলেস্টেরল দুই ধরনের হয়। কম ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন (এলডিএল) এবং উচ্চ ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন (এইচডিএল)।
শরীরে জন্য এলডিএল ক্ষতিকারক এবং এইচডিএল ভালো।
প্রধানত, কোলেস্টেরল শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে। রক্ত থেকে টক্সিন জাতীয় উপাদানগুলি শুষে নিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। মস্তিকের কাজকে সচল রাখার জন্যকোলেস্টেরলের মাত্রা সঠিক রাখা দরকার। সূর্যালোক থেকে শরীরে ভিটামিন তৈরি করার জন্য কোলেস্টেরল খুব সহায়ক। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ৩.৬ থেকে ৭.৮ মিলিমিটার প্রতি লিটারের রাখা উচিৎ। এই মাত্রাটা যখন ৬ মিলিমিটার হয়ে যায় তখন তাকে উচ্চ কোলেস্টেরল বলে। ৭.৮ মিলিমিটারের বেশি হয়ে গেলে তখন হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
উচ্চ কোলেস্টেরল হওয়ার কিছু নিদিষ্ট কারণ রয়েছে-
- ওজন বৃদ্ধি
- কঠোর পরিশ্রম না করা
- খাওয়ায় অবহেলা
- বংশগত
কোলেস্টেরল বৃদ্ধির ফলে যেগুলি হয়-
- উচ্চ রক্তচাপ
- দ্রুত ক্লান্তি
- ঘেমে যাওয়া
- রক্তচাপ বেশি হলে ডায়াবেটিস রোগীদের চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়া
কোলেস্টেরল কমানোর উপায়
- অ্যালোভেরা- প্রতিদিন খালি পেটে ৫০ গ্রাম অ্যালোভেরা খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
- ধনে- সারারাত ধরে জলে ধনেকে ভিজিয়ে রাখুন, সকালে উঠে তা পান করুন।
- অঙ্কুরিত শস্য- অঙ্কুরিত শস্য হৃদয়ের জন্য ভালো এটা বলা ভুল হবে না। প্রতিদিন অঙ্কুরিত শস্য গ্রহন করলে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে পারে। আপনি প্রতিদিন যেকোনো স্যুপ, সালাদ কিংবা সব্জির সাথে কমপক্ষে অর্ধেক কাপ রাজমা, মুং, সোয়া বিন কিংবা বিউলির ডাল নিতে পারেন।
- ওটস- এক স্বাস্থ্যকর দিনের শুরু করুন প্রাতঃরাশে ওটস খেয়ে। ৬ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন সকালে ওটস খেলে, এলডিএল ৫.৩% কমে।
- ওয়াইন- যারা ওয়াইন খেতে ভালবাসেন তারা এই শখটা বজায় রাখুন। কারণ সপ্তাহে দুদিন অল্প পরিমাণ ওয়াইনস খেলে আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে পারে।
- গ্রিন ট্রি- কফির তুলনায় গ্রিন ট্রির মধ্যে ক্যাফিনের পরিমাণ কম থাকে। এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি শরীরকে সুস্থ রাখে। প্রতিদিন গ্রিন ট্রি পান করলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়।
- মাছ- যারা মাছ খায় তাদের পক্ষে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো সহজ হয়। আসলে আমাদের শরীরে ফ্যাটি অ্যাসিড এবং এমিনো অ্যাসিডের প্রয়োজন থাকে। শরীরে শক্তির জোগান দেওয়া ছাড়াও ভিটামিন ডি, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যামিনো অ্যাসিড পাওয়া যায় মাছ এবং এগুলি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
- শুকনো ফল-আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, শুকনো ফল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে প্রচুর প্রোটিন ফাইবার এবং ভিটামিন-ই রয়েছে। এবং এগুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ কোলেস্টেরল কমানোর জন্য। সুতরাং আপনি প্রতিদিন শুকনো ফল খেতে পারবেন।
- স্থূলতা হ্রাস করুন: স্থূলতা কোলেস্টেরল বৃদ্ধির প্রধান কারণ। উচ্চ কোলেস্টেরলের ঝুঁকি বাড়লে ওজন বৃদ্ধি করবেন না। উচ্চ কোলেস্টেরল এবং স্থূলতা কারণে, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি রোগ শরীরে উৎপন্ন হয়।
- যোগব্যায়াম- যোগব্যায়াম করার জন্য ওজন বৃদ্ধির অপেক্ষা করবেন না। যোগব্যায়াম রক্তসঞ্চালনকে সঠিক রাখে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যে ব্যক্তি কোলেস্টেরলের সময় ভুগছেন তাদের সপ্তাহে পাঁচ দিন যোগব্যায়াম করা উচিৎ। জগিং, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো এবংঅ্যারোবিক্স করতে পারেন। আর কিছু না হলে রোজ অন্তত আধ ঘণ্টা হাঁটুন।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্য খান- কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য ফ্যাট জাতীয় খাবার খাবেন না। যেসব খাবার থেকে পুষ্টি পাওয়া যায় সেই সব খাবার খেতে পারেন। চেষ্টা করুন ডিমের হলুদ অংশ, তৈলাক্ত খাবার, চিস জাতীয় খাবার, ক্রিমযুক্ত দুধ এবং রেড মিট ইত্যাদি ত্যাগ করতে।
- অতিরিক্ত ওষুধ খাওয়া এড়িয়ে চলুনঃ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ খাবেন না। ঔষধের ওপর নির্ভর না থেকে চেষ্টা করুন নিজের জীবনধারা পরিবর্তন করতে। প্রতি ৬ মাস অন্তর কোলেস্টেরল পরীক্ষা করুন। এবং ২০ বছর এবং তার থেকে অধিক ব্যক্তিদের ৫ বছরে একবার পরীক্ষা করানো দরকার।