যোনি সংক্রমণের প্রতিকার-
রাস্তাঘাটে পথ চলার সময় যখন কোন মহিলা তার গুপ্তঅঙ্গে হাত দেয়, তখন সেই অবস্থায় তাঁর নিজের এবং রাস্তার লোকেদের উভয়ের ক্ষেত্রেই বিষয়টি অপ্সতুতির হয়ে দাঁড়ায়। এই রকম অবস্থা যদি নাও ঘটে, তাহলে ভাবুন আপনি কোন বাজারে, মিটিং’এ, অফিসে, পরিবারের সাথে কিংবা অন্য কোথাও কোন কাজে ব্যস্ত আছেন সেই সময় আপনার গুপ্তঅঙ্গে ভয়ানক চুলকানি হতে শুরু হল। তখন আপনি কোথাও শান্তিতে বসতে পারবেন না। চুলকানি হবার কারণে জ্বলন হবে যা আপনার বিরক্তির সীমা অতিক্রম করবে। যদি সময়ের সাথে আপনি এর কোন চিকিৎসা না করেন তাহলে এই সমস্যা আরও বাড়তে থাকবে। এই সমস্যাকে আমরা ভাজাইনাল ইনফেকশন বা যোনি সংক্রমণ বলে থাকি। এই সংক্রমণ যে কোন মহিলার যে কোন সময় হতে পারে।
যোনি সংক্রমণ কোন ভয়ানক রোগ নয় কিন্তু মহিলাদের ক্ষেত্রে এটা খুব বিরক্তিকর। ইস্ট এবং ফাঙ্গাস প্রাথমিক ভাবেই আমাদের যোনিতে উপস্থিত থাকে, কিন্তু যখন এদের সংখ্যা অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পায় তখনই যোনিতে সংক্রমণ সৃষ্টি হয়। এই ফাঙ্গাসকে ক্যানডিডা অ্যালবিকান্স বলে যেটি যোনিতে সংক্রমণ সৃষ্টি করে। সুস্থ যোনিতে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেশি হয় এবং ইস্ট কোষের পরিমাণ কম হয়, এবং এই ব্যাকটেরিয়া গুলিকে লেক্টোব্যাকিলাস অ্যাসিডোফিলাস বলে যা যোনিতে ইস্টের মাত্রা কমিয়ে দেয়। কখনও কখনও অ্যান্টিবায়োটিক খেলেও এই জীবাণু গুলির সংখ্যা বৃদ্ধি পায় যার ফলে সংক্রমণ ঘটে। অন্যান্য কারণ যার জন্য যোনিতে সংক্রমণ ঘটে সেগুলি হল গর্ভবস্থায় এস্ট্রোজেনের মাত্রার পরিবর্তন, হরমোনের পরিবর্তন, ডায়বেটিক্স, এইডস ইত্যাদি।
যোনি সংক্রমণের লক্ষণ-
- যোনিতে চুলকানি হওয়া
- মূত্র বা সেক্স করার সময় যোনিতে জ্বলন অনুভব হওয়া
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে প্রায় ৯০ শতাংশ মহিলা যোনি সংক্রমণে ভুগতভুগি। এর জন্য আমাদের জীবনধারন পদ্ধতি, খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি দায়ী থাকে। যদিও এমনটা নয় যে এই সংক্রমণ মৃত্যু ডেকে আনতে পারে কিংবা কোন ব্যক্তির এটি হলে তার সময় ফাইলিংয়ের মাধ্যমে কাটবে। সমস্যা যখন আছে তখন সেটা থেকে কিভাবে বাঁচা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। তাহলে জানা যাক যোনি সংক্রমণ থেকে বাঁচার কিছু সহজ উপায়।
- নিয়মিত প্যাড পরিবর্তন করুন।
স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ট্যাম্পন বেশিক্ষণ ধরে ভ্যাজাইনাতে রেখে দিলে ভ্যাজাইনা নমনীয় হতে থাকে। এর জন্য আপনার যোনি সংক্রমণ হতে পারে। তাই ঋতুস্রাবের সময় ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে প্যাড বা ট্যাম্পন পরিবর্তন করতে থাকুন।
- সুগন্ধি কোন যোনির দ্রব্য ব্যবহার করবেন না।
গন্ধ যুক্ত স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ট্যাম্পন ব্যবহার করা বন্ধ করে দিন। কারণ এর গন্ধের জন্য যোনিরব্যাকটেরিয়া গুলি ভারসাম্যহীন হতে পরতে পারে যার ফলে যোনিতে সংক্রমণ হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই কারণে চিকিৎসকেরাও গন্ধ যুক্ত স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ট্যাম্পন ব্যবহার করতে বারণ করে।
- প্রতিদিন দই খান
- গরম জলে স্নান করবেন না
- চিন্তা মুক্ত থাকুন
- প্রয়োজনের থেকে বেশি যোনি পরিস্কার করবেন না
- অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ গ্রহণ করুন
- তুলো বা সুতোর তৈরি প্যাড এবং প্যান্টি ব্যবহার করুন
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান
দই হল এমন এক খাদ্য যার মধ্যে শুধু ভাল ব্যাকটেরিয়ার রয়েছে, যা আপনাকে যোনিতে সংক্রমণ হওয়া থেকে রক্ষা করে। ভাল ব্যাকটেরিয়া গুলি যোনিকে সংক্রমিত হওয়া থেকে রক্ষা করে। তাই প্রতিদিন এক কাপ করে দই খান, এতে আপনার শরীর সুস্থও থাকবে এবং যোনি সংক্রমণের সমস্যাও কমে যাবে।
আর্দ্র এবং গরম অবস্থায় যোনিতে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আপনার যোনিতে তাপের পরিমাণ বেশি থাকলে সংক্রমণের সমস্যা হতে পারে। তাই এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আপনি ঠাণ্ডা জল দিয়ে স্নান করুন। যদি আপনি গরম জল ব্যবহার করেন তাহলে স্নানের পর সবসময় আলগা বা ঢিলা জামাকাপড় ব্যবহার করুন।
যে কোন ধরণের সংক্রমণ বা রোগের সবচেয়ে বড় কারণ হল চিন্তিত থাকা। এই জন্য যতটা সম্ভব চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। যখন শরীরকে সম্পূর্ণ আরাম দেওয়া হয় না তখন শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে, যার ফলে আপনি অসুস্থ হয় পড়েন। তাই শরীরকে সম্পূর্ণ আরাম দেওয়ার জন্য কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা নিন্দ্রা বা আরাম করুন।
যোনিকে সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য মূলত যোনিকে পরিস্কার রাখা দরকার। কিন্তু যে কোন সাবান দিয়ে যোনিকে পরিষ্কার করবেন না। কারণ শরীরের যোনি অংশ খুব সেনসিটিভ হয় তাই প্রয়োজন মত সাবান বা বিশেষ কোন তরল সাবান ব্যবহার করুন।
বেশির ভাগ মানুষ ব্যাকটেরিয়াকে শেষ করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক শরীরের মধ্যে থাকা ভাল ব্যাকটেরিয়াকেও শেষ করে দেয়। তাই যতটা সম্ভব অ্যান্টিবায়োটিক কম ব্যবহার করুন।
সুতির প্যান্টির বৈশিষ্ট্য হল এটি ভ্যাজাইনার আর্দ্রতাকে নিয়ন্ত্রন করে এবং যোনির মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঔষধ প্রেরণেও সক্ষম হয়। অন্যদিকে লিক্রা বা নাইলনের কাপড় প্যান্টি হিসাবে ব্যবহার করে সেখানে ঘামের সৃষ্টি হয় যা যোনিতে সংক্রমণ ঘটাতে সাহায্য করে। তাই সব সময় চেষ্টা করুন সুতির প্যান্টি ব্যবহার করার। তাছাড়া যতটা সম্ভব সুতির কাপড় ব্যবহার করুন এতে আপনি আরামদায়ক থাকবেন এবং যোনি সংক্রমণ থেকেও সুরক্ষিত থাকবেন।
- আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব থাকলে, আমাদের শরীর জীবাণু এবং অ্যান্টিবডি থেকে রক্ষা করতে পারে না। তাই নিউট্রিশন যুক্ত খাবার খান।
- আরাম পাওয়ার জন্য কর্পূর ও নারকেল তেল ব্যবহার করুন।
- এই সব পদ্ধতি গুলি অবলম্বন করেও যদি আপনি উপকার না পান তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।