ডায়রিয়ার সমাধান

পাতলা পায়খানা হওয়া কিংবা পেট ছাড়াকেই ডায়রিয়া বলা হয়। এই সমস্যাও অন্যান্য সমস্যার মত অনিয়মিত খাওয়ার জন্য হয়। এই রোগে পায়খানা খুব পাতলা হয়। আপনাকে বার বার শৌচালয় যেতে হতে পারে। এর সঙ্গে পেট ব্যথা হয়।

এর সাথে শরীর জলশূন্য অর্থাৎ ডিহাইড্রেট হতে থাকে। কারণ বার বার শৌচ যাওয়ার ফলে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় জল এবং খনিজ পদার্থ অর্থাৎ লবণ বেরিয়ে যায়। এই স্বাভাবিক মনে হওয়া রোগে যদি আপনি ক্রমাগত জল না খান তাহলে ডিহাইড্রেশনের জন্য আপনার মৃত্যু অব্ধি হতে পারে। কারণ ডিহাইড্রেশনের ফলে শরীরে জল এবং লবনের মাত্রা কম হতে থাকে। এই জন্য ডায়রিয়ার নিম্নলিখিত লক্ষণ গুলির ওপর নির্ভর করে আপনি যদি দু-তিন দিনের মধ্যে সুস্থ না হন তাহল দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

ডায়রিয়ার লক্ষণ

<ঘন ঘন পায়খানা পাওয়া মাঝে মাঝে পায়খানার সাথে রক্ত বের হওয়া পেটে ব্যথা •জ্বর সঙ্গে শীত অনুভব হওয়া •স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তেষ্টা পাওয়া •পেটে ব্যাঘাত অনুভব করা •হঠাৎ পেটেরনীচের অংশে খুব গুরুতর ব্যথা অনুভব করা ডায়রিয়ার কারণে কী হতে পারে? ১. ডায়রিয়া হবার প্রধান কারণ হল পাচনতন্ত্রে প্রয়জনের থেকে বেশি তরল জমা হওয়া। তবে অনেক সময় পাচনতন্ত্রের দ্বারা তরল পদার্থ ঠিক ভাবে অপসারিত না হলে কিংবা পাচনতন্ত্রের দ্বারা মল খুব দ্রুত পরিমাণে বের হলে ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দেয়। ২. কখনও কখনও ডায়রিয়া জীবাণু দ্বারা সংকমণের জন্যও হতে পারে।সংক্রামিত ব্যাকটেরিয়া বা বিষাক্ত ইত্যাদি সংক্রমণ হতে পারে। কখনও কখনকোন রকম চিন্তা বা ভয়ের কারণেও ডায়রিয়া হতে পারে। এই ধরণের ডাইরিয়াকে মূলত ক্ষণিক বা দীর্ঘস্থায়ী ডাইরিয়া বলে। ৩. ডায়রিয়া বা পাতলা মল হবার অন্যান্য কারণ গুলি হল নানান ধরণের অ্যান্টিবায়োটিক, পেটের রোগ, খাদ্য সংক্রমণ, এলার্জি, অ্যালকোহল খাওয়া, মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া ইত্যাদি। এর চিকিৎসা কি? ১. লেবু লেবুর সাহায্যে ORS এর জলবানিয়ে আপনি বাড়িতে খেতে পারেন। এর জন্য আপনি এক গ্লাস জলে লেবু এবং স্বাদ মত নুন-চিনি মিশিয়ে খান। এতে আপনার পেট পরিস্কার হয়ে যাবে এবং আপনি পাতলা মল থেকে রেহাই পেতে পারেন। ২.কাঁচা পেঁপে কাঁচা পেঁপেকে কুঁচি কুঁচি করে কেটে তাতে তিন থেকে চার কাপ জল মিশিয়ে প্রায় 10 মিনিটের জন্য ফোঁটান। এরপর সেই জলটা দিনে তিন থেকে চার বার পান করুন। এতে আপনি পাতলা পায়খানা থেকেরেহাই পাবেন তার সাথে পেটের যন্ত্রণা থেকেও আরাম পাবেন। ৩. সাবুদানা সাবুদানা পেটের পাচনতন্ত্রকে শক্তি প্রদান করে। সাবুদানাকে তিন-চার ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রেখে সেই জলটা দিনে পাঁচ বার খেলে আপনি এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারেন। ৪. সরিষা বীজ সরিষা বীজকে কয়েক ঘন্টার জন্য জলে রাখুন এবং সেই জলটা পান করুন। এই পদ্ধতি পাতলা পায়খানা বন্ধ করার একটি আদর্শ উপায়। ৫. দুধ দুধকে একটি স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসাবে গণ্য করা হয়। কিন্তু এটি হজম করা কঠিন। তাই পাতলা পায়খানা হবার সময় দুধ খাবেন না। ৬. বেদানা বা ডালিম ডালিমের দানাগুলি চিবিয়ে খেলে পাতলা মল বন্ধ হতে পারে। আপনার যদি ডালিমের দানা খাওয়ায় পছন্দ না হয় তাহলে আপনি এটির রস করে পান করতে পারেন। ৭.লাউএর রস ডাইরিয়াতে শরীর থেকে জল কমে যাওয়ার ভয় সবচেয়ে বেশি থাকে। আপনি যদি শরীর থেকে জলের পরিমাণ না কমাতে চান তাহলে লাউএর রস খেতে পারেন। সামান্য পরিমাণ গোলমরিচ এবং লবণ দিয়ে আপনি এই রসকে আপনি সুস্বাদু বানাতে পারেন। ৮. মেথি ডায়রিয়ার প্রধান কারণ হল জীবাণু। মেথি জীবাণুকে নাশ করতে সাহায্য করে। এই কারণে এক বা দুটি চামচ মেথিগুঁড়া এক গ্লাস জলে মিশিয়ে পান করুন। এতে ডায়রিয়া থেকে আপনি রেহাই পেতে পারেন। ৯. স্টার্চ‌ জাতীয় খাবার স্টার্চ‌ খাদ্যকে হজম হতে সাহায্য করে। তাই ডায়রিয়া হলে স্টার্চ‌জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এর জন্য আপনি চাল, সেদ্ধ আলু বা গাজর খেতে পারেন। ১০. শুকনো আদা শুকনো আদা বা আদার গুঁড়া আমাদের পাচন শক্তিকে শক্তিশালী করে তোলে। এক কাপ ঘোলে আধা চা চামচ আদার গুঁড়া মিশিয়ে খেলে পেট ব্যথা এবং পাতলা পায়খানা দুটো থেকে আপনি রেহাই পেতে পারেন। ১১. চা পাতা আপনি হয়তো বিশ্বাস করবেন না কিন্তু এতা সত্যি যে এক চামচ চা পাতা বেটে খেলে আপনি সঙ্গে সঙ্গে আরাম পাবেন। যদি কোন ছোট বাচ্ছাকে এটি দিতে হয় তাহলে চা পাতার সাথে জল মিশিয়ে দিতে পারেন।