সর্দির প্রতিকার
আমাদের মধ্যে অনেক মানুষের শরীর খুব সংবেদনশীল হয়। একটু ঠাণ্ডা লাগলেই বা বেশিক্ষন জলে থাকলে শরীরে সর্দির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। কিছু মানুষের নাক বন্ধ হয়ে যায়, কারোর নাক থেকে জল বেরোয় আর কিছু জনের সর্দি বাড়তে থাকলে শরীরে ব্যথা এবং জ্বরও হয়।
বাস্তবিক ক্ষেত্রে সর্দি এক প্রকারেরই হয় যেটা বিভিন্ন প্রকারের ভাইরাসের কারণে ঘটে।
সর্দির লক্ষণ
- মাথা ব্যথা
- নাক দিয়ে জল পড়া
- কাশি
- জ্বর
- চোখ জ্বালা
- গলা খুসখুস
- শরীরে ব্যথা
এছাড়াও সর্দির অনেক লক্ষণ আছে:
সর্দি হবার ফলে শারীরিক সমস্যা বেড়ে যায়। যদি সর্দি-কাশির চিকিৎসা তখনই শুরু করা যায় যখন এর লক্ষণগুলি দেখা যায় তাহলে তাতে শরীরে অন্য রোগ বাসা বাঁধতে পারে না। যদিও এটা কোন ভয়ানক রোগ নয় কিন্তু দেখা গেছে এই রোগে কোন ঔষধ বেশি কাজ করে না। এর জন্য সব থেকে ভাল হয় ঘরোয়া উপায়ের ব্যবহার। কারণ ঔষধের কাজ অনেক দেরিতে শুরু হয় এবং তার সাথে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় যার জন্য শরীরে আরও অন্যান্য রোগ দেখা দেয়। তাই এর জন্য ঘরোয়া প্রতিকারই ভাল উপায়। আর এই ঘরোয়া উপায় গুলি কোন রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই সর্দির বিভিন্ন লক্ষণ থেকে ছুটি দেয়। তাহলে আসুন আমরা এই রকম কিছু ঘরোয়া প্রতিকারের সম্বন্ধে জানি যেগুলি সহজেই সর্দি থেকে শরীরকে আরাম দেয়।
- দুধ এবং হলুদ
হলুদের মধ্যে অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিব্যাকট্রেরিয়াল উপাদান থাকে যেটা সর্দি কাশির সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে। এই জন্য গরম জলে কিংবা গরম দুধে এক চামচ হলুদ মিশিয়ে পান করলে দ্রুত সর্দি কাশি থেকে আরাম পাওয়া যায়। এই উপায় শুধু বাচ্ছাদের জন্য নয় বরং বড়রাও এই উপায় ব্যবহার করতে পারে।
-
আদা দিয়ে চা
আদা দিয়ে চা খেলে সর্দি-কাশিতে খুব আরাম দেয়।সর্দি-কাশি কিংবা যেকোন রকম সংক্রমন হলে আদাকে টুকরো টুকরো করে কাটুন এবং তাতে গরম জল বা দুধ মেশান। মিশ্রণটিকে কিছুক্ষন ফুটিয়ে নিন পান করুন। এই ঘরোয়া প্রতিকার আপনাকে সর্দি-কাশি থেকে রেহাই পেতে সাহায্য করবে।
-
লেবু এবং মধু
লেবু এবং মধু ব্যবহার করলে সর্দি-কাশি থেকে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। দু চামচ মধু এবং এক চামচ লেবুর রস এক গ্লাস কুসুমকুসুম গরম জলে বা দুধে মিশিয়ে খেলে লাভ পাওয়া যায়।
-
রসুন
রসুন সর্দি-কাশির সাথে লড়াই করার জন্য খুব উপযোগী। রসুনের মধ্যে এলিসিন নামক এক রাসায়নিক পদার্থ থাকে যেটা অ্যান্টিভাইরাস, অ্যান্টিব্যাকট্রেরিয়াল এবং অ্যান্টি ফ্যাঙ্গাল। রসুনের পাঁচটি খোয়াকে ঘিতে ভেজে খান। এই রকম এক থেকে দুবার করলেই সর্দি-কাশি থেকে আরাম পাওয়া যায়। সর্দি-কাশির সংক্রমণকে রসুন খুব তাড়াতাড়ি দূর করে দেয়।
-
তুলসী পাতা এবং আদা
তুলসী এবং আদা সর্দি-কাশির জন্য খুব উপকারী মানা হয়। এগুলি খেলে সর্দি-কাশি থেকে দ্রুত রেহাই পাওয়া যায়। এক কাপ গরম জলে তুলসীর পাঁচ-সাতটা পাতা নিন। তাতে এক টুকরো আদা দিয়ে দিন। কিছুক্ষন সময় ওটাকে ফুটিয়ে নিন এবং ঔষধ বানিয়ে নিন। যখন জলটা অর্ধেক হয়ে যাবে তখন আপনি সেটা ধীরে ধীরে খেতে থাকুন। এই প্রতিকার বাচ্ছাদের সাথে বড়দেরও সর্দি-কাশি থেকে আরাম দিতে সাহায্য করে।
-
ঘি এবং গোলমরিচের সাথে তুলসী পাতা
এই তিন উপাদানের মিশ্রণ এক ধরণের আয়ুর্বেদিক ঔষধ যেটা সামান্য সর্দিকে দূর করার জন্য খুব কার্যকারী। তুলসী পাতার মধ্যে অ্যান্টি ব্যাকট্রেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা শ্বাসনালীকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে যার ফলে নাকের নোংরা এবং সংক্রমণ কম হয়। তাই যখন সর্দি হবে তখন ৫ থেকে ৬টি তুলসী পাতাকে একত্রে জলে ধুয়ে নিন। এরপর এগুলিকে বেটে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার যদি সম্ভব হয় তাহলে শুদ্ধ ঘি দিয়ে তুলসী পাতার পেস্টটার সাথে মিশিয়ে নিন। ১-২টো গোলমরিচ গুঁড়ো করে মিশ্রণটির সাথে মিশিয়ে দিন। এই মিশ্রণকে আপনি ক্যাপসুলের আকারেও বানিয়ে নিতে পারেন। এগুলির জলের সাথে গ্রহণ করতে পারেন। দ্রুত আরাম পাওয়ার জন্য এই ক্যাপসুলগুলিকে দিনে কমপক্ষে ৩বার করে খান। নাক দিয়ে বায়ু গ্রহণ এবং ত্যাগ করার প্রক্রিয়াকে সচল রাখার জন্য আপনি তুলসী পাতা চেবানোর অভ্যাস শুরু করতে পারেন।
-
লাল পিয়াজের সিরাপ
২-৩ লাল পিয়াজকে গোল গোল টুকরো করে কেটে নিন। একটা পাত্রে পিয়াজের টুকরো গুলিকে রাখুন এবং তাতে মধু মিশিয়ে দিন। যতক্ষণ না পর্যন্ত পাত্রটা ভরে যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়াকে চালিয়ে যান। ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা অব্ধি পাত্রটিকে ঢেকে রেখে দিন। এরপর পিয়াজের সিরাপের একটি স্তর জমে যাবে। ঘরে তৈরি এই পিয়াজের সিরাপ সর্দি-কাশি থেকে আপনাকে আরাম দেবে।
-
চিকেন স্যুপ
চিকেন স্যুপে এমন অনেক গুন রয়েছে যা সর্দি কাশির লক্ষণ থেকে আরাম পেতে সাহায্য করে। চিকেন স্যুপে অত্যাধিক পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সাইডের গুন রয়েছে যা সর্দি-কাশিকে ঠিক করার প্রক্রিয়ায় দ্রুততা আনে। সর্বউত্তম পরিনামের জন্য, জৈবিক সবজি এবং চিকেনের ব্যবহার করে ঘরে চিকেন স্যুপ তৈরি করুন। তারপর দেখুন সর্দিতে কিভাবে চিকেন স্যুপ কাজ করে।