ডায়াবেটিস ডায়েট চার্টঃ
ভারতে ডায়াবেটিস রোগীদের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। প্রতি পাঁচজন ভারতীয় মধ্যে দুজন ভারতীয় এর ডায়াবেটিস জনিত সমস্যা দেখা যায়। দেখতে গেলে ডায়াবেটিস কোন ভয়ানক অসুখ নয় বরঞ্চ ইহা হওয়ার পর শরীরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন রোগের আগমনের কারণ হয়ে দাঁড়ায় যা শরীরের আলাদা আলাদা অঙ্গের ক্ষতি করে। যেমন আমি সাধারণতই দেখি যে সুগার রোগীর চোখ বা কিডনির জনিত রোগ হতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যতটা গুরুত্ব ওষুধ এবং ব্যায়ামের আছে ঠিক ততটাই গুরুত্ব খাবার বা ডায়েট এর। ইহা মনে করা হয় যে ডায়াবেটিসের রোগীর পক্ষে প্রতিদিনের রুটিন জীবন পালন করা সম্ভব নয় সেই জন্য ওনাদের একদম কঠোর ডায়েট পালন করা উচিত।
আপনাকে জানাই যে ডায়াবেটিস রোগের কারণ হলো ইনসুলিন নামক হরমোনের ক্ষরণ। ইহা হওয়ার অন্য কারণস্বরূপ অত্যাধিক চাপ, ওজন বা বয়স বৃদ্ধি এর সাথে সাথেই জিনগত কারণও ধরা যায়। এটা একটি এমন রোগ যাতে নিয়মমাফিক খাওয়ারই আপনাকে সুরক্ষিত রাখে। যদি আপনারই নিয়মমাফিক খাবারে আপনি কোন ত্রুটি করে ফেলেন অথবা একটি আবশ্যক দিনাচার এর অনুসরণ না করেন তাহলে আপনার সেই অনুপাতের আরো সমস্যা সহ্য করতে হতে পারে। এরূপ অবস্থায় আপনার এক আদর্শ ডায়েট চার্ট এর অনুসরণ করা আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়।
ডায়েট চার্ট
চিনির অসুখ এমন যে এটি একবার আপনার হয়ে গেলে তার সারা জীবন আপনার সাথেই থেকে যায়। আপনি খুব বেশি সংযম বাড়িয়ে ইহাকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারেন। আর এর জন্য আপনার একটি নিশ্চিত দিনাচার্য এর অনুসরণ এবং পুষ্টিযুক্ত আহারের সেবন করা আবশ্যক । স্থূলতা বৃদ্ধি, অত্যধিক চাপ, অস্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া এবং ব্যায়াম না করার জন্য আপনাকে ডায়াবেটিস এর শিকার হতে হয়।এই কারণে যদি আপনি এটির মোকাবিলা করতে চান তাহলে আপনাকে ইহা নিয়মিত করতে হবে। এটি না করার কারণে অসুখের দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হচ্ছে। যে সমস্ত রোগের রক্ত শর্করা আছে তাদের জন্য সুষম এবং নিয়মিত আহার অত্যন্ত জরুরী। এছাড়াও আপনি অনুকূল ডায়েট চার্ট অনুসরণ করে নিজের ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রিত করার সাথে সাথেই ইনসুলিনের ডোজ এর পরিমাণ কম করতে পারেন।
যদি আপনি রোগের শিকার হন তাহলে আপনার প্রতিদিনের খাবারের মোট ক্যালরির মধ্যে ৪০% কার্বোহাইড্রেট, ৪০% ফ্যাট এবং ২০% প্রোটিন থাকা প্রয়োজন। স্থূল ব্যক্তিদের জন্য মোট ক্যালরির ৬০% কার্বোহাইড্রেট, ২০% ফ্যাট এবং ২০% প্রোটিন থাকা প্রয়োজন।
আসুন আমরা জেনে নি ডায়াবেটিস রোগীদের আদর্শ ডায়েট চার্ট কি রকম হওয়া উচিত এবং এর সাথে কিছু বিশেষ নির্দেশাবলী কিভাবে কোন নির্দিষ্ট অবস্থায় ডায়াবেটিসকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে তা নির্দেশ করে।
- সকাল ৬ টা- এক গ্লাস জলে অর্ধেক চা চামচ মেথির গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন।
- সকাল ৭ টা- এক কাপ চিনি ছাড়া চা, সাথে ১-২ হালকা মিষ্টি যুক্ত বিস্কুট খেতে পারেন।
- প্রাতঃরাশ/ব্রেকফাস্ট-এর সাথে আপনি অর্ধেক বাটি অঙ্কুরিত সবজি এবং এক গ্লাস ক্রিম ছাড়া দুধ নিতে পারেন।
- সকাল ১০ টার পর-একটি ছোট ফল অথবা লেবুর জল।
- দুপুর ১ টা অর্থাৎ লাঞ্চ-মিক্স বাটার দুটো রুটি, এক বাটি ভাত, এক বাটি ডাল, এক বাটি দই, অর্ধেক বাটি সোয়াবিন বা পনিরের তরকারি, আর্থিক বাটি সবুজ সবজির সাথে এক প্লেট স্যালাড।
- বিকেল ৪ টে-চিনি ছাড়া বা সুগার ফ্রি এর সাথে এক কাপ চা অথবা চিনি ছাড়া বিস্কুট বা টোস্ট অথবা আপেল।
- সন্ধ্যে ৬ টায়-এক কাপ সুপ পান করুন।
- ডিনার-দুটো রুটি, এক বাটি ভাত (সপ্তাহে দুবার ব্রাউন রাইস) এবং এক বাটি ডাল, অর্ধেক মাটি সবুজ সবজি এবং এক প্লেট স্যালাড।
- ক্রিম আর চিনি ছাড়া এক গ্লাস দুধ পান করুন, এর ফলে রাতে হঠাৎ সুগার কম হওয়ার বিপদ থাকে না।
- একটি বিশেষ নির্দেশিকা এই যে ডায়াবেটিসের রোগীদের উপোস করা থেকে বিরত থাকা উচিত। এছাড়া খাবারের মাঝে লম্বা বিরত থাকা উচিত নয় এবং রাতে ডিনারে হালকা খাবার খাওয়া উচিত। এছাড়াও নিয়মিত ভাবে যোগ সাধন এবং ব্যায়াম করলে রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রিত থাকে।
- এক বা আধ চামচ পুষে রাখা মেথি দানা খাবার খাওয়ার ১৫-২০ মিনিট আগে নিলে সুগার নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং এতে আরো কিছু অঙ্গের উপকার হয়।
- রুটির আটা কে না ছুঁয়ে বের করুন আর পারলে এর গুণগত মান বাড়াতে সোয়াবিন যোগ করুন।
- দিনে ঘি আর তেলের কম ব্যবহার করুন।
- সকল প্রকার সবজিতে কম তেল প্রয়োগ করে নন স্টিক কুকারে রান্না করুন, যত বেশি সম্ভব সবুজ পাতা যুক্ত সবজি খান।
- সুগার রোগীদের খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে দ্রুততার সাথে হাটা উচিত এবং সাথে সাথেই ব্যায়াম আর যোগ সাধন করুন। সঠিক সময়ে ইনসুলিন অথবা ওষুধ নিন। নিয়মিতভাবে চিকিৎসক এর কাছে চিকিৎসা করান।
- এর সাথে সুগার রোগীদের সঠিক মাত্রায় উচ্চ গুণ সম্পন্ন প্রোটিন নেওয়া উচিত। ইহার জন্য দুধ,দই,পনির,ডিম,মাছ, সয়াবিন এর সেবন বেশি পরিমাণে করা উচিত। ইনসুলিন নেওয়া ডায়াবেটিক ব্যক্তি এবং ওষুধ সেবন করা ডায়াবেটিক ব্যক্তির সঠিক সময় খাবার খাওয়া উচিত। এরূপ না করলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।এর কারণ দুর্বলতা, অতিরিক্ত খিদে পাওয়া, ঘাম হওয়া, চোখ দিয়ে ক্ষীন অথবা জোড়ায় দেখা, হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া, ঝটকা আসা এবং গম্ভীর স্থিতিতে কোমাতে যাওয়ার বিপত্তিরও সম্মুখীন করতে হতে পারে।
- ডায়াবেটিক রোগীর সব সময় নিজের সাথে কোনও মিষ্টি জিনিস যেমন গ্লুকোজ, চিনি, চকলেট, মিষ্টি বিস্কুট রাখা উচিত। যদি হাইপোগ্লাইসেমিয়া এর লক্ষণ দেখা গেলে তৎক্ষণাৎ এইগুলো সেবন করা উচিত। এক সাধারন ডায়াবেটিক রোগীর এটি খেয়াল রাখা উচিত যে উনি যেন কিছু সময় ব্যবধানে খেতে থাকেন। দুই অথবা আড়াই ঘন্টা অন্তর কিছু খান। একইসময় প্রচুর খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- ডায়াবেটিক রোগীদের নিয়মিতভাবে ডবল টোন্ড দুধই ব্যবহার করা উচিত। এর সাথে এটাও খেয়াল রাখুন যে আপনার খাদ্য পদার্থে ক্যালরির মাত্রা যেন কম থাকে। এর জন্য খোসা সমেত রান্না করা ছোলা, গম অথবা অঙ্কুরিত শস্য, সুপ এবং স্যালাড ইত্যাদি পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করুন। বলা হয় যে দই এর ব্যবহারে গ্লুকোজের পরিমাণ কম থাকে।