কোষ্ঠকাঠিন্যর চিকিৎসা
পৃথিবীতে নানান ধরণের মানুষ দেখতে পাওয়া যায়, যারা ওপর থেকে তো হাসিখুশি থাকে কিন্তু শরীরের ভিতরের সমস্যা সম্পর্কে শুধু তারাই জানে। একটা পুরনো বচন আছে, যে ব্যক্তির পেট পরিষ্কার এবং যার ওপর কোন ঋণ থাকে না তার থেকে বেশি সুখী কেউ হয় না। পাউডার, ক্রীম, লিপিসটীক ইত্যাদি দিয়ে মুখকে সুন্দর করা যায় কিন্তু শরীরকে তরতাজা করা যায় না। শরীর তরতাজা অনুভব করা খুব আনন্দের বিষয়। শরীরের ভিতর হওয়া নানান সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাধারণ সমস্যা হল কোষ্ঠকাঠিন্য। তাহলে আসুন আজকে আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে কথা বলবো যা শরীরকে তরতাজা অনুভব করার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য পাচন তন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত একটি সমস্যা যেটা যেকোনো বয়সের মানুষের মধ্যে দেখা যায়। তবে এই রোগের বৈশিষ্ট্য হল যে, রোগী নিয়মিত রুটিন এবং কিছু ঘরোয়া প্রতিকার গ্রহণ করে এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। শৌচালয়ে অনেকক্ষন বসে থাকার পর মল বের হয়। যেখানে সাধারণ মানুষ দিনে একবার মল ত্যাগ করে, সেখানে কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগীরা অনেক দিন পর্যন্ত মল ত্যাগ করতে পারেন না। সহজ ভাষায় কোষ্ঠকাঠিন্য কথার অর্থ হল, ঠিক ভাবে পেট পরিস্কার না হওয়া এবং শরীরে তরল পদার্থের মাত্রা কম হওয়া।
কোষ্ঠকাঠিন্য কি
কোষ্ঠকাঠিন্যয় পীড়িত ব্যক্তির পেট ঠিক ভাবে পরিস্কার হয় না, কোষ্ঠকাঠিন্যর কারণ- নিম্নমুখী অন্ত্রে তরল পদার্থ শোষণে অনেক সময় লাগে যার ফলে সেখানে শুষ্ক এবং কঠোর মল একত্রিত হতে শুরু করে, যার ফলে ওই ব্যক্তির মল ত্যাগ করতে সমস্যা হয়। রোগীর পায়খানা পরিস্কার হয় না, মল শুকনো এবং কম মাত্রায় বেরোয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য হবার কারণ
- নির্দিষ্ট সময়ে খাবার না খাওয়ার অভ্যেস
- তৈলাক্ত মশালাদার খাবার খাওয়া
- ক্রমাগত পেনক্রিরালস বা নার্ভের ঔষধ গ্রহণ করা
- হরমোনের সমস্যা বা থাইরয়েড বা মধুমেহ রোগ থাকার ফলে
- আগের খাবার হজম হওয়ার আগে আবার খাবার খাওয়া
- কম জল খাওয়া এবং খাবারকে সঠিক ভাবে চিবিয়ে না খাওয়া
- মানসিক চিন্তা, উদ্বেগ, রাগ বা বিষাদ অবস্থায় খাবার খাওয়া
- খাদ্যে ফাইবারের অভাব
- বেশি পরিমাণে চা, কফি, তামাক, সিগারেট সেবন করা
- ব্যায়াম না করা, আরামদায়ক জীবন কাটানো
- খাবার খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে ফ্রিজের ঠাণ্ডা জল খাওয়া
- রাতে দেরি করে খাবার খাওয়া, খাবার শেষ করেই শুয়ে পড়া
কারণের পর আসুন জানা যাক কোষ্ঠকাঠিন্যর লক্ষণ এবং তার প্রতিকার
- শক্ত এবং শুকনো মল হওয়া
- সপ্তাহে ৩ বারের কম মল ত্যাগ করা
- মল ত্যাগ করার সময় ব্যথা অনুভব করা
- মল ত্যাগ করার সময় বেশি গতি প্রয়োগ
- মল ত্যাগের পরও কিছু বাকি আছে এরকম মনে হওয়া
- পেট কামড়ে ধরা
- পেটে ব্যথা হওয়া
- মাথা ব্যথা
- পেটে গ্যাস হওয়া
- বদহজম
- পাইলসের সমস্যা হওয়া, যা মল ত্যাগ করার সময় বেশি গতি প্রয়োগ করলে হয়
- বমি বমি ভাব এবং খিদের অভাব
- পায়ে ব্যথা
- বমি হওয়া
- মাথা ঘোরা
- মুখ থেকে গন্ধ বেরোনো
- দুর্বলতা
- পেট ভারি হয়ে যাওয়া
- রক্তচাপ বৃদ্ধি
- ত্বকে ফুসকুড়ি হওয়া
- অম্লতা হওয়া
- মুখে ঘা হওয়া
- বিষণ্ণতা
এখন আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে কিভাবে রেহাই পাবো তা জানব।
- প্রচুর জল পান করুন
কম জল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যায় মল অন্ত্রেই শুকিয়ে যায়, কিন্তু মল ত্যাগ করার সময় বেশি গতি প্রয়োগ করতে হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগীদের প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হব। ৪ লিটার জল এক দিনে পান করার অভ্যেস করতে হবে। খাবার খাওয়ার সময় জল খাবেন না এবং এর জায়গায় আপনি খাবার খাওয়ার আধঘণ্টা আগে জল খেতে পারেন।
-
পেঁপে পেয়ারা খান
আপনাকে অবশ্যই পেঁপে এবং পেয়ারা খাওয়া শুরু করতে হবে । দুটোরইগুণ আমাদের পেটের জন্য উপকারী।
-
কপার
একটি তামার পাত্রে জল ভরে তাতে ১ চামচ ত্রিফলা গুঁড়ো মেশান এবং সারারাত রাখুন । সকালে খালি পেটে এই জলটা ছেঁকে পান করুন। এই প্রতিকারটিকে নিয়মিত ব্যবহার করলে অনেক পুরনো কোষ্ঠকাঠিন্যও সেরে যাবে।
-
বাদাম
কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যার জন্য বাদামের তেল খুব উপকারী। এটি পেটের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রাতে শোয়ার আগে হাল্কা গরম দুধে ১ চামচ বাদামের তেল দিয়ে পান করুন। ১৫ দিনে ক্রমাগত এটি উপায়টি ব্যবহার করলে পুরোনো কোষ্ঠকাঠিন্যও ঠিক হয়ে যায়।
-
লেবুর জল
এক কাপ হালকা গরম জলে ১টা লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে পেটে জমা হওয়া সব মল বেড়িয়ে যেতে সাহায্য করে।
-
গরম দুধ
রাতে গরম দুধ খেয়ে শুন। যদি মল পেটে আটকে যায় তাহলে দুধ মলকে বাইরে বার করে দিতে সাহায্য করে।
-
ফাইবার জাতীয় খাবার
ফাইবার জাতীয় খাবার খাওয়া দরকার। সবুজ শাকসবজি, ফল এবং স্যালাদে ফাইবার থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা থেকে ছুটি পাওয়ার জন্য পালং এর রস ও খেতে পারেন।
-
কিশমিশ
১২ টা কিশমিশ দুধে ফুটিয়ে পান করুন। সকাল হলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য সেরে যাবে।
-
কমলা লেবু
৮-১০ দিন সকালে খালি পেটে কমলা লেবুর রস পান করলে পুরনো কোষ্ঠকাঠিন্যও ঠিক হয়ে যাবে । তবে হ্যাঁ, কমলা লেবুর রসে কিছু মেশাবেন না।
-
ইসবগুল এর ভুসি
১০ গ্রাম ইসবগুলের ভুসির মধ্যে ১২৫ গ্রাম দই মিশিয়ে প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ঠিক হয়ে যাবে ।
-
ব্যায়াম
পেট সম্পর্কিত যে কোন ব্যায়াম নিয়মিত করলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে । পেট এবং শরীরের অন্যান্য সমস্যা থেকেও রেহাই পাবেন।