টেস্ট টিউব বেবি কিভাবে হয়
আজকের যুগে প্রযুক্তি এমন মাত্রায় বেড়ে গিয়েছে যে আমরা প্রায় প্রতিটি অসম্ভব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছি । এই সব প্রযুক্তির আশীর্বাদ যে সূর্য, চন্দ্রের মতো রহস্যময় বিষয় গুলি সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি । আমরা পরমাণু বোমা তৈরি করা থেকে মঙ্গল গ্রহে যাত্রা করতে পেরেছি।প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমরা এত উন্নতি করেছি যেটা কিছুদিন আগে অব্ধি ভাগ্যের ব্যাপার ছিল এবং ভগবানের ওপর নির্ভর ছিল। আজ থেকে কিছু বছর আগে অব্ধি বাবা-মা হওয়া বা না হওয়া পুরোটাই স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর ছিল। কিন্তু বর্তমানে শরীর সাথ না দিলে কিংবা অন্য কারণে বাবা মা না হওয়াটা কোন সমস্যা নয়। কারণ আমাদের কাছে স্টেট টিউব বেবি নামক প্রযুক্তি রয়েছে যার মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব। এটি ফ্যাটিলাইজেশন (IVF) বাস্টেট টিউব বেবি নামে পরিচিত।
যে দম্পতি গর্ভধারণে অক্ষম তারা স্টেট টিউব বেবির সাহায্য নিয়ে সন্তান উৎপাদনে সক্ষম হয়। স্টেট টিউব বেবির সম্পর্কে জানার আগে জানতে হবে গর্ভধারন না করতে পারার কারণ।
বন্ধ্যাত্ব
এই সমস্যা পুরুষদের মধ্যে দেখা যায়। এর অর্থ হল পুরুষদের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্পাম থাকে না যার ফলে গর্ভধারণে সমস্যা হয়।
অনিয়মিত ডিম্বস্ফোটন।
এই সমস্যা হল মহিলাদের মধ্যে পর্যাপ্ত ডিম উৎপাদিত হচ্ছে না কিংবা এই প্রক্রিয়ায় কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যেসব মহিলাদের মধ্যে থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে, তাদের ডিম্বস্ফোটন প্রক্রিয়া বাধা প্রাপ্ত হয় যার ফলে তাদের গর্ভধারণে সমস্যা হয়।
ফ্যালিপিয়ান টিউব এবং ডিম্বাশয়
গর্ভধারণ করতে না পারার সমস্যাতেও ডিম্বাশয় এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।
বেশি বয়স
নারী ও পুরুষের বয়সও গর্ভধারণ না করতে পারার প্রধান কারণ হতে পারে । যদি কোন দম্পতি গর্ভধারণ করতে না পারে, তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাদের জন্য কিছু পদ্ধতি পাওয়া যায়,যার মধ্যে টেস্ট টিউব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ।
সাধারণত একটি প্রাকৃতিক গর্ভধারণের প্রক্রিয়ায় পুরুষের শুক্রাণু নারীর ডিম্বাণুর ডিমের ভেতরে ঢুকে যায় এবং ফ্যাটিলাইজ করে । ডিম্বস্ফোটন পরে, ডিম্বাশয় থেকে বেড়িয়ে মহিলার ইউটারিয়াসে যায় এবং আস্তে আস্তে একটি মানুষের রূপ নেয়। যেসব মহিলারা স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণ করতে পারে না,তাদের কাছে আইভিএফ এক আশীর্বাদ।
I V F দ্বারা গর্ভধারণের প্রক্রিয়া
প্রথম ধাপ-ঋতুস্রাব প্রতিরোধ
মাসিকের সময় গর্ভধারণ করা যাবে না বলে অন্তত ২ সপ্তাহ ধরে ইঞ্জেকশনের দ্বারা ওষুধ দিয়ে এই ঋতুস্রাব প্রতিরোধ করা হয় ।
দ্বিতীয় ধাপ- ডিম্বস্ফোটন
দ্বিতীয় ধাপে ওভারি যেখানে ডিম্বস্ফোটনের সময় ডিম তৈরি করে তখন একটি ফার্টিলিটি ঔষধ দেওয়া হয় । যার মধ্যে ফার্টিলিটি হরমোন থাকে যাতে ডিম্বাশয় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উৎপাদন করে ।
তৃতীয় ধাপ- ডিম গুলিকে বাইরে বের করা
ফার্টিলিটি হরমোনের জন্য ওভারিতে তৈরি হওয়া ডিমগুলিকে একটা ছোট শল্যচিকিৎসার দ্বারা বাইরে বার করা হয়। শল্যচিকিৎসায় একটা ছোট পাতলা সূচ মহিলার যোনি পথ দিয়ে ওভারিতে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে সূচের সামনে লেগে থাকা সকশন পাম্প ডিমগুলিকে টেনে বাইরে বার করে।
চতুর্থ ধাপ: ইনসেমিনেশন ও ফার্টিলাইজেশন
চতুর্থ ধাপে বাইরে বের করা ডিমগুলিকে পুরুষের শুক্রাণুর সঙ্গে রাখা হয়। কিছু সময় পরে শুক্রাণু ডিমের ভিতরে যেতে শুরু করে । অনেক সময় ডিমের ভিতরে শুক্রাণুকে ইনজেকশন দিয়ে ঢোকানো হয় । এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ইনসেমিনেশন। শুক্রাণু ডিমের ভিতরে চলে গেলে তখন সেটা ফ্যাটিলাইজ হতে শুরু করে । ডিমগুলি যখন পুরোপুরি ফ্যাটিলাইজ হয়ে যায়, তখন এগুলি এম্রাইয়ো রূপ ধারণ করে নেয়। এই প্রক্রিয়াটি মহিলার ডিম্বাশয় থেকে নিষ্কাশিত সব ডিমগুলির সঙ্গেই ঘটে।
পঞ্চম ধাপ- এম্ব্রায়ো ভিতরে ঢোকানো
পঞ্চম ধাপে এম্ব্রায়ো গুলির পরীক্ষা করে তাদের মধ্যে সেরাটা বাছাই করে নেওয়া হয়। ডাক্তার এবং দম্পতি আলোচনা করে ঠিক করে যে কোন এম্ব্রায়োকে মহিলার গর্ভে ঢোকানো হবে। তৈরি হওয়া এম্ব্রায়ো গুলির মধ্যে যদি কোনটাই মজবুত না হয় তাহলে মহিলার গর্ভে একাধিক এম্ব্রায়ো ঢোকানো হয়। এই গঠন হওয়া এম্ব্রায়ো বা ভ্রূণকে একটা পাতলা টিউবের দ্বারা যোনিপথ দিয়ে মহিলার ইউটারিয়াসে পাঠানো হয় এবং ধীরে ধীরে সেটি মানুষের রুপ ধারন করে।এই সব পদক্ষেপের কয়েক দিন পরেই জন্ম নেয় একটি টেস্ট টিউব বেবি । বিশ্বে এখন পর্যন্ত ৫০ লক্ষ টেস্ট টিউব বেবি জন্ম নিয়েছে এবং লুসি ব্রাউন নামক একটি শিশু বিশ্বের প্রথম টেস্ট-টিউব বেবি।
সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য এই প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হলে খুব খরচ হয়, তাই সমস্ত প্রক্রিয়ায় অসফল হলে তবেই এই প্রক্রিয়ার সাহায্য নিন।