জানুন স্পন্ডিলাইসিস সম্বন্ধে
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেক রোগ আছে যা সহজে আমাদের পিছন ছাড়ে না। তার মধ্যে অন্যতম হল স্পন্ডেলাইসিস। স্পন্ডিলাইসিসকে স্পন্ডিলাইটিস ও বলা হয়ে থাকে। স্পন্ডিলাইসিস কথাটি গ্রীক শব্দ স্পন্ডিল এবং ‘লাইসিস’ থেকে এসেছে। স্পন্ডিল কথাটির অর্থ ভার্টিব্রা এবং লাইসিস কথাটির অর্থ জ্বলন বা ব্যথা। ভার্টিব্রা অর্থাৎ শিরদাঁড়ার হাড়ে ব্যথা হওয়াকে স্পন্ডিলাইসিস বলে। এর ফলে ঘাড়ে ব্যথা হয় এবং ঘাড়কে ওপর নিচু করতে সমস্যা হয়। স্পন্ডিলাইসিসের সমস্যা মূলত স্পাইনাল অর্থাৎ শিরদাঁড়ার হাড়ে হয়। স্পাইনাল কর্ডের অস্বাভাবিক বর্ধিতকরণ এবং ভারটিব্রার মধ্যবর্তী জায়গায় ক্যালসিয়ামের অভাবের কারণে সেই স্থান থেকে হাড় সংকুচিত হয়।
সাধারণত ৪০ বছর বয়সের মহিলা এবং পুরুষদের মধ্যে এই রোগ দেখা যায়। তবে বর্তমানে জীবনধারার পরিবর্তনের ফলে কম বয়সেই মানুষ এই রোগের শিকার হচ্ছে। বিশেজ্ঞরা মনে করেন, এই রোগের মূল কারণ হল ভুল অবস্থায় বসা যা মাংশপেশির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এছাড়াও শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাবও থাকার জন্য এই রোগ হতে পারে। এক দশক আগের সমীক্ষার সাথে তুলনা করলে বোঝা যাবে বর্তমানে এই রোগের আক্রান্ত রুগীর সংখ্যা তিন গুন বেড়ে গেছে। যেসব যুবসম্প্রদায়ের মানুষ যারা আইটি সেক্টর, বিপিও ধরণের কাজ করেন বা যারা অনেক সময় ধরে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকেন, তাদের মধ্যে এই রোগ বেশি লক্ষ্য করা যায়। আনুমানিক ১০ জন ব্যক্তির মধ্যে প্রায় সাত জন ব্যক্তি ঘাড়, পিঠ বা অন্যান্য অঙ্গের ব্যথায় জর্জরিত।
স্পন্ডিলাইসিস প্রকার-
- সার্ভিকাল স্পন্ডিলাইসিস
ঘাড়ের ব্যথা যা সার্ভিকালকে প্রভাবিত করে তাকে সার্ভিকাল স্পন্ডিলাইসিস বলা হয়ে থাকে। এই ব্যথা ঘাড় থেকে শুরু করে কাঁধে, কলার বনে এবং কাঁধ সংলগ্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে ঘাড় ঘোরাতে সমস্যা হয় এবং দুর্বল মাংশপেশির কারণে নড়াচড়া করতে সমস্যা হয়।
- লাম্বার স্পন্ডিলাইসিস
এই স্পন্ডিলাইসিসে কোমরের শিরদাঁড়ার নিচের অংশে থেকে ব্যথা হয়।
- অ্যাঙ্কাইলুজিং স্পন্ডিলাইসিস
এই স্পন্ডিলাইসিস জয়েন্ট সংলগ্ন এলাকায় ব্যথা হয়। কাঁধ এবং কাঁধ সংলগ্ন এলাকায় এই ব্যথা হয়। এই স্পন্ডিলাইসিসের ফলে স্পাইনাল, হাঁটু, গোড়ালি, কাঁধ এবং ঘাড় শক্ত হয়ে যায়।
- স্পন্ডিলাইসিসের লক্ষণ
- কাঁধ এবং ঘাড়ে ব্যথা হওয়া এবং তা শক্ত হয়ে যাওয়া।
- যদি আপনার স্পাইনাল কর্ড চেপে যায় তবে ব্লাডার বা বোলের উপর নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটতে পারে।
- এই রোগ হাতের আঙ্গুল থেকে শুরু করে মাথা অবধি হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে হাতের হাতের আঙ্গুল গুলি অবশ হয়ে যেতে পারে।
- কাঁধ এবং কোমরের নিচের অংশ থেকে শুরু করে, পায়ের ওপরের অংশে দুর্বলতা দেখা দেয় এবং ওই অংশ গুলি শক্ত হয়ে যায়।
- কখনও কখনও বুকে ব্যথা হয় এবং মাংশপেশিতে সমস্যা দেখা দেয়।
- স্পন্ডিলাইসিসের ব্যথা ঘাড়, কাঁধ থেকে শুরু করে মাথা, হাতের নিচে অংশ এবং পিঠের ওপরের অংশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
- হাঁচি, কাশি এবং অন্যান্য ঘাড়ের সমস্যাও এই রোগের লক্ষণ হতে পারে।
- শারীরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হওয়া এবং সময়ের সাথে এই ব্যথা বাড়তে থাকা এই রোগের লক্ষণ।
- স্পন্ডিলাইসিসের ব্যথা শুধু জয়েন্ট অংশ অব্ধি সীমিত থাকে না। সমস্যা গভীর হলে জ্বর হওয়া, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, বমি হওয়া, খিদে না পাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
স্পন্ডিলাইসিস হওয়ার কারণ
- খাদ্যের পুষ্টির অভাব, ক্যালসিয়াম, ভিটামিনের অভাব হওয়ার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে যেটা স্পন্ডিলাইসিস হবার অন্যতম কারণ।
- ভুল পদ্ধতিতে দাঁড়িয়ে থাকালে বা বসলে আপনি স্পন্ডিলাইসিস সমস্যার শিকার হতে পারেন।
- বয়স বাড়াও স্পন্ডিলাইসিস একটি কারণ।
- মশালাদার, ঠাণ্ডা এবং বাসি খাবার খেলে স্পন্ডিলাইসিস হতে পারে।
- অলসতার সাথে জীবন কাটালে ভবিষ্যতে স্পন্ডিলাইসিস সমস্যা হতে পারে।
- মহিলাদের মধ্যে অনিয়মিত ঋতুস্রাবও স্পন্ডিলাইসিস হওয়ার একটি কারণ।
- বয়স বাড়ার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে যা স্পন্ডিলাইসিস একটি কারণ।
স্পন্ডিলাইসিস থেকে বাঁচার উপায়
- সামুদ্রিক লবণ
সামুদ্রিক লবণে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে যা শরীরের হাড়ে শক্তভাবকে কম করতে সাহায্য করে। অর্ধেক গ্লাস জলে দু চামচ সামুদ্রিক লবণ মিশিয়ে নিন। এরপর স্পন্ডিলাইসিস প্রভাবিত এলাকায় তা প্রতিদিন লাগান। কিংবা স্নানের জল সামুদ্রিক লবণ মিশিয়ে প্রতিদিন স্নান করুন তাহলে আপনি স্পন্ডিলাইসিস ব্যথা থেকে আরাম পেতে পারেন।
- রসুন
প্রতিদিন খালি পেটে জলের সাথে দু'কোয়া করে রসুন খান কিংবা তেলের সাথে রসুনকে গরম করে নিয়ে ঘাড়ে মালিশ করুন এতে আপনি আরাম পেটে পারেন। আসলে রসুনের মধ্যে ব্যথা কম করার গুণ রয়েছে।
- হলুদ
হলুদ ব্যথা কম করার জন্য আদর্শ ওষুধ। শুধু তাই নয় হলুদ মাংশপেশির সমস্যাকেও ঠিক করে দেয়। আপনি এক গ্লাস গরম দুধে হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে আপনার ব্যথা কমে যাবে।
- তিলের বীজ
তিলকে তেলে গরম করে নিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত মালিশ করুন, এরপর সেই অংশে গরম কাপড় চাপা দিয়ে রাখুন।তিলে প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ভিটামিন পাওয়া যায় যা শরীরের হাড় এবং মাংশপেশির জন্য উপকারী। স্পন্ডিলাইসিস ব্যথার জন্য তিল খুব উপকারী।
- পুষ্টিযুক্ত খাবার খান, বিশেষ করে ক্যালসিয়াম বেশি আছে এমন খাবার খাওয়ায় উচিৎ।
- কম পরিমাণে চা এবং কফি খান।
- হেঁটে চলার চেষ্টা করুন।
- নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করুন।
- সবসময় আরামদায়ক বিছানায় শোয়ার চেষ্টা করুন। তবে এই ব্যাপারে খেয়াল রাখুন যে বিছানা না শক্ত না হয় বরং নরম হয়।
- স্পন্ডিলাইসিস পীড়িত ব্যক্তি ঘাড়ের নিচে এবং পায়ের নিচে বালিশ রাখার অভ্যেস ত্যাগ করুন।
আরাম পাওয়ার অন্য উপায়-