ঋতুস্রাব দ্রুত আনার ঘরোয়া উপায়
ঋতুস্রাবকে তাড়াতাড়ি আনার উপায় জানার আগে এর প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব জেনে রাখা ভাল। এমন অনেক বিষয় রয়েছে যার সময় নিশ্চিত হওয়া সত্বেও আমরা তা সময়ের আগে করতে চাই। এই রকমটা আমরা তখনই করি যখন এই কাজের প্রভাব অন্য কাজের ওপর পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ধরে নিন, আপনাকে কোন অনুষ্ঠানে যেতে হবে, কিংবা এমন কোন কাজ করতে হবে যেটার জন্য আপনাকে শারীরিক ভাবে সক্রিয় থাকতে হবে। এই ধরণের কাজে ঋতুস্রাব বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এই জন্য কিছু উপায় জানার প্রয়োজন হয়। এই উপায় গুলি ব্যবহার করে আমরা যখন দরকার পড়বে সেই সময় অনুযায়ী চলতে পারব। ঋতুস্রাবের সাথে জরিত পিসিওডি নামক রোগ, একটি সাধারণ সমস্যা যেটা মহিলা এবং কিশোরীদের মধ্যে খুব সাধারণ ঘটনা হয়ে গিয়েছে। এক সময় এই রোগ শুধু কেবল ৩০-৩৫ বছরের মহিলাদের মধ্যে দেখা যেত, কিন্তু এখন এটা স্কুলে পড়া মেয়েদের মধ্যেও দেখা যায়। একটা কথা মনে রাখবেন, যে সব কিশোরী বা মহিলাদের মধ্যে ঋতুস্রাবের সমস্যা থাকে, তাদের মধ্যে পলিসিষ্ট ওভারি সিন্ডোম (পিসিওএস) এর সমস্যা খুব সাধারণ। এই নিবন্ধে আমরা ঋতুস্রাবকে সময়ের আগে আনার এবং পিসিওডি’র প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব।
ঋতুস্রাব দেরিতে হওয়ার কারণ
যদি ঋতুস্রাব সঠিক সময়ের মধ্যে না হয় তাহলে এটি নানান সমস্যার দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। যেখানে ঋতুস্রাব সময়ে না হওয়ার নানান কারণ থাকতে পারে। এই কারণ গুলি হল চিন্তা করা, ওজন কমা বা বাড়া, পিসিওডির সমস্যা এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে ঔষধ নেওয়া হয় সেটার জন্যও মাসিক হতে দেরি হতে পারে। পলিসিষ্ট ওভারি সিন্ডোম ঋতুস্রাব দেরিতে হওয়ার মূল কারণ। এটি এমন এক অবস্থা যেখানে মহিলাদের শরীরের মধ্যে এনড্রোজেন হরমোন বাড়তে শুরু করে। যার ফলে ওভারিতে সিস্টের জন্ম হয়। এর ফলে ডিম্বস্ফোটনের প্রক্রিয়ায় দেরি হয়। যার জন্য মাসিক হতেও দেরি হয়। এইজন্য চিকিৎসকরা জন্ম নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য ওষুধ নিতে বারণ করেন যাতে ঋতুস্রাব নিয়মিত হয়। এই ধরণের ঔষধের নানান পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। এই জন্য ঋতুস্রাবকে তাড়াতাড়ি আনার জন্য বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় রয়েছে, যা ব্যবহার করে ঋতুস্রাবকে তাড়াতাড়ি আনা সম্ভব।
ভিটামিন সি এর ব্যবহার
ভিটামিন সি, আমাদের শরীরের বিভিন্ন প্রকারের রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, উদাহরণস্বরূপ এটি স্নায়ুতে বিভিন্ন বার্তা প্রেরণ করে এবং এর সাথে এটি শক্তি প্রবাহে ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয়, এটি মাসিক হওয়ার শীঘ্রতাকে সুনিশ্চিত করে। এটি লেবু, টমেটো, কমলালেবু, ব্রোকলি, কিবি ফল এবং পার্সলে ইত্যাদিতে খুব সহজে পাওয়া যায়।
গরম জলে সেঁক নিলে
এটি খুব সাধারণ একটি উপায় যেটি সবার ঘরে সহজেই পাওয়া যায়। এই উপায়টি ব্যবহার করা জন্য যে কোন প্যাকেট বা বোতলে গরম জল নিয়ে প্রত্যেকদিন ১০-১৫ মিনিট পর্যন্ত সেঁক দিন। এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে আপনার মাসিক শীঘ্র শুরু হবার সম্ভাবনা থাকে।
যৌন মিলন ঋতুস্রাবে শীঘ্রতা আনতে পারে
এটি পড়ে আপনি আশ্চর্য হতে পারেন কিন্তু এটা সত্যি। আসলে যখনই আপনি সহবাস করেন তখন আপনার শরীরে নানান ধরণের হরমোনের উৎপত্তি হয়। এই হরমোন গুলির মধ্যে কিছু হরমোন ঋতুস্রাবকে দ্রুত হতে সাহায্য করে। কিন্তু এই পদ্ধতি শুধুমাত্র বিবাহিত মহিলাদের জন্য।
আদা দিয়ে চা
আপনি যদি ঋতুস্রাবকে সময়ের আগে আনতে চান তাহলে প্রত্যেক দিন দু কাপ করে আদা দিয়ে চা পান করতে পারেন। স্বাভাবিক ভাবেই এটা খুব সহজ এবং সুলভ উপায়। কিন্তু অনেকের চা খেতে ভাল লাগে না, তারা প্রতিদিন সকালে আদা দিয়ে গুড় খেতে পারেন।
পেঁপের সাহায্যে
পেঁপে এমন একটিফল যার মধ্যে স্বাদের সাথে ভরপুর ভিটামিনও পাওয়া যায়। অন্যান্য পুষ্টির সাথে এর মধ্যে ক্যারোটিন পাওয়া যায় যা মহিলাদের ঋতুস্রাবে শীঘ্রতা আনতে সাহায্য করে। আসলে পেঁপে খেলে ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন প্রসারিত হয়ে যায়।
চিন্তা মুক্ত থাকুন
চিন্তা থেকে দূরে থাকলে রোগ মুক্ত থাকা যায়। চিন্তা থেকে দূরে থাকলে আমরা অনেক সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারি। আপনি এটা আশ্চর্য হবেন যে চিন্তাগ্রস্থ থাকলে শরীরে নানান হরমোনের উৎপত্তি হয় না। আপনি যদি চিন্তামুক্ত থাকেন তাহলে সহজেই হরমোন প্রসারিত হয়ে যায়। যার ফলে ঋতুস্রাব সঠিক সময় হয়ে যায়।
কিছু মশলা যা সাহায্য করে
- মশলার মধ্যে ধনের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটিকে আপনি ঋতুস্রাব তাড়াতাড়ি আনার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। দু কাপ জলে এক ছোট চামচ ধনের বীজ দিয়ে ফুটিয়ে নিন, জল অর্ধেক হয়ে গেলে সেটিকে ছেঁকে দিনে তিন বার করে পান করুন।
- জলে মেথি বীজ দিয়ে ফুটিয়ে নিন এবং সেটিকে ছেঁকে পান করুন।
- দিনে দুবার করে গরম জলের সাথে তিলের বীজ নিলেও ঋতুস্রাব দ্রুত হবার সম্ভাবনা থাকে।
- রাতে শোবার আগে এক গ্লাস জলে ছোট চামচের দু চামচ মৌরি ভিজিয়ে রেখে দিন, এবং পরদিন সকালে উঠে তা পান করুন।