ফুসফুসে জল জমার কারণ
আমাদের শরীরে অনেক রকম রোগ হয়ে থাকে, এর মধ্যে কিছু রোগ তো সহজে ঠিক হয়ে যায় কিন্তু কিছু আমাদের অনেক ক্ষতি করে, ফুসফুসে জল জমাও একটি গুরুতর অসুখ এর লক্ষণ, বুকের ভেতরে উপস্থিত থাকা ফুসফুসের চারদিকে জল জমা কে আমরা ডাক্তারি ভাষায় 'প্লুরাল ইফ্যুজন' অথবা 'হাইড্রোথোএক্স' বলে থাকি। কিন্তু যখন জলের বদলে রক্ত জমা হয় তখন আমরা তাকে 'হিমোথোএক্স'বলি। আবার অনেক সময় লিম্ফ নামক তরল পদার্থ জমা হয়ে যায় তখন একে 'কাইলোথোএক্স' বলা হয়। আপনাকে জানিয়ে রাখি যে ফুসফুসের উপরের পৃষ্ঠের জল শোষণ করার ক্ষমতা থাকে। এই কারণে জল চুইয়ে পড়া এবং শোখানোর মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় থাকে। কিন্তু কখনও কখনও ফুসফুসের উপরিভাগ থেকে জলের চুইয়ে পড়া অনেক বেড়ে যায় তখন এই সূক্ষ ভারসাম্য বজায় থাকে না। এইজন্য ফুসফুসের চারদিকে বুকের ভেতরে জল বা তরল পদার্থ একত্রিত হতে শুরু করে, আমাদের ফুসফুসে জল ভরার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো টিবি-র ইনফেকশন। যদি সময় থাকতে টিবির ইনফেকশন যুক্ত হলুদ জল কে জমা হওয়া থেকে না আটকানো যায় তাহলে ফুসফুস নষ্ট হওয়ার সাথে সাথেই গুরুতর পরিণাম ভুগতে হতে পারে। আসুন আমরা ফুসফুসে জল জমার কারণ গুলো দেখে নিই।
- নিউমোনিয়া ঘটিত কারণ
নিউমোনিয়া একটি এমন রোগ যে এই রোগ হলে রোগীর শ্বাস নিতে সমস্যা হতে থাকে। এর ফলস্বরূপও বুকে জল একত্রিত হওয়া শুরু হতে পারে। এই কারণে একত্রিত হওয়া জল দ্রুত পুঁজে পরিবর্তিত হয়ে যায়। যেটা খুবই গুরুতর সমস্যা।
-
ক্যানসারের কারণে
আমাদের দেশে ফুসফুসে জল ভরার মূল কারণ হিসাবে ক্যান্সারকে ধরা যায়। বুকে ক্যানসারের জন্য জলের জমা হওয়াতে তিন ধরনের ক্যান্সার -ফুসফুস, ব্রেস্ট ক্যান্সার এবং গলিত টনসিলের ক্যানসার হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই ক্যানসারও একটি গুরুতর অসুখ।
-
টিউমারও হতে পারে
অনেক রোগীদের মধ্যে টিউমারের কারণে তাদের ফুসফুসে জল জমা জনিত সমস্যা দেখা গেছে। কিছু রোগীদের ক্ষেত্রে বুকের ভেতরে দেওয়ালে হওয়া টিউমার অর্থাৎ মেসোথেলিয়মা এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। টিউমারের সমস্যাকে ঠিক করে প্রতিকার করা খুবই জরুরি না হলে এটি মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
-
অন্য কারণও হতে পারে
এই সকল কারণ ছাড়াও অন্য কারণেও ফুসফুসে জল ভরার সমস্যা দেখা যেতে পারে। এইসব ছাড়াও অন্য কোনো কারণে বুকে জল জমা হয়ে থাকে যেমন যকৃতের অসুখ অর্থাৎ লিভার সিরোসিস, পেটে জল অর্থাৎ অনেক, অথবা হৃৎপিণ্ড এর অসুখ।
-
ফুসফুসে জল ভরার লক্ষণ
যখন আপনার ফুসফুসে জল ভরতে থাকে তখন এর লক্ষণ স্বরূপ জ্বর যেটা ঘামের সাথে প্রত্যেকদিন সন্ধ্যেবেলায় গুরুতর হয়ে যায়, ওজন হ্রাস, শ্বাস ফুলে যাওয়া অথবা শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে ব্যথা হওয়া, শ্লেষ্মা আশা, শরীরকে ঝাঁকালে বুকে গড় গড় আওয়াজ হওয়া অথবা বুক ভারী হয়ে গেছে এমন অনুভব হয়।
কী করা উচিত
ফুসফুসে একত্রিত জলকে অযথা অবহেলা করা ক্ষতিকারক, সময় অতিক্রান্ত হতে হতে জলের চারপাশে ঝিল্লি সৃষ্টি হয়ে যায়, এই ঝিল্লি প্রথমত জলকে শুকাতে অন্যদিকে নিকট অবস্থিত ফুসফুসের অংশকে চাপ দেয় যাতে ফুসফুসের কার্যপ্রণালীতে বাধা সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো পুঁজে পরিবর্তিত হয়ে যায়। ক্যানসারের রোগীদের ক্ষেত্রে বুক থেকে একবার জল বের করে দেওয়ার পরেও বারবার জল জমা হয়ে যায়। ইহার জন্য 'প্লুরোডেসিস' নামক পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়, যাতে বুকের ভেতরে এক বিশেষ ওষুধ ঢালা হয় যা বুকের ভেতরে থাকা দুটো দেওয়াল কে জুড়তে সাহায্য করে যার ফলে আর কখনো জল একত্রিত হওয়ার জায়গা থাকে না।