হাইপারপিগমেন্টেশনের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
যখন ত্বকের অন্য অংশের তুলনায় কোন একটা অংশের রং বেশী গাঢ় লাগে তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় হাইপারপিগমেনশন বলা যেতে পারে।ত্বকে মেলানিনের পরিবর্তনের কারণে এটি হয়ে থাকে।এটি খুবই সাধারণ একটি রোগ এবং জীবনের কখনও না কখনও এটি হয়ে থাকে।
হাইপারপিগমেনশন এর ধরণ
- লেন্টিনাইস বা কুঁচকানো চামড়াঃ
ত্বকের চামড়াগুলো কুঁচকে যায়।
-
সোলার লেন্টিনাইসঃ
বয়সের কারণে যে ছোপগুলো পড়ে, বা সূর্যের কারণে যে ছোপগুলো পরে বা লিভার স্পট ,সেইগুলো মূলতঃ সূর্যের প্রচন্ড তাপে হয়ে থাকে।
-
মেলাজমাঃ
বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে গর্ভাবস্থায় হরমোনের প্রকোপে গর্ভবতী মহিলাদের এই অবস্থা দেখা দেয়।
রোগের কারণঃ
- হাইপার রঞ্জকতা বংশগত কারণে হতে পারে। যেমন বাবা মায়ের কাছ থেকে সন্তানের কাছে ছড়িয়ে পরতে পারে।
- সূর্যের প্রচন্ড তাপ
- ত্বকে খোঁচাখুঁচির ফলে
- হরমোনের চিকিৎসার ওষুধ ,অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদি ওষুধ প্রয়োগের ফলে অবাঞ্ছিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসাবে হতে পারে।
- ব্রণে বা কোনো কারণে স্ক্রিনে আঘাত লাগার ফলে
কীভাবে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় হাইপারপিগমেনশন নিরাময় হয়?
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ভিতর থেকে নির্মূল করার চেষ্টা করা হয়। হোমিওপ্যাথি বিশ্বাস করে যে ত্বকের রোগগুলি অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যহীনতার প্রতিফলন এবং এই ভেবেই তার চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।রোগীর পূর্বের রোগ, শারীরিক মানসিক অবস্থা,জিনগত কোনো সমস্যা আছে কিনা সব দেখে বিচার বিবেচনা করে ওষুধ দেওয়া হয়।এছাড়াও মানসিক চাপ, হরমোনের প্রভাব, সূর্যের প্রকোপ, পুষ্টির অভাব আছে কিনা ইত্যাদি দেখে বিচার করে ওষুধ মূল্যায়ণ করা হয়।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগের গোড়া থেকে নির্মূল করার চেষ্টা করে, অনাক্রম্যতা শক্তিকে বাড়িয়ে দেয় এবং ত্বকের রঙ আসতে আসতে স্বাভাবিক হয়ে আসে। হোমিওপ্যাথি ওষুধ হরমোনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে এবং মেলানিনের পরিমাণ ও ঠিক রাখে।এটি মূলতঃ মেলানোসাইটস এর উপর প্রভাব বিস্তার করে কম মেলানিন উৎপাদনে সাহায্য করে যা ত্বকের কোষকে শক্তিশালী করে করে ত্বকে অতিরিক্ত মেলানিন অপসারণ করে। এটি ত্বক উন্নত করে,ত্বকের ছোপ ও ত্রুটি দূর করে।
দ্রুত আরোগ্যের জন্যে ,ত্বকের গঠনবিন্যাস ঠিক রাখার জন্য , উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে বাইরে লাগানোর জন্য কিছু ক্রিম ব্যবহার করা হয় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়আ।এটি মাদার টিনচার ও কম শক্তি দিয়ে তৈরি হয় যা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন হবে।
হোমিওপ্যথিক ওষুধ গোড়া থেকে নির্মূল করে এবং রোগটি আর পুনরায় ফিরে আসে না।এই রোগের চিকিৎসার কিছু সাধারণ ওষুধঃ
- চোখের চারপাশের নীল বৃত্তাকার ধূসর-হলুদ রঙের মুখোমুখি চেহারার মুখোমুখি হলে লাইকোপোডিয়াম ক্ল্যাভ্যাটামের মতো ঔষধগুলি খাওয়া যেতে পারে। এটি নাক এবং মুখের উপর বাদামী দাগ নিরাময় করতে পারে।
- সেপিয়া অফিনসিনালিস, ক্লোঅ্যাজমা (মুখের উপর হলুদ দাগ এবং নাক এবং গালের উপরের অংশে একটি হলুদ চিহ্ন)রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এই ঔষধটি গর্ভাবস্থায় অসুস্থ হলেওনেওয়া যেতে পারে এবং এটি গাঢ় চুলের রোগীদের জন্যও উপযুক্ত।
- থুজা অক্সিডেন্টালিসগুলিবাদামী ছোপযুক্ত শুষ্ক ত্বকের জন্য উপযুক্ত।চোখের নীচে ডার্ক সার্কেল থাকলেও উপকার মেলে।
- আর্জেন্টিকাম নাইট্রিকাম পাংশুবর্ণ , ফ্যাকাশে ত্বকের গরিমা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। যারাটেনশন করেন , নিয়মিত বাদামী ছোপ পড়ছে মুখে তাদের জন্য এটা কার্যকরী।
- ক্যাডমিয়াম সালফারেটাম গাল এবং নাকের উপরের হলুদ দাগ দূর করতে ব্যবহার করতে পারে।সাধারণত বাতাস এবং সূর্যরশ্মির কারণে এই দাগ হয়ে থাকে।
- কোপাইভা অফিনসিনালিস বাদামী লেন্টিকুলার( লেন্সের মতো)স্পটগুলো হ্রাস করে। এই দাগগুলো কর্বূরের মতো আস্তে আস্তে উবে যায়।
- গর্ভাশয় এবং মাসিক রোগের কারণে চামড়া বিবর্ণহয়েছে যেসব মহিলাদের তারা কলোফাইলাম থালিকট্রোয়িডস খেতে পারেন।
- প্লামবাম মেলালিকাম সাধারণত লিভার স্পট, হাইপার পিগমেন্টেশন এবং মুখের তেল সামগ্রী হ্রাস করে।
এই প্রতিকারগুলি লিভার স্পট, বাদামী দাগ এবং মুখের অতিরিক্ত তৈলাক্তকরণের জন্য মুখের যে বিবর্ণতার সৃষ্টি হয় তা হাইপারপিগমেন্টেশন নিরাময় করে থাকে।
যাইহোক সঠিক চিকিৎসা পেতে সঠিক হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার দেখান, তার পরামর্ষ নিন। রোগীর পুঙ্খানুপুঙ্খ অসুবিধা জানার পর চিকিত্সার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আপনি যদি কোন নির্দিষ্ট সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে চান তবে আপনি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে পারেন এবং একটি প্রশ্ন করতে পারেন।