ঘরোয়া পদ্ধতিতে যোনিপথে চুলকানি ও জ্বালার প্রতিকার
সব বয়সি মহিলারাই কখনও না কখনও যোনিপথে চুলকানি ও জ্বালা অনুভব করেছেন। যোনিদ্বার ও যোনির মত সংবেদনশীল যায়গায় চুলকানি, জ্বালা ও অস্বস্তি ভীষণই অসুবিধাজনক। যোনিপথে ও তার চারপাশে চুলকানি, জ্বালা ও অস্বস্তির কারণ হতে পারে ব্যাকটেরিয়াল বা ছত্রাকজনিত সংক্রমন, যৌন সংক্রমক ব্যাধি, ঋতুজরা ও যেকোনো রাসায়নিক উত্তেজক পদার্থ।
যোনিপথে ‘পিনওয়ার্ম সংক্রমণ’-এর কারণেও চুলকানি হতে পারে; যদিও এই ধরণের সংক্রমন শিশুদেরই বেশি হয়। অত্যাধিক ধকল ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধক ব্যাবস্থাপনা এই অস্বস্তিজনক সংক্রমনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। চুলকানি ও জ্বালার সাথে যোনি ও যোনিদ্বারে লালচে ভাব ও ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। যোনিস্রাব ও দুর্গন্ধও এই সংক্রমনের আরেক উপসর্গ। প্রস্রাব করার সময় ও যৌনসঙ্গমের সময়েও অসুবিধা হতে পারে।
যোনিপথে সংক্রমন থেকে দূরে থাকতে সঠিক স্বাস্থবিধি ও খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা জরুরি। এছাড়াও, উল্লিখিত উপসর্গগুলির হাত থেকে সাময়িক রেহাই পেতে উপশমকারী কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিও ব্যাবহার করা যেতে পারে। কিন্তু সঠিক রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার জন্যে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
- অ্যাপেল সিডার ভিনিগার
অ্যাপেল সিডার ভিনিগারের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যর জন্যে যোনিপথের সংক্রমনের ক্ষেত্রে এটি ভীষণ উপকারি। যোনিপথের স্বাভাবিক পি.এইচ মাত্রা নিয়ন্ত্রনেও অ্যাপেল সিডার ভিনিগার লাভজনক। গরম জলে দুই টেবিলচামচ কাঁচা, অপরিশুদ্ধ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে নিন। এই সংমিশ্রণটি দিয়ে দিনে দু’বার যোনিপথ পরিষ্কার করুন। এছাড়াও, এক টেবিলচামচ কাঁচা, অপরিশুদ্ধ অ্যাপেল সিডার ভিনিগারে এক চা-চামচ কাঁচা মধু মিশিয়ে উষ্ণ জলে মিশিয়ে পান করুন।
-
ঠাণ্ডা সেঁক
যোনিপথে চুলকানির থেকে তাৎক্ষণিক মুক্তি পেতে ঠাণ্ডা কিছু দিয়ে সেঁক দিন। এতে আক্রান্ত জায়গাটি অবশ হয়ে গেলে ফোলাভাব ও চুলকানির থেকে আরাম পাওয়া যাবে। কয়েকটি বরফের টুকরো একটি পরিষ্কার কাপড়ে মুড়ে নিন। আক্রান্ত স্থানে কয়েক মিনিট সেটা দিয়ে রাখুন। ৩০ সেকেন্ডের বিরতি নিয়ে আবার পুনরায় সেঁক দিন। যতক্ষণ না উপশম পাচ্ছেন, করতে থাকুন। দরকারমত এই প্রতিকার ব্যবহার করতে পারেন। যোনিপথের চারপাশটি ঠাণ্ডা জলে দিনে দু’বার ধুয়ে নিতেও পারেন।
-
লবন জলে স্নান
লবন জলে স্নান করলে যোনিপথে চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। সংক্রমনকারি জীবাণুগুলি লবনের উপস্থিতিতে বৃদ্ধি পাবে না এবং চুলকানি ও অন্যান্য অস্বস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। যখনই চুলকানি অনুভব করবেন, এক টেবিলচামচ লবন এক গ্লাস জলে মিশিয়ে নিয়ে তা দিয়ে যোনিপথ পরিষ্কার করতে পারেন। এতে তাৎক্ষণিক উপশম পাবেন। অথবা, এক বালতি উষ্ণ গরম জলে আধ-কাপ লবন মিশিয়ে নিন। সেই জলে উবু হয়ে ১০-১৫ মিনিট বসে থাকুন। রোজ ২-৩বার এই পদ্ধতি ব্যাবহার করতে থাকুন দ্রুত আরোগ্যলাভের জন্যে।
বিঃদ্রঃ ত্বকে কোনরকম কাটা-ছেঁড়া থাকলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করবেন না।
- দই
সাধারন, চিনিছাড়া দই (যাতে সক্রিয় উপকারি ব্যাকটেরিয়া আছে) ব্যাবহার করা যেতে পারে যোনিপথের চারপাশের চুলকানি ও অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে। সক্রিয় ব্যাকটেরিয়াগুলি রোগজীবাণুর সংক্রমণে বাধা দেবে এবং সংক্রমন আরও ছড়ানো থেকে আটকাবে। দই যেকোনো রকম ছত্রাক বা খারাপ ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি আটকে উপকারি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটাবে। একটি পরিষ্কার তুলোর পট্টি দইয়ে চুবিয়ে নিন ও যোনিদ্বারে দুই ঘণ্টা লাগিয়ে রাখুন। প্রতিকার না পাওয়া পর্যন্ত এই পদ্ধতি দিনে দু’বার ব্যাবহার করতে হবে। এছাড়াও, সাধারন, চিনি ছাড়া দই কয়েক কাপ রোজ খেতে হবে।
-
রসুন
রসুনের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-বাওটিক বৈশিষ্ট্য আছে যা রোগজীবাণু সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলে। এছাড়াও রসুন রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে সাহায্য করে ও রোগজীবাণুর সংক্রমণ আটকায়। কয়েক ফোঁটা রসুনের তেল আর এক চা-চামচ ভিটামিন-ই তেল মিশিয়ে আক্রান্ত জায়গায় লাগান। ১০ মিনিট পরে তা উষ্ণ গরম জলে ধুয়ে নিন। এই পদ্ধতি দিনে দু’বার কয়েক সপ্তাহ ব্যাবহার করে যেতে হবে। প্রাত্যহিক ৩কোয়া রসুন চিবিয়ে খেতে পারেন। অথবা, ডাক্তারের পরামর্শে রসুনের সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন।
-
নিম
ছত্রাকজনিত কারণে যোনিপথে হওয়া সংক্রমণরোধে নিমপাতা ভীষণ উপকারি। এর বীজবারক বৈশিষ্ট্য সংক্রমণ রোধ করে ও চুলকানি থেকে মুক্তি দেয়। ২-৩ কাপ পরিশুদ্ধ জলে এক আঁটি নিমপাতা ফুটিয়ে নিন। পরিস্রাবিত করে এটিকে ঠাণ্ডা হতে দিন। এরপর এই সংমিশ্রণটিকে যোনিপথের চারপাশে রোজ লাগান টানা কয়েক সপ্তাহ। অথবা, কয়েক ফোঁটা নিমের তেল এক বাটি উষ্ণ গরম জলে মিশিয়ে নিয়ে আক্রান্ত জায়গায় লাগান। ২-৩ সপ্তাহ রোজ এই পদ্ধতি ব্যাবহার করুন।
-
মধু
আন-পেস্টুরাইজড মধু যোনিপথের চুলকানির উপশমে আরেকটি জরুরি উপকরণ। মধু অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যযুক্ত যে কোনও রকম রোগজীবাণুর সংক্রমণ থেকে আটকায়। মলম হিসেবে আন-পেস্টুরাইজড মধু আক্রান্ত স্থানে লাগান। ৩০ মিনিট ওইভাবে রেখে দিয়ে গরম জলে স্নান করে নিন। দিনে অন্তত দু’বার এই পদ্ধতি ব্যাবহার করুন যতদিন না উপসর্গের প্রতিকার পাচ্ছেন। এছাড়াও, ১-২ টেবিলচামচ আনপ্যাসচিওরাইজ্ড’ মধু গরম জলে মিশিয়ে দিনে দু’বার খেতে হবে।