৬-৭ মাস পর্যন্ত শিশুদের যত্ন নেওয়ার ঘরোয়া প্রতিকার
বুকের দুধ
বুকের দুধ শুধু সর্দি কাশি নয়, যেকোনো বাচ্চার সর্দি ও কাশি নিরাময়ের সবচেয়ে সোজা ভারতীয় পদ্ধতি হ’ল স্তন্যপান করানো। সর্দি ও কাশির সময়ে কিছু বাচ্চা সঠিকভাবে স্তন্যপান করে না। এতে চিন্তার কিছু নেই, বুকের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করে যেতে হবে। সাধারণ সর্দি ও কাশির জন্যে অন্য কোনও ওষুধের দরকারই নেই, বুকের দুধই সব সমস্যার সমাধান করে দেবে।
শিশুর নাকে বুকের দুধ স্প্রে করা
এটা বুকের দুধের একটি কম প্রচলিত ব্যবহার। কিছু মায়েরা তাদের বুকের দুধ বাচ্চাদের নাকে কয়েক ফোঁটা ঢেলে দেন এবং দেখা গেছে যে তাতে সর্দি তাড়াতাড়ি সেরে ওঠে।
স্যালাইন বা নুন জল
এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন স্যালাইন জল বা সোজা ভাষায় যাকে বলে নুন জল। এটি আপনি নিজেও বাড়িতে বানিয়ে নিতে পারেন, কিন্তু আমি পরামর্শ দেব দোকান থেকে কিনে আনার জন্যে কারণ দোকানের স্যালাইন জলে নুন এবং জলের মাত্রা একদম সঠিক থাকে। বাচ্চার বন্ধ নাকে কয়েক ফোঁটা নুন জল ফেলে দিতে হবে। সর্দির জন্যে বন্ধ হয়ে বাচ্চার নাক এতে পরিষ্কার হয়ে যাবে।এভাবে বাচ্চার নাক পরিষ্কার করে যেতে হবে।
নাকের ‘সাকশন পাম্প’
নাকের জন্যে ব্যবহৃত সাকশন পাম্প বাচ্চাদের বন্ধ নাক পরিষ্কার করার জন্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। সুতির তৈরি তোয়ালে বা কাপড়ের যেকোনো রুমালের কারণে নবজাতক শিশুর নরম ত্বকে লালচে র্যাশ বেরোতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে প্রতিবার ব্যবহার করার পর সাকশন পাম্প যেন ভাল করে ধুয়ে নেওয়া হয়।
জোয়ান ও রসুনের বাষ্প
রসুন একটি শক্তিশালী ঔষধি এবং এর প্রচুর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ আছে। জোয়ানের মধ্যেও অনেক ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া-নাশক ক্ষমতা আছে। তাওয়ায় এক মিনিটের জন্যে ২ থেকে ৩ কোয়া রসুন ও এক চিমটি জোয়ান ভেজে নিন। ঝাঁঝালো গন্ধ পেতে শুরু করবেন কিছুক্ষণ পরেই। সংমিশ্রণটিকে ঠাণ্ডা হতে দিন এবং আপনার বাচ্চার নাকের সামনে ধরুন। এই সংমিশ্রণটির গন্ধ আপনার বাচ্চার সর্দি ও কাশি সারিয়ে তুলবে। একটি ছোট কাপড়ের থলিতে এই সংমিশ্রণটি বেঁধে নিতে পারেন আপনার সুবিধার জন্যে।
হালকা বাষ্পের প্রবাহ
উষ্ণ গরম জলের বাষ্পের ভাপ নেওয়া এমনিতেই বন্ধ নাক, বুকে জমে থাকা কফ্ ও সর্দির হাত থেকে রেহাই পাওয়ার প্রাকৃতিক উপায়। ‘স্টিমারের’ ব্যবহার করে সরাসরি আপনার শিশুর নাকে বাষ্পের ভাপ দিতে আমি বারণ করবো। বরং ঘরের এক কোণে বা শিশুর বিছানার পাশে স্টিমার রেখে দিয়ে বা ফুটন্ত গরম জলের পাত্র রেখে দিতে পারেন। এছাড়াও, বাথরুমে গরম জলের কল কিছুক্ষণের জন্যে খুলে রেখে দিয়ে বাষ্পপূর্ণ করে রাখতে পারেন বাথরুমটিকে। তারপর আপনার শিশুকে আপনার কোলে বসিয়ে রাখতে হবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এটি সবচেয়ে কার্যকরী ভারতীয় ঘরোয়া প্রতিকার বাচ্চার সর্দি ও কাশি সারানোর জন্যে।
বুক, মাথা ও পা ঢেকে রাখা
আপনি আমার থেকে বেশি ভাল জানবেন কিভাবে আপনার বাচ্চাকে ঠাণ্ডার হাত থেকে বাচাতে হবে। প্রত্যেকটি বাচ্চা একই রকমের হয় না, তাই আপনার বাচ্চার আচার ব্যবহারের দিকে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। আমার বাচ্চার বুক থেকে ভীষণ ঠাণ্ডা লেগে যায় এবং আমরা সতর্ক থাকি শীতকালে যাতে ভালভাবে ওকে ঢেকে রাখা হয় কাপড় দিয়ে, বিশেষ করে বুকের দিকে বেশি করে ঢেকে রাখি। ওকে মোজা বা টুপি না পরালেও অসুবিধা হয় না।
হাত পরিষ্কার রাখা
যদি বাড়িতে একবার কারও সর্দি বা কাশি হয়, খেয়াল রাখতে হবে প্রত্যেকে যেন হাত পরিষ্কার রাখেন। এটি কোনও বিশাল জটিল ব্যাপার নয় কিন্তু এভাবেই সংক্রমণ হতে পারে শিশুর। আপনার পরিবারকে সর্দি ও কাশির হাত থেকে নিরাপদে রাখতে এটা একটি জরুরি বিষয়।
বাচ্চার মাথা উঁচু করে রাখতে হবে
সর্দি হলে বা নাক বন্ধ থাকলে বাচ্চারা ঠিক করে ঘুমোতে পারে না। ঘুমোনোর সময়ে বাচ্চার মাথা বালিশ বা কোনও উঁচু কাপড়ের সাহায্যে উঁচু করে রাখতে হবে যাতে বন্ধ নাকের জন্যে বাচ্চার ঘুমোতে কোনও অসুবিধা না হয়।
তেল মালিশ
সর্ষের তেল বা নারকোল তেল দিয়ে হালকা ম্যাসেজ করলে আপনার বাচ্চা কাশির থেকে আরাম পাবে। বাচ্চার বুকে ও পিঠে ভালভাবে তেল মালিশ করতে হবে।
নারকোল তেলের সাথে সজনের পাতা
নারকোল তেল গরম করে তাতে কয়েকটা মোরিঙ্গা পাতা দিয়ে দিন। এবার এটি বাচ্চাটির মাথায় ভাল করে মালিশ করুন। ভারতীয় ঘরোয়া উপায় হিসাবে সর্দি ও কাশি সারানোর জন্যে এটি একটি ভীষণ উপকারী।
ভেষজ নারকোল তেলের ম্যাসেজ
নারকোল তেল গরম করুন আর তাতে কয়েকটা তুলসী পাতা দিয়ে দিন। তুলসী পাতার আরোগ্যকর গুণগুলো নারকোল তেলে মিশে যাবে। এতে আপনি এক চিমটি কর্পূরও দিয়ে দিতে পারেন। নারকোল তেলে ভাল করে এগুলো মিশিয়ে দিন। ঘুমোনোর আগে এটি বাচ্চার বুকে ভালভাবে মালিশ করতে হবে। এই একই তেল দিয়ে বাচ্চার মাথায় মালিশ করতে পারেন। এটি সর্দি ও কাশির হাত থেকে আপনার বাচ্চাকে বাঁচাবে।
গন্ধসার তেল ঘরে ছড়িয়ে দিন
গন্ধসার তেল আসলে উদ্ভিদজাত হয়। এগুলো শিকড়, পাতা, ফুল, কাণ্ড বা এই সবকটার থেকেই তৈরি হতে পারে গন্ধসার তেল। বাজারে উপলব্ধ অন্য অনেক সুগন্ধি তেল দেখে বিচলিত হবেন না। সুগন্ধি তেল আসলে কৃত্রিম এবং এদের কোনও রোগ নিরাময় করার কোনও গুণ নেই। যেইসব গন্ধসার তেল সহজেই ঘরে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং বন্ধ নাক পরিষ্কার করতে পারে টা হ’ল – সিডারউড, লবঙ্গ, ইউক্যালিপ্টাস, আদা, লেবু, ম্যালেলিউকা, মেন্থল, রোজমেরি, চন্দন এবং থাইম। এই গন্ধসার তেল কোনও ‘ডিফিউজার’-এ জলের সাথে মিশিয়ে ঢেলে নিন আরও ভাল ফলাফলের জন্যে।
ভারতীয় উপায়ে শিশুদের জ্বর সারানোর ঘরোয়া উপায়
বুকের দুধ
আবারও, বুকের দুধ বাচ্চাদের সাধারণ জ্বর ও তার মূল কারণের সাথে ভালভাবে লড়াই করতে সাহায্য করে। জ্বর হলেও আপনার বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়া থেকে বিরত রাখবেন না। মায়ের সাথে শারীরিক সংস্পর্শ
বেশিরভাগ লোক বাচ্চার সাথে মায়ের বন্ধনের কথা ভুলে যান। একটি বাচ্চা তার মায়ের গর্ভে ৯ মাস পর্যন্ত থাকে এবং সেটাকেই আরামদায়ক জায়গা বলে মনে করে। এটি আমার বাচ্চার সাথে বহুবার পরীক্ষা করে দেখেছি ওর জন্মের পর থেকেই। বাচ্চার মায়ের ত্বকের বাচ্চার ত্বকের স্পর্শ বাচ্চাকে যেকোনো অস্বস্তি থেকে আরাম দেয়। আপনার বাচ্চাকে পরম স্নেহে জড়িয়ে ধরুন এবং আপনার ও আপনার বাচ্চার মাঝে যেন কোনও কাপড় না থাকে।
উষ্ণ গরম জলে স্নান
উষ্ণ গরম জলে স্নান করানোর ফলে আপনার বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে যায়। গামলাতে উষ্ণ গরম জল ঢেলে আপনার বাচ্চাকে তাতে স্নান করান বা স্পঞ্জ দিয়ে গা মুছে দিন।
ভিনিগার স্পঞ্জ বাথ
উষ্ণ গরম জলে সামান্য ভিনিগার ঢেলে আপনার বাচ্চাকে স্নান করান। আপনার বাচ্চার জ্বর দ্রুত কমে যাবে।
তরল ল্যাভেন্ডার তেলের ম্যাসাজ
যেমন কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছি জার ফলে আপনার বাচ্চার সর্দি ও কাশি সেরে উঠবে, তেমনই তেল মালিশ করলেও কিন্তু সর্দি ও কাশিতে উপকার পাওয়া যায়। বিজ্ঞানসম্মতভাবে আপনার বাচ্চাকে আরাম দেওয়াটাই মূল লক্ষ্য। আপনার ছোট্টটি যখন খুশিতে থাকবে, তখন আপনাআপনি জ্বরও সেরে যাবে। ল্যাভেন্ডার তেল সর্ষের তেলে বা নারকোল তেলে মিশিয়ে নিতে হবে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত এবার টা দিয়ে মালিশ করুন।
মোজায় পেঁয়াজ
ঐতিহ্যগতভাবে, ভারতে জ্বর সারানোর জন্যে পেঁয়াজের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পেঁয়াজ ২ থেকে ৩ টুকরো করে পায়ের নিচে রেখে মোজা পরিয়ে দিন বাচ্চাকে। এই পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি ভাল কাজে দেয় যখন আপনার বাচ্চা ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে পেটে গ্যাসের নিরাময় (৬ মাসের বাচ্চাদের জন্য)
প্রতিবার খাবার পরে ঢেকুর তোলানো
প্রথমেই আপনাকে এটা বুঝতে হবে কেন বড়দের থেকে বাচ্চাদের বেশি গ্যাসের সমস্যা হয়। পাকস্থলী থেকে যখন বায়ু নির্গমন হয়, তখন ঢেঁকুরের শব্দ শোনা যায়। যেমন আমরা জানি, প্রতিকার করার চেয়ে প্রতিরোধ করা বেশি ভাল, আপনার বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময়ে ঢেঁকুর তোলান ও খাওয়ার মাঝেও ঢেঁকুর তোলান।
বাচ্চার পায়ের ব্যায়াম করান
আপনার বাচ্চা যদি গ্যাসের সমস্যায় কষ্ট পেতে থাকে, তাহলে শিশুর পা দুটো নিয়ে সাইকেল চালানোর মতো করে দুই মিনিট ব্যায়াম করান। খাওয়ানোর পরেই এই ব্যায়াম করাবেন না, মাঝে অন্তত ৩০ মিনিটেরব্যবধান রাখতে হবে। দুটো পা মুড়ে পেটের দিকে নিয়ে গিয়ে চাপ দিলে বায়ু নির্গমনে সাহায্য করবে। আমরা দুটো পদ্ধতিই ব্যবহার করে দেখেছি এবং দুটোই সুফল দিয়েছে।
পেটে ম্যাসেজ করা
পেটে আলতো করে ম্যাসেজ করলে আপনার শিশুটি আরাম পাবে। আপনি এই ক্ষেত্রে যে কোনও তেল ব্যবহার করতে পারেন কিন্তু আমি সর্ষে বা নারকোল তেলই বেশি ব্যবহার করি। হালকা করে ৫ থেকে ৭ মিনিট পেটের অপর ম্যাসেজ করুন।
হিং
বাচ্চাদের পেটে গ্যাসের সমস্যার নিরাময়ে হিং অত্যন্ত উপকারী একটি দ্রব্য। এক চামচ গরম জল নিয়ে তাতে এক চিমটে হিং ঢেলে দিন। বাচ্চাদের আমরা সরাসরি মুখের ভেতরে হিং দিতে পারব না তাই হিং মিশ্রিত জলটা শিশুর উদরের চারপাশে ও নাভির কাছে দিয়ে বামাবর্তে ম্যাসেজ করুন।
গরম তোয়ালে
প্যানে সামান্য একটু জল নিয়ে গরম করে নিন। একটি পরিষ্কার সাদা তোয়ালে সেই জলে ভিজিয়ে নিয়ে অতিরিক্ত জল নিংড়ে নিন। তোয়ালের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে নিন যাতে ভীষণ গরম না থাকে। এবার গরম তোয়ালেটা আপনার বাচ্চার পেটের অপর রেখে দিন। সর্দি ও কাশির নিরাময়ের জন্যে ভারতীয় এই পদ্ধতিটি আপনার শিশুর গ্যাসের সমস্যারও নিরাময় ঘটাবে।
স্তন্যপান
অসুস্থতা যাই হোক না কেন, শিশুদের জন্য তার মায়ের বুকের দুধ কিন্তু প্রমাণিতভাবে ওষুধের মতো কাজ করে। আপনার শিশুকে জলয়োজিত রাখুন বুকের দুধ দিয়ে। অন্য কোনোরকম দুধ বাচ্চাকে দেবেন না এমনকি গরুর দুধও খাওয়াবেন না। এছাড়াও, বমি বা পেট খারাপ হ’লে তার কারণ কি হতে পারে সে দিকেও আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। যে কোনোরকম সংক্রমণ, দাঁত ওঠা বা শুধু আবহাওয়া বদলের জন্যেও এসব হতে পারে। মনে করার চেষ্টা করুন আপনার বাচ্চা বিগত ২৪ ঘণ্টায় কি কি খেয়েছিল।
সোয়া জাতীয় দুগ্ধ দ্রব্যের ব্যবহার করুন
আপনার শিশু যদি বাজারে উপলব্ধ ফর্মুলা পাউডার খায়, তাহলে সোয়া জাতীয় ফর্মুলা পাউডার ব্যবহার করা শুরু করুন। এর ব্যবহারে আপনার বাচ্চার শরীরে কম র্যাশ দেখা যাবে ও পেট খারাপের সমস্যা থেকেও দ্রুত মুক্তি পাবে।
‘গ্রাইপ ওয়াটার’
জলপাই জল বা গ্রাইপ ওয়াটার পান করলে ডাইরিয়ার থেকে নিরাময় ঘটবে। জলপাই জল পেট ঠাণ্ডা রাখে এবং পেট খারাপ হতে দেয় না।
দই ও ঘোল
৪ মাসের নিচে কোনও বাচ্চাকে এটা দেওয়া উচিত নয় কিন্তু আপনার বাচ্চা যদি উঠে বসতে শিখে যায় এবং অল্প শক্ত খাবার খেতে শুরু করে, তবে তাকে অল্প দই ও ঘোল খাওয়াতে পারেন। দইয়ে প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক উপাদান থাকে যা পেট সংক্রান্ত কোনও সমস্যার থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
৭ মাসের বাচ্চাদের জন্যে ঘরোয়া প্রতিকার
ভারতীয় উপায়ে শিশুদের সর্দি কাশি সারানোর ঘরোয়া উপায়
প্রতিকার করার চেয়ে প্রতিরোধ করা বেশি ভাল। ভীষণ কার্যকরী ও রোগ প্রতিরোধক এই খাদ্যগুলো ব্যবহার করা শুরু করুন যাতে সর্দি বা কাশি কখনও হতেই না পারে।
বাষ্প
বাষ্প হ’ল প্রথম ভারতীয় ঘরোয়া পদ্ধতি যা দিয়ে সর্দি ও কাশি সারিয়ে তোলা যায়। নিঃশ্বাসের সাথে বাষ্প নাকের ভেতরে ঢুকলে সর্দির কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া নাক পরিষ্কার হয়ে যায়। আপনার শিশু এর ফলে শান্তিতে ঘুমোতে পারবে এবং সর্দি, কাশি ও বুকে কফ্ জমে কষ্ট পাওয়ার হাত থেকে রেহাই পাবে। ঘরের মধ্যে ‘রুম হিউমিডিফায়ার’ বা ‘স্টিমার’ ব্যবহার করতে পারেন ঘরের আবহ আর্দ্র রাখতে। গরম জল বা বাষ্পীভূত জলের সামনে বাচ্চাকে না রাখার চেষ্টা করবেন।
রসুন ও জোয়ানের পুটলি
২ থেকে ৩ কোয়া রসুন এবং বড় চামচের এক চামচ জোয়ান একটি শুকনো তাওয়া বা প্যানে রেখে সেঁকে নিন। সেঁকা হয়ে গেলে আঁচ নিভিয়ে দিন। এটি দিয়ে এবার একটা পুটলি তৈরি করুন। এই পুটলিটি বাচ্চার বিছানার পাশে বা ঘুমোনোর সময়ে ওর পাশে রেখে দিন। রসুন ও জোয়ানের গন্ধ বাচ্চার বন্ধ নাক ও বুকে জমে থাকা কফের হাত থেকে মুক্তি দেবে।
সেঁকা হলুদের মালিশ
হলুদ হ’ল সর্দি ও কাশির নিরাময়ের জন্যে ভারতে ব্যবহৃত অন্যতম দ্রব্য যা বাচ্চা এবং বড়দের জন্যেও ব্যবহার করা হয়। হলুদের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ যেকোনো রকম সর্দি ও কাশির নিরাময়ের জন্য একটি প্রাকৃতিক কার্যকর উপায়। শুকনো হলুদের একটি ডাল নিন, পুড়িয়ে তা থেকে পাউডার তৈরি করুন। এই হলুদের পেস্টটি (হলুদ গুঁড়ো ও কয়েক ফোঁটা জল) বাচ্চার নাকে ঘষে মালিশ করে দিন যাতে বন্ধ নাকের সমস্যা থেকে আপনার শিশু মুক্তি পায়।
হলুদ বাটা
হলুদের বাটা তৈরি করুন আধ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো ও এক টেবিল-চামচ জল দিয়ে। আগুনের অপর রেখে এটি গরম করে তারপর এই গরম হলুদ বাটাটি বাচ্চার বুকে, পায়ের তালুতে ও গলায় মালিশ করুন। হলুদের যেহেতু অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে, এটি কাশি, কফ্ ও বুকে কফ্ জমে যাওয়ার হাত থেকে আপনার বাচ্চাকে রক্ষা করবে।
রসুন ও সর্ষের তেলের ম্যাসেজ
সর্ষের তেলে আরোগ্যকারী ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ আছে। এটি নিরাপদ ও কার্যকরী একটি উপায় কাশি ও বুকে কফ্ জমে যাওয়ার নিরাময় ঘটাতে। একটা বা দুটো রসুনের কোয়া সর্ষের তেলে দিয়ে তা গরম করে নিন। তেলটি উষ্ণ গরম হয়ে গেলে তা বাচ্চার বুকে ও পায়ের তালুতে মালিশ করুন। সর্ষের তেলের ঝাঁজ ও গন্ধ বাচ্চার নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, কাশি ও সর্দির হাত থেকে মুক্তি দেবে। সর্ষের তেলটি এক চা-চামচ সন্ধক লবণ দিয়েও গরম করে নিতে পারেন। তেলটি গরম হয়ে গেলে তা আপনার বাচ্চার পায়ের তালুতে, পিঠে আর বুকে মালিশ করুন।
নীলগিরি তেল
নীলগিরি তেল, যাকে ইউক্যালিপ্টাস তেল বলেও চেনা যায়, সর্দি ও কাশি নিরাময়ের জন্য একটি দারুণ কার্যকরী দ্রব্য। ইউক্যালিপ্টাস তেল শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় ও কফ্ বের করতে এবং শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। নীলগিরি তেল নাককে আর্দ্র রাখে। শুধু কয়েক ফোঁটা নীলগিরি তেল বাচ্চার জামা কাপড়ে দিয়ে রাখুন অথবা একটি পরিষ্কার রুমালে কয়েক ফোঁটা তেল ঢেলে তা বাচ্চার আশেপাশে দিয়ে রাখুন।
গন্ধসার তেল মালিশ
এক বা একাধিক গন্ধসার তেল অন্য কোনও তেলে মিশিয়ে নিয়ে তা আপনার বাচ্চার পায়ের তালুতে অথবা বুকে মালিশ করতে পারেন। অল্প কিছু গন্ধসার তেল যা শিশুর ব্যবহারের পক্ষে নিরাপদ হবে তা হ’ল ইউক্যালিপ্টাস, লেবু ও চন্দন (মেন্থল ব্যবহার করবেন না)।
ভেপোরাব ব্যবহার করুন
রাতে শোয়ার সময় বাচ্চার পায়ের তালুতে ও বুকে ‘ভিক্স ভেপোরাব’ মালিশ করে বাচ্চার পায়ে মোজা পরিয়ে দিন।কাশির থেকে তৎক্ষণাৎ মুক্তি পাওয়া যাবে। ভেপোরাব আসলে বুকে জমে থাকা কফ্ পরিষ্কার করে না কিন্তু এর ঠাণ্ডা ভাব আপনার শিশুকে আরাম দেবে।
তুলসীর জল
তুলসীর রস কাশি, সর্দি ও জ্বরের উপশম ঘটাতে সাহায্য করে। কয়েকটা তুলসী পাতা জলে ফেলে ফুটিয়ে নিন। এই জলটি এবার আপনি আপনার বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন অথবা বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময়ে ২ থেকে ৩ চামচ তুলসী ধোয়া জল দুধে মিশিয়ে দিতে পারেন।
বড় এলাচ ও তুলসী ফুটিয়ে নেওয়া
৪ থেকে ৫টি তুলসী পাতা ও একটা বড় এলাচ ফুটিয়ে নিন এক কাপ জলে। ফুতে গেলে তা ছেঁকে নিয়ে ঠাণ্ডা হতে দিন। এই জলের দুই চামচ আপনার বাচ্চাকে পান করান। যদিআপনি আপনার বাচ্চাকে ‘টপ আপ মিল্ক’ বা ফর্মুলা খাওয়ান, তাহলে তার মধ্যে এই জলের ২ থেকে ৩ চামচ ঢেলে দিতে পারেন।
পানিকুর্কার জুস্
পাথর চুর একটি আয়ুর্বেদিক জড়িবুটি যা দক্ষিণ ভারতে দক্ষিণ ভারতে ব্যবহার করা হয় বাচ্চাদের কাশি, সর্দি, গলা ব্যথা, নাক ও বুকে জমা কফের নিরাময় ঘটাতে। ১ কাপ জলে পানিকুর্কা পাতা দিয়ে ৪-৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন। তা ঠাণ্ডা হয়ে গেলে এই জলের ২ টেবিল চামচ বাচ্চাকে খাইয়ে দিন। এটা অতিরিক্ত কফ্-এর থেকে নিরাময় ঘটাতে ভীষণ উপকারী।
গরম জলের সাথে জোয়ান
জোয়ানের সাথে ফোটানো গরম জল কিন্তু কাশি সারানোর ভীষণ ভাল উপায়। আপনার বাচ্চাকে জলয়োজিত রাখতে এটি নিয়মিত আপনার বাচ্চাকে খাওয়ান।