এইচআইভি এইডসের তথ্য
এইডস নামটাই যেন এক ভয়াবহ এবং কষ্টকর অনুভূতি দেয়। রোগ এমনিতেই বদনাম কিন্তু এডসকে অনেকেই রোগ না মারণ রোগগুলির উৎস বলা ভুল হবে না। এটা এমন একটি রোগ যার রুগী বাঁচার আসা ছেড়ে মৃত্যুর জন্য চেয়ে থাকে। তাই আমাদের সকলের এইডস সম্বন্ধে সমস্ত তথ্য জেনে রাখা উচিৎ। এইডস এইচআইভি ভাইরাসের কারনে হওয়া একটি রোগ। মানুষের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাপনা যখন সংক্রমণের সাথে লড়াই করতে দুর্বল হয়ে পরে তখন এই রোগ হয়। আর তখন প্রকাশ পায় যখন এইচআইভি সংক্রমণের অধিক বেড়ে যায়। এইডস এইচআইভি সংক্রমণের অন্তিম পর্যায়। যখন শরীর নিজেকে রক্ষা করতে ব্যার্থ হয় আর শরীরে অনেক প্রকারের রোগ এবং সংক্রমণ হয়ে যায়, এইচআইভি শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাকে আক্রমণ করে। যার কাজ শরীরকে সংক্রামক রোগগুলি থেকে বাঁচানো যা জীবাণু আর ভাইরাসের জন্য হয়।
এইচআইভি রক্তে উপস্থিত প্রতিরোধক পদার্থ লসিকা কোষগুলিকে আক্রমণ করে। এই পদার্থটি মানুষকে জীবাণু আর ভাইরাসের থেকে হওয়া রোগ থেকে বাঁচায় আর শরীরের রক্ষা করে। যখন এইচআইভির দ্বারা আক্রমণে প্রতিরোধক ক্ষমতা ক্ষয় হয়ে আসে তো এই সুরক্ষা কবচ ছাড়া এইডসে পীড়িত লোকেরা ক্যানসার বা যক্ষ্মা রোগের মত ভয়ানক রোগে আক্রান্ত হয়। আর শরীরকে সুযোগসন্ধানী সংক্রমণ যেমন সর্দি-কাশি, ফুসফুসের রোগ ইত্যাদি ঘিরে নেয়। যখন ক্ষয় এবং ক্যানসার রোগ শরীরকে ঘিরে নেয় তখন চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে ওঠে এবং রুগীর মৃত্যুও হতে পারে। এখন পর্যন্ত এইচআইভি বা এইডসের কোনো চিকিৎসা উপলভ্য নয়। তবে সঠিক চিকিৎসা এবং সাহচর্যের সাথে এইচআইভির রোগী লম্বা এবং সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবে। এর জন্য আবশ্যক সঠিক চিকিৎসা করা আর যেকোনো পরিণামের থেকে সামলে নেওয়া যায়।
এইডস কিভাবে ছড়ায়
যদি কোন সাধারন মানুষ এইচআইভি সংক্রমিত মানুষের শ্রোর্ণীর স্রাবের বা রক্তের সংস্পর্শে আসে তখন তার এইচআইভি হতে পারে। সাধারণত এইচআইভি পজিটিভ হলেই এডস ধরে নেয়, যা একদমই ঠিক না। বরং এইচআইভি পজিটিভ হবার ৮-১০ বছর পর যখন সংক্রমিত ব্যাক্তির রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতার ক্ষয় হয় তখন তাকে মারনাত্মক রোগ ঘিরে ধরে ঐ অবস্থাকে এইডস বলে।
এইডস হওয়ার চারটি সাধারণ কারন:
- রোগীর সাথে অসুরক্ষিত যৌন কার্যকলাপ
- দূষিত রক্ত থেকে
- সংক্রমিত সূচের ব্যাবহার থেকে
- এইডস সংক্রমিত মায়ের থেকে তার হবু সন্তানের
এইডসের লক্ষণ
এইচআইভিতে সংক্রমিত লোকেদের মধ্যে অনেক লম্বা অব্দি এইডসের লক্ষণ দেখা দায় না। লম্বা সময় পর্যন্ত (৩, ৬ মাস বা তার বেশি) এইচআইভির কোন পরীক্ষার দ্বারাও জানা যায় না। অনেক এডসের রোগীদের সর্দি, খাশি বা ভাইরাল জ্বর হয়ে যায় কিন্তু তার থেকে এডস আছে কিনা তা জানা যায় না। এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমণের পর আস্তে আস্তে শরীরে ছড়িয়ে পরে। যখন ভাইরাসের সংক্রমণ শরীরে বেড়ে যায় তখন রোগের লক্ষণ দেখা যেতে থাকে। এডসের লক্ষণ দেখা দিতে আট থেক দশ বছরও লাগতে পারে। এরকম ব্যাক্তি যার শরীরে এইচআইভি ভাইরাস আছে কিন্তু এডসের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায়নি তাদের এইচআইভি পজিটিভ বলে। কিন্তু মাথায় রাখা উচিৎ যে এই ধরণের ব্যাক্তিরাও এইডস ছড়াতে পারে।
এইডসের কিছু শুরুর লক্ষণঃ
- অনেকটা ওজন কমে যাওয়া
- একটানা কাশি হওয়া
- বার বার সরদি হওয়া
- জ্বর
- মাথাব্যাথা
- অবসাদ
- শরীরে দাগ আসা ( ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কারনে)
- কলেরা
- খাওয়ার ইচ্ছা না থাকা
- লসিকা ফুলে যাওয়া
খেয়াল রাখবেন ওপরের দিয়ে দেওয়া লক্ষণগুল অন্ন সাধারণ রোগেরও হতে পারে। এইডস নিশ্চিত রূপে চিনতে শুধুমাত্র ঔষধিক পরীক্ষার দ্বারাই সম্ভব তাই সেইটাই করা উচিৎ। এইচআইভি শনাক্ত করতে প্রধানত ইমিঊনোভোরবেন্ট এসেস বা এলিয়াসা পরীক্ষা করানো উচিৎ।
এইডসের চিকিৎসা
এইডসের চিকিৎসারজন্য অ্যান্টি রেট্রোভাইরাস থেরাপি ড্রাগ ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধের মূল উদ্দেশ্য হল এইচআইভির শরীরের উপর প্রভাব কমানো, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করা এবং সুযোগ সুবিধাজনক রোগগুলোকে ঠিক করা। সময়ের সাথে সাথে, বিজ্ঞানীরা এইডসের জন্য নতুন নতুন ওষুধ আবিষ্কার করছেন। কিন্তু সত্যি বলতে গেলে এইডস প্রতিরোধ করা এইডসর জন্য সবচেয়ে ভাল চিকিৎসা।
এইডস প্রতিরোধ
এইডস প্রতিরোধে, সাধারণ মানুষের এইচআইভিতে সংক্রামিত ব্যক্তির বীর্য, যোনি স্রাব বা রক্তের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়াও, এডস এর বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করুন।
- সংক্রমিত সঙ্গী বা ব্যক্তির সাথে যৌন যোগাযোগ স্থাপন করা এড়িয়ে চলুন এবং যদি করেনও তবে দয়া করে সাবধানে কনডম ব্যবহার করুন। কিন্তু কখনও কখনও কন্ডোম ব্যবহার করলে কনডমের ফাটার ঝুঁকি আছে। তাই একাধিক ব্যক্তির সাথে যৌন সম্পর্ক রাখবেন না।
- রক্তকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে দেখেই নিন। অনেক সময় পরীক্ষা করেই রোগীদের রক্ত দান করা হয় যা বিপজ্জনক। অতএব, রক্ত দেওয়ার আগে দেখে নিন রক্ত এইচআইভি দূষিত না তো।
- ব্যবহৃত সুচ বা ইনজেকশন ব্যবহার করবেন না কারণ তারা এইচআইভি সংক্রামিত হতে পারে।
- দাড়ি কাটানোর সময় নাপিতকে সর্বদা নতুন ব্লেড ব্যাবহার করতে বলবেন। এইডস সম্পর্কিত তথ্যের পাশাপাশি আমাদের এডস সম্পর্কে ছড়িয়ে থাকা ভুলধারণার বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে অনেক মানুষ জানেন যে এইডসে পীড়িত ব্যাক্তির সাথে খাওয়া, পান করা, বসলে এডস হয়। যা সম্পূর্ণ ভুল। যেমন ভুল ধারণা এড়িয়ে চলুন।
বাস্তবে, দৈনন্দিন সামাজিক যোগাযোগে এইচআইভি ছড়ায় না যেমনঃ
- ক্ষতিগ্রস্ত রোগীর সঙ্গে খাওয়া
- বাসন ভাগ করলে
- হাত মেলানো বা হাগ করা দ্বারা
- একই টয়লেট ব্যবহার করে
- মশা বা অন্যান্য পোকা কামড়ালে
- পশু কামড়ালে
- কাশি বা হাঁচি থেকে
উল্লিখিত জিনিসগুলি বুঝুন এবং সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং পীড়িতদের নিয়মিত চিকিৎসা করান।