হলুদ দিয়ে অর্শরোগের চিকিৎসা
মলদ্বারের চারপাশের স্নায়ুর ফুলে যাওয়া বা ব্যথাকে অর্শরোগ বলে। এর থেকে মলদ্বারের মধ্যে একটি পরিবর্ধন হয় যেটা মলদ্বারের ভিতরের অংশে অথবা মলদ্বারের চারপাশে তৈরি হয়। শিরাগুলির ভেতরের দিকে প্রদাহ বেশিরভাগ সময়ই কম বেদনাদায়ক হয়, তবে স্নায়ুগুলি যদি ফুলে যায় তবে সমস্যাটি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। এর ফলে মলদ্বার থেকে রক্তপাত হলে রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সমস্যাটিকে গুরুত্ব না দেওয়া হলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। অর্শরোগে ভোগা ব্যক্তিদের কোথাও বসতে খুব কষ্ট হয় এবং ব্যথার জন্য তারা রাতে ঘুমাতে পারেন না। অতএব, সময়মত অর্শরোগের চিকিৎসা প্রয়োজন। এই নিবন্ধে পড়ে আমরা জানতে পারবো কিভাবে হলুদ ব্যবহার করে অর্শরোগের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে।
অর্শরোগের লক্ষণ
অর্শরোগ হলে কোষ্ঠকাঠিন্যর কারণে মল শুষ্ক হয়ে যায়। পরিবর্ধনটি শক্ত হয়ে উঠতে শুরু করে, যা থেকে মলদ্বারে ব্যথা শুরু হয়ে যায়। আপনি যদি মনোযোগ না দেন না তাহলে মলদ্বার ফুলে যেতে পারে এবং মলত্যাগ করা খুব বেদনাদায়ক হয়ে যায়। অর্শরোগ যখন গুরুতর হয়ে যায় তখন মলত্যাগের সময় রক্তও বেরোতে পারে।
অর্শরোগের কারণ
অর্শরোগের অনেক কারণ রয়েছে যার মধ্যে হতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য, খারাপ খাদ্যাভ্যাস, খাদ্যে ফাইবারের অভাব, দীর্ঘ সময়ের জন্য বসে থাকা, মানসিক চাপ এবং ভারী পণ্য তোলা। গর্ভাবস্থার সময়েও এই ধরনের সমস্যা ঘটতে পারে।
হলুদ দিয়ে অর্শরোগের চিকিৎসা
হলুদকে অর্শরোগের একটি কার্যকর প্রতিকার হিসাবে ধরা হয়। হলুদে প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্য আছে। সেই সঙ্গে হলুদ জীবাণুবিরোধী যা জীবাণুগুলিকে ধ্বংস করে। হলুদ ক্ষত নিরাময় করতেও সাহায্য করে। আদিকাল থেকে হলুদ এই জন্য অর্শরোগের নিরাময় হিসাবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। এখানে কিছু উপায় দেওয়া রয়েছে যার সাহায্যে হলুদের দ্বারা বেদনাদায়ক অর্শরোগের চিকিৎসা করা যেতে পারে।
অ্যালোভেরা এবং হলুদ:
আধা চামচ অ্যালোভেরা জেলের মধ্যে এক চামচ হলুদগুঁড়ো ভালোভাবে মিশ্রিত করে পেস্ট তৈরি করুন। শুতে যাওয়ার আগে মলদ্বারের ভিতরের এবং বাইরের অংশে পেস্টটি লাগান। এক সপ্তাহ ধরে এই কৌশল প্রয়োগ করে অর্শরোগ নিরাময় করা যেতে পারে।-
পেট্রোলিয়াম জেলি এবং হলুদ:
এক চামচ পেট্রোলিয়াম জেলিতে এক চামচ হলুদ মিশ্রিত করে একটি পেস্ট তৈরি করুন। মলত্যাগ করার কিছু সময় আগে মলদ্বারের ভিতরের ও বাইরের অংশে এই পেস্টটি প্রয়োগ করুন। পেট্রোলিয়াম জেলি আপনার মলদ্বারকে নরম এবং মসৃণ করে তোলে এবং মলত্যাগ করা সহজ করে তোলে। একই সঙ্গে হলুদ ফুলে যাওয়া এবং ক্ষতস্থান সারিয়ে তোলার সাথে সাথে ব্যথা থেকে আরাম দেয়। -
দেশী ঘি এবং হলুদ:
এক চামচ দেশী ঘিয়ে আধা চামচ হলুদ মিশ্রিত করে একটি পেস্ট তৈরি করুন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে আপনার মলদ্বারের ভিতরে এবং বাইরে অংশে পেস্টটি লাগান। দুই থেকে তিন দিনের জন্য এই কৌশল প্রয়োগ করে অর্শরোগ নিরাময় করা যেতে পারে। -
কালো লবণ আর হলুদ:
কালো লবণের সাথে হলুদ পাউডার মিশিয়ে উষ্ণ জল দিয়ে পান করুন। ছাগলের দুধে হলুদ এবং কালো লবণ মিশিয়ে খেলেও উপকৃত হবেন।মুলো এবং হলুদ:
মুলোটিকে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে নিন। তার ওপর হলুদ ছিটিয়ে দিনে দু’বার বা তিনবার খান। -
দুধ এবং হলুদ:
অর্শরোগের চিকিৎসার সঙ্গে এটির থেকে রক্ষা পাওয়াও প্রয়োজনীয়। প্রতিদিন হালকা গরম দুধে হলুদ মিশিয়ে খান। এটি সংক্রমণ প্রতিরোধ করবে এবং ভাল ঘুমও হবে।
এগুলোও চেষ্টা করুন :-
- বাথটবের মধ্যে হালকা গরম জলে হলুদ ঢেলে ওই জলে উলঙ্গ হয়ে আধ ঘণ্টা বসে থাকুন।
- হলুদ, ঘন দুধ এবং শিরীষের বীজ পিষে মলদ্বারে লাগালে ব্যথা এবং জ্বালা শিথিল করা যাবে।
- একটা বরফের টুকরো একটি পরিষ্কার রুমালে মুড়িয়ে কিছু সময়ের জন্য আপনার মলদ্বারের উপর রাখুন। এর থেকে ব্যথা এবং ফোলা থেকে আরাম পাবেন।
- হলুদ দিয়ে চিকিৎসার সাথে সাথে আপনার খাওয়াদাওয়ারও যত্ন নিন। বেশি পরিমাণে জল খান এবং ফাইবারযুক্ত খাবার খান। দুধে ইসবগুল মিশিয়ে পান করুন। দীর্ঘ সময়ের জন্য একই জায়গায় বসবেন না। রোজকার রুটিনে ব্যায়ামকে যোগ করুন। এছাড়াও, খাবারের মধ্যে জলপাই তেল এবং ঘি অন্তর্ভুক্ত করুন। এছাড়া, নারকেল জল এবং শস্য সহ ডালিম খান। ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন। আপনি উপরে উল্লিখিত প্রতিকার অনুসরণ করে অর্শরোগ নিরাময় করতে পারেন। এইসব পরামর্শ অর্শের চিকিৎসার জন্য কয়েক শতাব্দী ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে।