গঁদ কাটিরার উপকারিতা
গঁদ কাটিরা হল সাদা এবং হলুদ রঙের অত্যন্ত কার্যকর খাদ্য দ্রব্য। এই কটিরা গাছ থেকে বেরিয়ে যাওয়া গঁদ শুকনোর পরে তৈরি হয়। এই কাঁটাযুক্ত গাছটি ভারতের গরম পাথুরে এলাকায় পাওয়া যায়। এটার ছাল কাটলে এবং গাছের ডাল থেকে যে তরল বেরিয়ে আসে ওটাই জমে গিয়ে সাদা এবং হলুদ রঙের হয়ে যায়,এবং এটিকেই গাছের গঁদ বলে। গঁদ কাটিরা ঠাণ্ডা হয়, তাই এটি গরমেই বেশি খাওয়া হয় এবং শীতকালে এটি সেবনের জন্য উপযুক্ত নয়। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ফোলিক অ্যাসিডের মতন পুষ্টি সম্পন্ন উপাদান পাওয়া যায়।
অত্যন্ত কার্যকর
গঁদ কাটিরা শরীরের রক্তকে ঘন করে। এর পাশাপাশি এটা হৃদরোগের জন্যও লাভজনক। এটা টনসিলের মত সমস্যা দূর করে তোলার পাশাপাশি শরীরকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। এটা শরীর থেকে বেরিয়ে আসা রক্তকে বাধা দেয়, শ্বাস জনিত সমস্যা দূর করে, কাশি এবং কফ দূর করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এটার প্রয়োগ বিষের প্রক্রিয়া কমাতেও ব্যবহার করা হয়। প্রস্রাবে জ্বলন, মাসিক স্রাবের পরিমাণ কমানো, হাত-পায়ের জ্বলন, মাথা জ্বালা, খুশকি, অত্যধিক তৃষ্ণার্ত লাগা ইত্যাদি অনেক রোগ দূর করার ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহার করা হয়।
এখানে সুবিধা দেখুন:
- গরম এবং জ্বলন থেকে আরাম প্রদান করেঃ
যদি আপনার হাত ও পায়ের জ্বালার সমস্যা হয়, তবে ঘুমানোর আগে ১ গ্লাস জলে ২ চামচ গঁদ কাটিরা ভিজিয়ে রাখুন। সকালে গঁদ ফুলে গেলে চিনি মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। এটি প্রতিদিন সেবন করলে উপকৃত হবেন। কটিরা লু এবং হিট স্ট্রোক থেকেও রক্ষা করে। শরীরের মধ্যে যদি তাপ অনুভব করেন তবে জলে কটিরা ভেজান এবং ওই জলে আরও মিশ্রী মেশান। শরবতের সঙ্গে কটিরা মিশিয়ে সকালে-সন্ধ্যা এটি পান করুন। এতে শরীরের তাপ দূর হয়।
-
রক্তের সমস্যাগুলি দূর করে:
গঁদ কাটিরায় প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ফোলিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। শরীরের রক্ত ঘন করে তোলে। জলে ১০ থেকে ২০ গ্রাম গঁদ কাটিরা ভিজিয়ে রাখুন এবং ওই জলে মিছরি মিশিয়ে শরবত বানিয়ে সকালে পান করুন। এই শরবত খেলে রক্ত জমাট বাধার সমস্যাও দূর হয়ে যায়।
-
দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে:
দুধ দিয়ে প্রতিদিন কটিরা পান করলে ক্লান্তি, দুর্বলতা, বমি, মাথা ঘোরানো এবং মাইগ্রেনের মত সমস্যাগুলি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অর্ধেক গ্লাস দুধে গঁদ কাটিরা গুঁড়ো করে যোগ করুন এবং মিছরি দিয়ে গুলে দিন। এটি খেলেআমবাত থেকেও ত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
-
মহিলাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী:
ঋতুস্রাবের বৈপরীত্যের কারণে মহিলাদের প্রায়ই ফোলিক এসিড বা রক্তের অভাব হয়ে থাকে। এ ছাড়াও, এটি বাচ্চা হওয়ার পর শারীরিক দুর্বলতা, মাসিকে বিঘ্ন বা লুকরিয়া প্রভৃতি সমস্যার ক্ষেত্রেও উপকারী। গঁদ কাটিরা এবং চিনি একসঙ্গে গুঁড়ো করুন, তারপর এটাকে ২ চামচ কাঁচা দুধের মিশিয়ে খান। এই গদের লাড্ডুও খুব উপকারী।
-
প্রবল ঘাম হওয়ার সমস্যা থেকে বিরত থাকুন:
যাদের অনেক বেশি ঘাম হয়, তারা নিয়মিত গঁদ কাটিরা সেবন করতে পারেন। তাহলে তারা এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।
-
বেদনাদায়ক টনসিল থেকে পরিত্রাণ:
আপনি যদি বেদনাদায়ক টনসিলের সমস্যায় আক্রান্ত হন, তবে আপনি গদ কটিরা ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য ২ অংশ কটিরা এবং ২ অংশ নানখা পিষে নিন। এবার এটাকে ধনে পাতার রস দিয়ে মিশিয়ে গলার উপর প্রয়োগ করুন, এতে পরিত্রাণ পাবেন। এ ছাড়া, প্রায় ১০ থেকে ২০ গ্রাম কাটিরা জলে ভিজিয়ে নিন এবং ফোলার পর চিনি মিশ্রিত করে শরবত বানিয়ে সকালে ও সন্ধ্যায় পান করুন, এতে গলায় খুশখুশ সহ সমস্ত রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।
-
প্রস্রাবরোগের ক্ষেত্রে উপকারিতা:
প্রস্রাবরোগেও গঁদ কাটিরা উপকারী। ১০ গ্রাম থেকে ২০ গ্রাম গঁদ কাটিরা জলে ভিজিয়ে ফোলার পর মিছরি মিশ্রিত করে শরবত বানিয়ে পান করুন।
-
মাইগ্রেনে উপকারী
৪ গ্রাম মেহেন্দি ফুল আর ৩ গ্রাম গোন্ড কটিরা মাটির বাটিতে ভিজিয়ে রেখে দিন। রাতে এটা ভিজিয়ে নিন এবং সকালে মিছরির সাথে মিশিয়ে পান করুন, এটামাথাব্যথা, মাইগ্রেন থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার পাশাপাশি চুল পড়ে যাওয়াও হ্রাস করবে।
-
স্বপ্নদোষ:
স্বপ্নদোষের সমস্যা থাকলে রাতে এক কাপ জলে ৬ গ্রাম গঁদ কাটিরা ভিজিয়ে রাখুন। সকালে এটা ফুলে গেলে এর সাথে ১২ গ্রাম চিনি মিশিয়ে খান। কয়েক দিনের মধ্যেই আপনি এর উপকার বোধ করবেন।