পিত্তথলিতে পাথর বা গল স্টোন প্রতিরোধের ঘরোয়া উপায়
কিছু চিকিৎসক ঘোষণা করেছেন কেউ যদি গলস্টোন অপসারণ করে দেখাতে পারে তবে তারা এক কোটি টাকা দেবে। আসলে এইসব দাবী শুধুমাত্র মানুষদের আয়ুর্বেদ সম্বন্ধে বিভ্রান্ত করার জন্য। এই প্রবন্ধটা আজ তাদের জন্য এবং আশা করি তাদের সুবিধে হবে। এবং আমরা আবার বলব যে যখনই আপনি এটি ব্যবহার করবেন, তখন আপনাকে আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথিক অথবা অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে তা করতে হবে। আয়ুর্বেদ কিন্তু কারো বিরোধিতা করে না।
গলের পাথর হল গল ব্লাডারের অভ্যন্তরের উপাদানগুলির ঘনীকরণের ফলে তৈরি হওয়া গোলাপী পাথরের একটি রোসেট। এই পাথরগুলি গল ব্লাডারের মধ্যে গঠিত হয় তবে তারা কেন্দ্র থেকে দূরে বাইলিয়ারি ট্র্যাক্টের অন্যান্য অংশ যেমন সিস্টিক ট্র্যাক্ট, সাধারণ পিত্তের নল, অগ্ন্যাশয়ের নল বা হেপাটোপ্যানক্রিয়াটিক নলেও পৌঁছতে পারে।
গলের পাথরগুলির উপস্থিতি গুরুতর কোলেসিস্টাইটিস সৃষ্টি করতে পারে, যা গলের পাথরের কারণে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং এটি প্রায়শই অন্ত্রের ক্ষুদ্র অণুজীব দ্বারা সৃষ্ট দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণের সূত্রপাত ঘটায় যাপ্রধানত হল এসচেরিচিয়া কোলাই এবং ব্যাকটিরয়েডস, ইত্যাদি। বাইলিয়ারি ট্র্যাক্টের অন্যান্য অংশে পাথরগুলির উপস্থিতির কারণে, পিত্তের নলগুলির মধ্যে বাধা সৃষ্টি হতে পারে যার জন্য কোলেঞ্জাইটিস বা প্যানক্রিয়াটাইটিসের মতো জটিল রোগ হতে পারে। এই দুটি রোগই প্রাণনাশক হতে পারে অতএব এগুলোকে চিকিৎসার জরুরী অবস্থা হিসাবে গণ্য করা উচিত।
- গলব্লাডারের(পিত্তের থলির)পাথর বের করার প্রাকৃতিক চিকিৎসা - আজ অনেক মানুষ এই রোগে আক্রান্ত এবং ডাক্তাররাও এর চিকিৎসায় খানিক ব্যর্থ। তাই কৃপা করে এই প্রবন্ধ সকলের সাথে ভাগ করে নিন। প্রথমে ৫ দিন রোজ ৪ গ্লাস আপেল জুস(কৃত্তিম টিনের না)আর ৪-৫ টা আপেল খান। ৬ নম্বর দিন সন্ধে ৬টায় এক চামচ বিট লবণ (ম্যাগনেশিইয়ামসালফেট) ১ গ্লাস গরম জল দিয়ে খান। আবার সন্ধে৮টায় আবার এক চামচ বিট লবণ (ম্যাগনেশিইয়ামসালফেট) ১ গ্লাস গরম জল দিয়ে খান। রাত ১০টা বাজলে, অর্ধেক কাপ তাজা লেবুর রসে অর্ধেক কাপ জলপাইয়ের তেল (অলিভ অয়েল) বা তিলের তেলে (সিসেম অয়েল) ভালভাবে মিশ্রিত করে পান করুন। সকালে মলের সাথে আপনি সবুজ পাথর দেখতে পাবেন। শাক, টমেটো, বীট, ঢ্যাঁড়শ খাওয়া চলবে না।
- আপেল জুস আর আপেল সিডার ভিনিগার- আপেলের গলের পাথর গলানোর গুণগত বৈশিষ্ট্য আছে, কিন্তু এটা আরও কার্যকর যখন রস হিসেবে আপেল সিডার ভিনিগারের সাথে খাওয়া। আপেলের মধ্যে থাকা ম্যালিক অ্যাসিডের ধাতু বিগলন বৈশিষ্ট্য আছে যা গলের পাথর নিরাময় করতে সাহায্য করে এবং আপেল সিডার ভিনিগার যকৃতে কলেস্টেরল তৈরি হতে দেয় না যা গলে পাথর গঠনের জন্য দায়ী। এই উপায় শুধুমাত্র গলের পাথর গলায়ই না, পাথর পুনর্গঠিত হতে বাধা দেয় এবং ব্যথাও কমায়। চিকিৎসার জন্য এক গ্লাস আপেলের রসে এক টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনিগার মেশান। এই রস নিয়মিত দিনে দু’বার পান করুন।
- ন্যাশপাতির রস –ন্যাশপাতি আকৃতির পিত্তের থলিকে ন্যাশপাতি দিয়েই পরিষ্কার করা সম্ভব। ন্যাশপাতির মধ্যে উপস্থিত পেক্টিন কোলেস্টেরল গঠন এবং জমা হওয়া থেকে বাধা দেয়। এটিও ন্যাশপাতির বৈশিষ্ট্যগুলির একটি যার অনেক স্বাস্থ্যের উপকারিতা রয়েছে। এক গ্লাস গরম জলে এক গ্লাস ন্যাশপাতির রস এবং দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। এই রস এক দিনে তিনবার পান করা উচিত।
- বীট, পালং, শশা আর গাজরের রস - জুস থেরাপি গলের পাথরের চিকিৎসার জন্য ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে সর্বাধিক ভাবে ব্যবহৃত হয়। বীট, পালং শুধুমাত্র শরীরকে শক্তিশালী করে না বরং গল ব্লাডারকেও পরিচ্ছন্ন করে এবং যকৃতের কোলোনও পরিষ্কার করে। শশায় উপস্থিত অতিরিক্ত জলের পরিমাণ যকৃত এবং গল ব্লাডার উভয়কেই ডিটক্সিফাই করে। এছাড়াও, গাজর ভিটামিন-সি এবং উচ্চ পুষ্টির বৈশিষ্ট্য আছে। একটি বীট, পালং, একটি শসা এবং চারটে গাজর নিয়ে রস প্রস্তুত করুন। এই রসটাকে প্রতিদিন দু’বার পান করুন। মিশ্রিত রসে প্রত্যেকটি সবজি বা ফলের মাত্রা সমান হতে হবে, তাই সবজি বা ফলের সাইজ অনুযায়ী মাত্রা বাড়াতে বা কমাতে হবে।
- পুদিনা - পুদিনা হজমের জন্য সর্বোত্তম ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে বিবেচিত হয়, যা পিত্ত সম্পর্কিত ব্যাল ভাস্কুলার এবং অন্যান্য রস উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে। পুদিনায় টারপেনিস রয়েছে যা পাথর গলানোয় সহায়ক বলে মনে করা হয়। পুদিনা পাতা থেকে তৈরি চা গল ব্লাডারের পাথর থেকে বাঁচাতে পারে। জল গরম করে তাজা বা শুকনো পুদিনা পাতাগুলি সেদ্ধ করুন। হালকা গরম হওয়ার পর, এতে জল যোগ করুন এবং পান করুন। এই চা দিনে দুইবার খেতে হবে।
- খাদ্য এবং দৈনন্দিন কার্যকলাপে পরিবর্তন - প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস জল পান করুন, তৃষ্ণা পাক বা না পাক। চর্বিযুক্ত বা মশলাওয়ালা খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রতিদিন কফি পান করুন। খুব বেশী না কিন্তু এক থেকে দুই কাপ একদিনে যথেষ্ট। এছাড়াও, কফি পিত্তের রসকে বাড়িয়ে তোলে, যা পিত্তে পাথর সৃষ্টি করে না। আপনার খাদ্যে ভিটামিন সি-এর পরিমাণ বাড়ান। প্রতিদিন যতটা সম্ভব ভিটামিন-সি খাওয়া সম্ভব ততটা খাবেন। দয়া করে হিং, কালো মরিচ এবং হলুদকে খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন।