জানুন খাদ্যে বিষক্রিয়া কি?
সাধারণত, খাবার এবং জল আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য শক্তি প্রদান করে, কিন্তু যদি জল এবং খাবার অবহেলিত ভাবে কিংবা নোংরা ভাবে গ্রহণ করা হয় তাহলে এগুলি শরীরকে খারাপও করে দিতে পারে। দূষিত খাবার খেলে ফুড পয়্জেন বা খাদ্যে বিষক্রিয়া নামক রোগ হয়।
খাদ্য বিষক্রিয়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কয়েক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়, কিন্তু শিশু, গর্ভবতী এবং বয়স্কদের মধ্যেযাতে খাদ্য বিষক্রিয়া না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ এর ফলে এদের শরীরে অনেক ক্ষতি হতে পারে। এটি এমন এক রোগ যার চিকিৎসা এক দুদিনে বা এক সপ্তাহের মধ্যে আপনি নিজেই করতে পারবেন। কিন্তু এই রোগ নিয়ে অবহেলা করলে ভবিষ্যতে নানান পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এই রোগের সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান থাকা দরকার, যাতে সময় থাকতে কিংবা এই রোগ হলে আপনি এর থেকে রেহাই পেতে পারেন।
লক্ষণ:
খাদ্য বিষক্রিয়া হলে শরীরে নানান ধরনের রোগের লক্ষণ দেখা যায়। যেমন-
- পেটে খুব যন্ত্রণা শুরু হতে থাকে
- প্রতি ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে বমি হয়
- ঘন ঘন পায়খানা হয়
- খাবার হজম হয় না, কোনো কিছু খাওয়া মাত্রই বমির সাথে বাইরে বেরিয়ে যায়
- মাথা যন্ত্রণা করে
- শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পরে, যার ফলে শরীরে কোনো সার নেই বলে মনে হয়।
খাদ্য বিষক্রিয়া দূষিত খাদ্য পদার্থ গ্রহণ করলে হয়। যেমন-
- বাসি খাবার খেলে খাবার বানানোর সময় বা খাদ্য পদার্থ ধোয়ার সময় নোংরা জল ব্যবহার করলে
- খাদ্য পদার্থকে ঢেকে না রাখলে তার মধ্যে নোংরা মাছি বসে নানান ক্ষতিকারক জীবানু ছড়ায়। এর ফলেও খাদ্য বিষক্রিয়া হয়।
- রাস্তাঘাটে অনেক সময় খাবারের দোকানে মানুষ খাবারের জিনিস গুলিকে ঢেকে রাখে না, যার ফলে প্রথমত রাস্তার ধুলো খাবারে পড়ে, দ্বিতীয়ত মাছি ওই খাবারের ওপর বসে জীবানু ছড়ায়। যখন আমরা সেই খাবার গুলি খাই তখন আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি।
- যদি ঘরে ব্যবহিত করা জলকে ঢেকে রাখা না হয় তাহলে জল দূষিত হয়ে যায়। যখন আমরা ওই জলকে ব্যবহার করি নানান ভাবে, তখন আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি।
- খাদ্য বিষক্রিয়া শুধু মাত্র দূষিত জল বা খাবার খেলে হয় না, যদি নোংরা হাতে খাবার খাওয়া হয় তাহলেও এই রোগ হতে পারে।
সাবধানতা গ্রহণ করুন-
- খাবার বানানোর আগে এবং পরে নিজের হাত ভালো করে ধুন, বিশেষ করে কাঁচা মাংস তৈরির সময়।
- কাঁচা ফল, সবজি দিয়ে রান্না করার আগে বা কাঁচা খাওয়ার আগে ভালো করে তা ধুয়ে নিন।
- খাবার থেকে যতক্ষণ না বিস্ক্রিয়া বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে ততক্ষণ অবধি রান্না করুন। খাবারকে সবসময় পরিষ্কার পাত্রে রাখুন।
- খাবার খাওয়া শেষ হলেই ততক্ষনা বাকি থাকা খাবার ফ্রিজে রেখে দিন।
- এমন খাবার খাবেন না যা অনেকক্ষণ ধরে খোলায় পড়েছিল এবং সেই খাবার থেকে খারাপ গন্ধ বেরোতে শুরু হয়ে গেছে। এছাড়া প্যাকেটের খাবার খাওয়ার আগে ডেট এক্সপায়ার হয়ে গেছে কিনা দেখে নিন।
- শৌচালয় থেকে বেরিয়ে অবশ্যই হাত ধুয়ে নিন। আপনার বাড়িতে যদি কোনো পোষ্য থাকে তাহলে তার গায়ে হাত দেবার পর হাত ধুয়ে নিন।
- ভ্রমণের সময় নিজের সাথে বাড়ির তৈরী গরম এবং তাজা খাবার নিয়ে যান। ঠান্ডা এবং কাঁচা খাবার সেই সময় রাখবেন না, যদি না সেটার খোলা ছাড়িয়ে খেতে হয় যেমন কলা।
যেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেবেন-
- সবসময় ভালো দোকান থেকে খাবার খান। সবসময় অচেনা এবং পচা ফল এড়িয়ে চুলুন। যদি প্যাকেটের খাবার হয় তাহলে সব সময় তার এক্সপায়ারি ডেট দেখে খাওয়া উচিত।
- যদি শাক সবজির মধ্যে পোকা দেখতে পান তাহলে সেটি ব্যবহার করবেন না।
- যে খাবারকে আপনি জমাবেন সেগুলি কেনাকাটি করার সময় একদম শেষে কিনবেন যাতে বাড়ি গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ফ্রিজে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়।
এখানে কিছু প্রতিকার দেওয়া হল যা আপনাকে খাদ্য বিষক্রিয়ার সমস্যা থেকে দ্রুত রেহাই দেবে।
- যতটা সম্ভব তরল পদার্থ পান করুন, যেমন- জল, জ্যুস বা ফলের রস ইত্যাদি। এতে শরীরে তরল পদার্থের মাত্রা সঠিক রাখা যাবে।
- মদ, দুধ এই সব তরল পদার্থ ত্যাগ করার চেষ্টা করুন।
- নরম খাদ্য পদার্থ খাওয়া শুরু করুন, যেমন- ভাত, কলা ইত্যাদি।
- মশলাদার খাবার, তৈলাক্ত জাতীয় খাবার, দুগ্ধজাত পদার্থ, ফ্যাট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
- আপনি খাবারের সাথে প্রোবায়োটিকস গ্রহণ করা শুরু করুন, প্রোবায়োটিক্স অন্ত্রে ভাল ব্যাকটেরিয়াকে ফিরিয়ে আনে এবং এর ফলে আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। তুলসী, জিরে, মৌরি,ধনে ইত্যাদি খাদ্য বিষক্রিয়া হলে গ্রহণ করা শুরু করুন।
- যতটা সম্ভব আরাম করুন।
মনে রাখবেন, যদি এই সাবধানতা গ্রহণের পরে এবং এই উপায় গুলি ব্যবহারেরপরেও আপনি খাদ্য বিষক্রিয়া থেকে রেহাই না পান তাহলে তখন ডাক্তার দেখাবেন।