টেস্টিসের সমস্যা কি ?
ঈশ্বর এই পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে প্রজনন ক্ষমতা দিয়েছেন, যাতে তারা নিজেরা নিজেদের মতো করে জনসংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারেন । উভয় পুরুষ এবং মহিলাদের তাদের নিজস্ব আলাদা প্রজনন সিস্টেম আছে। এবং যখন কোনো পুরুষ এবং মহিলা, উভয় পরস্পরের সাথে মিলন ঘটে তখন উভয়ের প্রজনন ক্ষমতার বিনিময়ে একটা নতুন জীবনের জন্ম হয়। তাই আজ আমরা পুরুষদের প্রজনন সিস্টেমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ সম্পর্কে কথা বলব। যা আমরা টেস্টিকলস বা অণ্ডকোষ হিসাবে জানি।
অন্ডকোষ বা টেস্টিস, পুরুষদের গোপন অংশে থাকা এক রকমের থলি। গোল বা উপবৃত্তাকার দুটি অন্ডকোষ পুরুষদের এই থলির মধ্যে থাকে। এই অন্ডকোষ লক্ষ লক্ষ শুক্রাণু বা স্পার্ম তৈরী করে ও সেগুলিকে সুরক্ষিত রাখে। এ ছাড়া, তারা টেস্টোস্টেরোন হরমোনও তৈরি করে, যা এমন একটি হরমোন যার থেকে পুরুষরাশুক্রাণু উৎপাদন করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও টেস্টোস্টেরন, পুরুষদের পেশী এবং চুলের জন্য অপরিহার্য। এমনকি এটি ম্যানকুলাইন হরমোন বা পুরুষালি হরমোন হিসেবেও পরিচিত। অনেক রকম কারণে অন্ডকোষ বা টেস্টিসে ব্যাথা হতে পারে কিন্তু সেটা নিয়ে আলোচনা করার আগে আমরা এটা জানবো যে অন্ডকোষ বা টেস্টিসের ব্যথা আসলে কি ?
টেস্টিকুলার ব্যথা কি ?
টেস্টিকুলার ব্যথা এমন এক ধরণের ব্যাথা, যা পুরুষদের একটা বা দুটো অন্ডকোষের মধ্যেই হতে পারে। এই ব্যথা কখনও কখনও টেস্টিকেলস নিজের থেকেই তৈরী হয়, অথবা কখনও কখনও ব্যথা অন্য পরিস্থিতির মধ্যেও সৃষ্টি হতে পারে। আপনার অন্ডকোষ থলির মধ্যে কোনো রকম অস্বস্তিকর অনুভূতি বা আপনার পেটে কোনো অস্বস্তিকর অনুভূতি থেকেও আপনার টেস্টিকেলস-এ ব্যাথার সৃষ্টি হতে পারে। টেস্টিকেলস এর ব্যথা কম সময়ের জন্যও হতে পারে আবার কখনো কখনো এই ব্যথা দীর্ঘমেয়াদিও হয়ে থাকে। এমনিতেতো অনেক কারণেই এই যন্ত্রণা হয় সম্ভব,কিন্তু টেস্টিকেলস এ ব্যথা হলে তা কি কারণে হচ্ছে সেটা সবার আগে জানা খুব জরুরি কারণ কিছু সময় এমন কিছু কারণে এই ব্যথার সৃষ্টি হয় যার জন্য তৎক্ষণাৎ চিকিৎসার অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায় আপনার টেস্টিকেলস চিরকালের জন্য খারাপ হয়ে যেতে পারে।
চলুন আমরা আজ আমাদের টেস্টিকেলসের মধ্যে ব্যথা হওয়ার কিছু সাধারণ কারণগুলোকে নিয়ে আলোচনা করি..
- ব্যথা লাগা: অন্ডকোষ খুবই সংবেদনশীল এবং খুব সহজেই এর ক্ষতি করা যায়। যদি এর ওপর হালকা করেও কোনো রকম ভাবে চাপ পড়ে, তাহলে ব্যথা হতে পারে। এমনকি অনেক সময়, অনেকদিন আগে লেগে যাওয়া কোনো চোটও কিছুদিন পরে তার প্রভাব ফেলতে পারে ও ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে।
- ইনগুইনাল হার্নিয়া: এটি গ্রোইং হার্নিয়া নামেও পরিচিত। এটির কারণ হলো, কখনো কখনো আপনার ছোট্ট অন্ত্রের কিছু অংশ আপনার অন্ডকোষের আসে এবং ব্যথা ও ফোলার সৃষ্টি করে। সাধারণত এই ধরণের হার্নিয়া ভারী জিনিস ওঠানোর জন্য হতে পারে। তাছাড়া যারা জিম করেন, তাদের জন্য জিম করার সময় সঠিক জাঙ্গিয়া ব্যবহার করা খুবি জরুরি। যারা প্রায়শই ভারী ওজন তুলে থাকেন, তাদের মধ্যে বেশির ভাগ পুরুষেরাই এই ধরণের হার্নিয়ার শিকার হয়ে থাকেন।
- তোরাশন: এই অবস্থায়, আপনার শুক্রাণু কর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে রক্তক্ষরন বা রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এটি গুরুতর ব্যথার কারণ। এটি সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা না হলে, আপনার অন্ডকোষ চিরদিনের মতো খারাপ হয়ে যেতে পারে।
- এপিডিডিমাইটিস এর সমস্যা: এপিডিডিমাইটিস হল এক ধরণের নালীর মতো হয় যা আপনার দুটি টেস্টিক্যালসের পিছনের দিকে থাকে। এপিডিডিমাইটিসের সময় টেস্টিক্যালসের মধ্যে জ্বালাভাব বা ফোলাভাব সৃষ্টি হতে পারে। এপিডিডিমাইটিসের সময় জ্বালা হওয়ার অনেক কারণ হতে পারে যেমন, ব্যথা লাগা, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, যৌন সংক্রমণ, যা আমরা এসটিডি হিসাবে জানি। এপিডিডিমাইটিসসাধারণত ১৮ থেকে ৩৬ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে বেশি পাওয়া যায়।
- ওরচিটিস বা অণ্ডকোষের প্রদাহ: এই রোগে, আপনার টেস্টিকেলস - এ জ্বালা শুরু হয়, যা ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাল সংক্রমণ দ্বারা সৃষ্ট হয়। এই জ্বালা একটি বা উভয় টেস্টিসের মধ্যে ঘটতে পারেএবং এটি টেস্টিকেলসের মধ্যে প্রদাহ এবং ব্যথার সৃষ্টি করে। এবং এটি বেশিরভাগ সময়ে ৪৫ এবং তার বেশি বয়সী পুরুষদের মধ্যে দেখা যায়।
- অন্যান্য ব্যাধি: পুরুষদের শরীরে থাকা অনেক অন্যান্য ব্যাধিও অন্ডকোষে ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে।যেমন উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে,ডায়াবেটিস নেফ্রোপ্যাথির কারণে অন্ডকোষের স্নায়ুর ওপর প্রভাব পড়তে পারে এবং তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।এমনকি এর থেকে যন্ত্রণার সৃষ্টিও হতে পারে।এর পাশাপাশি, ক্ল্যামিডিয়া যেমন যৌন সংক্রামিত রোগগুলি অন্ডকোষের ব্যথারকারণ হতে পারে।
এই ধরণের যন্ত্রনার হাত থেকে বাঁচার জন্য কিছু উপায় নিচে আলোচনা করা হল:
- সঠিক আরাম নেওয়া: অন্ডকোষে ব্যাথা ও ফোলার কারণ জেনে যাওয়ার পর, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো সঠিক আরাম নেবেন এবং এমন কোনো কাজ করবেন না যা আপনার অন্ডকোষে কোনোরকমভাবে চাপ সৃষ্টি করবে।
- বরফ ব্যবহার করুন: আইস পেইন্টিং বা বরফের ব্যবহার, একটি খুব কার্যকর চিকিৎসা। বরফের একটি টুকরো, একটি রুমাল বা তোয়ালেতে আবৃত করে, যদি ব্যথার জায়গায় এক বা দু-ঘণ্টা অন্তর অল্প সময়ের জন্য প্রয়োগ করা যায় , তাহলে বেদনাদায়ক অবস্থা থেকে সহজেই আরাম পাওয়া যেতে পারে।
- সঠিক মাপের জাঙ্গিয়ার ব্যবহার: সব সময় সঠিক মাপেরআন্ডারওয়্যার বা নাপি বা জাঙ্গিয়ার ব্যবহার করুন। এটি টেস্টিকলেস এর বেদনাদায়ক অবস্থায় আরাম দেয় এবং ব্যথার থেকে বাঁচার জন্য সাহায্য করে।
- ভারী ওজন ওঠাবেন না: যদি আপনার অন্ডকোষেকোনো রকম ব্যথা আছে, মনে রাখবেন যে ভারী ভারী ওজন ওঠাবেন না এবং প্রয়োজন হলে, আপনার কাছের মানুষের সাহায্য নিন। এতে টেস্টিকেলস এর উপর চাপ পরবে নাএবং ব্যথা বাড়বেও না উল্টে সময়ের সাথে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- ব্যথা না লাগা: ব্যথা লাগা, অন্ডকোষের যন্ত্রণার একটা অন্যতম কারণ হিসেবে পরিচিত। সেই জন্য, অন্ডকোষে যাতে ব্যথা না লাগে সেই চেষ্টা করা দরকার। খেলাধুলো করার সময় প্রয়োজনে গার্ড বা সঠিক কাপ ব্যবহার করুন।
- সঠিক সময়ে চিকিৎসা: এপিডিডিমাইটিস, পাথারী এবং সংক্রমণে, আপনার ডাক্তারের দ্বারা প্রদত্ত, ব্যায়ামকারী ওষুধ এবং অ্যান্টিবায়োটিক গুলির নিয়মিত ব্যবহার করুন। এটা করলে ব্যথা কমতে পারে এবং তাড়াতাড়ি সেরে যেতে সাহায্য করতে পারে।
- সঠিক খাওয়া দাওয়া: এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন যেটাতে কোলেস্টরলের পরিমাণ কম এবং চেষ্টা করুন প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়ার। এতে আপনার ব্যথা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
- লিঙ্গের সুরক্ষা: এসটিডি টেস্টিকুলার রোগ একটি প্রধান কারণ এই ধরণের ব্যথার। অতএব, সবসময় নিরাপদ যৌন সংসর্গ তৈরি করুন।
- আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসা: এইসব ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসা খুবই উপকারী। এই ধরণের যে কোনো রকমের সমস্যার সমাধানে আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসা খুবই কার্যকরি। আয়ুর্বেদীয় মতে হলুদের লেপ যদি অন্ডকোষের ওপর লাগানো হয় তাহলে অন্ডকোষের ফোলা ভাব অনেকটাই কমতে পারে। আদার রসের সঙ্গে মধু মিশ্রিত করে পানকরলে এই যন্ত্রণা থেকে আরাম পেতে পারেন। এছাড়াও টমেটো, শিলা লবণ এবং আদার স্যালাড এই ধরণের কষ্টের হাত থেকে বাঁচার জন্য খুবই উপকারী।
+1.svg)
