পাতলা বীর্য – এটা কি স্বাভাবিক?
বেশিরভাগ পুরুষই এটা নিয়ে চিন্তা করেন যে তার বীর্য পাতলা নাকি গাঢ়। মজার ব্যাপার হ’ল এরকম কোনও পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়নি যা প্রমাণ করতে পারবে যে বীর্যের ঘনত্বর সাথে উর্বরতার আদৌ কোনও যোগাযোগ আছে কি না। পরীক্ষা করার জন্য বীর্যের ন্যুনতম পরিমাণ হ’ল ৩.৭ মি.লি. এমনকি ১.৫ মি.লি.-র কম হলেও তাকে স্বাভাবিক ধরা হয়। অর্থাৎ, এর মানে দাঁড়াচ্ছে যে এক চা-চামচ বীর্যও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ধরা হয়।
এটা লক্ষ্য করা জরুরি যে যখন আপনি যৌন উত্তেজনা অনুভব করেন তখন আপনার লিঙ্গের ভেতর থেকে একটি তরল নির্গত হয় – আপনার লিঙ্গের একদম ডগা থেকে এটি বেরিয়ে আসে। এটা কিন্তু বীর্য নয়। এটা বীর্যপাতের আগে বেরোয় এবং এটাকে ‘প্রিকাম’ বলা হয় যা কাউপার গ্রন্থি থেকে নির্গত হয়। যৌন-ক্রিয়ার সময়ে তৈলাক্তকরণের জন্যে এটা ভীষণ জরুরি। অনেকে এটাকে পাতলা বীর্য ভাবেন কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই এতে শুক্রাণু থাকে না।
বীর্যের ঘনত্ব কোন কোন জিনিসে প্রভাবিত হয়?
আপনি কি কি খাচ্ছেন তার ওপর আপনার বীর্যের ঘনত্ব নির্ভর করে। অর্থাৎ, আপনার খাদ্যাভ্যাসে যদি যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন বা জরুরি পরিপোষক না থাকে তবে আপনি পাতলা বীর্য লক্ষ্য করবেন। প্রোটিন আপনার বীর্যকে ঘন করতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও, যদি আপনি প্রায়শই বীর্যপাত করেন তবে আপনার বীর্যের ঘনত্বে আপনি তফাত দেখতে পাবেন। সাধারণত অণ্ডকোষে শুক্রাণু তৈরি হয়ে পরিণত হতে কয়েক মাস লাগে। অর্থাৎ, আপনি যদি দিনে বহুবার হস্তমৈথুন করেন বা যৌন-ক্রিয়ার ফলে আপনার বীর্যপাত হতে থাকে তবে আপনার অণ্ডকোষে যথেষ্ট বীর্য থাকবে না। এই ক্ষেত্রে বীর্যের কমতির কারণে বীর্য পাতলা হয়ে যেতে পারে।
যদিও এটা সবসময় ঠিক নয় যে অল্প শুক্রাণুর কারণেই বীর্যের ঘনত্ব পাতলা হয়ে যাবে। আপনাকে এটা মনে রাখতে হবে যে অনেক কারণই বীর্যের ঘনত্বে প্রভাব ফেলতে পারে।
যদি আপনার অণ্ডকোষ উচ্চ তাপমাত্রায় থাকে তবে শুক্রাণু সম্পূর্ণ-ভাবে তৈরি হওয়া থেকে অণ্ডকোষ বিরত থাকবে। ছোট অথবা আঁটসাঁট জামাপ্যান্ট পরার কারণে আপনার শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
মূল বক্তব্য হ’ল এই যে পাতলা বীর্য দেখে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়ার সেরকম কোনও কারণই নেই। যদিও আপনার বীর্য সবসময় যদি পাতলা হয় এবং বীর্যপাতের সময়ে যদি আপনি ব্যথা অনুভব করেন, তবে আপনি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এই বিষয়ে আপনাকে হয়তো ‘জেনিটোইউরিনারি মেডিসিন ক্লিনিক’-এ যেতে হতে পারে।
বীর্যে কি কি বদল দেখে চিন্তিত হওয়া উচিত
- বীর্যের গন্ধে যদি পরিবর্তন আসে তবে বুঝতে হবে হয়তো কোনও সমস্যা আছে। বীর্যপাতের সময়ে ক্লোরিনের মতো কোনও গন্ধ আপনি পেতে পারেন, কিন্তু যদি আপনার কোনোরকম সংক্রমণ থেকে থাকে তবে বীর্য থেকে খারাপ গন্ধ বেরোতে পারে।
- একজন পুরুষ কতটা বীর্য নির্গত করবে তা ব্যক্তি-বিশেষে নির্ভর করে কিন্তু প্রতি বীর্যপাতের সময়ে কতটা বীর্য নির্গত হচ্ছে সেই ব্যাপারে আপনার ধারণা থাকা উচিত। আপনি যদি লক্ষ্য করেন যে স্বাভাবিকের চেয়ে পরিমাণ কমে যাচ্ছে, হতে পারে বীর্য নির্গত হওয়ার নালীতে কোনও বাধা রয়েছে।
- ‘সেমিনাল ফ্লুয়িড’ যদি কমে আসতে শুরু করে হতে পারে এটা এমন একটা অবস্থা যার নাম ‘রেট্রোগ্রেড ইজাকুলেশন’। এই ক্ষেত্রে বীর্য বাইরের দিকে বেরনোর বদলে থলিতে ফেরত চলে যায়। এই সমস্যা দেখা দিতে পারে যদি কারও ‘প্রস্টেটিক ইনফেকশান’ বা ডায়াবেটিস থাকে অথবা কোনও বিশেষ ওষুধ খাওয়ার ফলেও এমনটা হতে পারে। আপনার বীর্য ঘন হয়ে যেতে পারে যদি আপনার শরীর নিরুদিত হয়ে যায়। যদিও এটা একটি ক্ষণিকের অবস্থা। ঘন বীর্য নিয়ে আপনাকে তখনই চিন্তিত হতে হবে যখন বীর্য জমাট বাধা অবস্থায় নির্গত হবে। এটা তখন হয় যখন টেস্টোস্টেরন মাত্রা অতিরিক্ত কম হয়ে যায়। যদি এই অবস্থা বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতেই থাকে তাহলে একবার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকারি।
বীর্যের ঘনত্বের চেয়ে বীর্যের রঙ-এর দিকে খেয়াল করা কেন বেশি দরকারি?
আপনাকে জানতে হবে যে বীর্যের রঙ আসলে ঘিয়ে-সাদা বা সাদা রঙের হয়। ৩০ মিনিটের মধ্যেই বীর্য আরও তরল ও পরিষ্কার হয়ে যাওয়া উচিত। যদি রঙে কোনও পরিবর্তন দেখতে পান, তার মানে নিশ্চয়ই গুরুতর কিছু সমস্যা রয়েছে। যদি বীর্যের রঙ লালচে হয়ে যায় তার মানে প্রস্টেটের কোনও সমস্যা আছে।
কখনও বাদামি বা উজ্জ্বল লাল রঙের বীর্যও দেখতে পাওয়া যায়। এটার মূল কারণ হ’ল প্রস্টেটে কোনও ধমনী ছিঁড়ে যাওয়া। আপনার বীর্যের রঙ কয়েকদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু যদি ঠিক না হয় তবে আপনার শীঘ্রই ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত কারণ বীর্যের সাথে রক্ত বের হওয়া কোনও ট্রমা, সংক্রমণ এমনকি ক্যান্সারেরও লক্ষণ হতে পারে।
সবজে বা হলদেটে বীর্য সাধারণত সংক্রমণের ইঙ্গিত দেয়। যদি সবুজ বা হলদেটে বীর্যপাত হয় তবে হতে পারে এটি একটি সংক্রমণের জন্য হচ্ছে যার নাম গনোরিয়া। গনোরিয়া একটি যৌন সংক্রামক ব্যাধি। অ্যান্টি-বায়োটিক খাওয়ার দরকার পড়তে পারে এমন অবস্থায়, তাই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।