রাতে বাতকর্ম ও তাদের নিয়ন্ত্রণ করার কয়েকটি উপায়:
প্রকৃতির নিয়মের বাইরে কেউ নয়। গড়ে একটি মানুষ দিনে ১৪ বার বাতকর্ম করে থাকেন। এমনিতে যে কোনো মানুষ এই পরিস্থিতি কে এড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু রাতের বলা যদি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারেন তাহলে এটি তাদের কাছে খুবই লজ্জার একটি বিষয় হয়ে ওঠে এবং তারা নিজেকে খুবই অসহায় বলে মনে করেন।
মানুষ এই পরিস্থিতির থেকে বাঁচার জন্য অনেক সময় বিভিন্ন রকমের ওষুধের ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু সত্যি কথা বলতে গেলে, এই ধরণের চেষ্টা করা বেকার । অনেক মানুষ মলদ্বারে বাট স্ট্রিপগুলি ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করেন, যাতে এই ধরণের অবস্থা থেকে রেহাই পাওয়া যায় , কিন্তু এগুলি ব্যবহার করা অত্যন্ত বিপজ্জনক কারণ এগুলি মলদ্বার প্রদাহের পথকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং গুরুতর ভাবে স্বাস্থ্যের জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।
রাতের বেলা বাতকর্মের কারণ কি?
রাত্রে ঘুমের সময়, মানুষের শরীরটি সম্পূর্ণরূপে শিথিল হয় এবং এটি তার সমস্ত উত্তেজনা পরিত্যাগ করার জন্য সচল হয়ে ওঠে এবং এটি বাত কর্মের উপায়ে সেই সব উত্তেজনাকে দূর করে দেওয়ার চেষ্টা করে। নিয়মিত বাতকর্মের পিছনে কারণ হলো খাওয়ার সময় বেশি পরিমানে বায়ু খরচ করা। এই বায়ুতে বিভিন্ন ধরনের গ্যাস রয়েছে, যা রাসায়নিক ভাঙ্গন এবং পাচন প্রক্রিয়ার সময় অন্যান্য গ্যাসগুলির সাথে প্রতিক্রিয়া করে।যেহেতু কোনো বায়ু আমাদের শরীরে স্থায়ী হতে পারে না, সেই জন্য এগুলি রাতে বাতকর্মের রূপে বাইরে বের হতে থাকে। মানুষ যখন ঘুমিয়ে পরে তখন তার শরীরের সব পেশী ঘুমের সময় শিথিল হয় এবং ফুসকোজিগেস পেশী এই রকম পেশির ব্যতিক্রম নয়। যদিও এটা খুবই প্রচলিত এক রকমের শারীরিক সমস্যা এবং এর জন্য মানুষের ব্যক্তিগত দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব পড়তে পারে।
রাতের বেলা অতিরিক্ত বাতকর্মের প্রকোপ থেকে কিভাবে বাঁচবেন?
- সঠিক সময়ে সঠিক খাদ্য: খাদ্য আমাদের শরীরের পাচন ক্ষমতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস যা নির্ধারণ করে যে আমাদের পেটে ঠিক কতটা পরিমাণ বায়ু তৈরী হবে। বেশ কিছু খাবার রয়েছে যা বেশি গ্যাস উৎপাদনের জন্য পরিচিত যেমন প্রিন্স, মটর, ব্রোকলি, পেঁয়াজ, রসুন, কলা, শাকসব্জী এবং বিভিন্ন ভাজা খাবার ইত্যাদি। এই সব খাবারের মধ্যে ফাইবার সামগ্রী উচ্চ মাত্রা রয়েছে, যার ফলে এগুলি আমাদের শরীরে ফ্ল্যাটুলেন্স মাত্রা বাড়াতে পারে। আপনি যদি ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু হন, তবে দুগ্ধজাত পণ্যগুলি আপনার পেটে বেশি গ্যাস সৃষ্টি করে যা রাতে বাতকর্মের রূপে বহিষ্কৃত হয়। বিছানায় শুতে যাওয়ার আগে সঠিক খাওয়ার ফলে পাচক সিস্টেমের অত্যধিক উদ্দীপনা ঘটে যা আমাদের মলদ্বার দিয়ে গ্যাস হিসেবে বের হতে পারে। আপনি যদি এরম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তাহলে আপনার রাতে শুতে যাওয়ার কম পক্ষে ৪ ঘন্টা আগে রাতের খাওয়ার খেয়ে নেওয়া উচিত।
- বাতকর্ম আটকানোর চেষ্টা করবেন না: আরেকটি উপযোগী পরামর্শ হলো, বাতকর্ম কখনো আটকানোর চেষ্টা করবেন না। সারা দিন ধরে আপনি যদি অল্প অল্প বায়ু বের করতে থাকেন তাহলে রাতের বেলা অতিরিক্ত বাতকর্মের হাত থেকে আপনি রেহাই পেতে পারেন। যদিও এটি অযৌক্তিক বলে মনে হতে পারে, তবুও অনেকেই তাদের স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলি বুঝতে পারেন না এবং লজ্জার কারণে সারাদিন ধরে বাতকর্ম আটকানোর চেষ্টা করেন।
- পেটের ওপর চাপ দিয়ে শোবেন না: যদি আপনি রাত্রে অতিরিক্ত বাতকর্মের শিকার হচ্ছেন তাহলে পেটের ওপর চাপ দিয়ে শোয়া বা উপুড় হয়ে শোয়া এড়ানোর চেষ্টা করবেন। কারণ, এই ধরণের শোয়া, আপনার পেটের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে ও বায়ু নির্গতকে ত্বরান্বিত করবে।
- প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে: এটি আপনার কাছে অবাস্তব হিসেবে শোনাতে পারে, কিন্তু সারা দিন ধরে আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করেন তাহলে তা শরীরের যাবতীয় ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করতে সাহায্য করে, তাছাড়া গ্যাসগুলিকে স্থির করে রাতের বাতকর্মের সমস্যার অসুবিধেকেও হ্রাস পেতে সাহায্য করবে। বাতকর্ম, যদিও বিব্রতকর। সেই জন্য উল্লিখিত টিপস গুলি অনুসরণ করলে আপনি এই বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আর তা যদি আপনি না পারেন, বিরক্ত বোধ করবেন না। শুধু যেমন চলছে তা চলতে দিন। আপনার যদি কোনো উদ্বেগ বা প্রশ্ন থাকে তবে আপনি সর্বদা একজন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করতে পারেন এবং আপনার প্রশ্নের উত্তর পেতে পারেন।