কোষ্ঠকাঠিন্য জন্য তাৎক্ষণিক প্রতিকার
শিশুদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য ঘরোয়া প্রতিকার:-
কঠিন খাদ্যের জন্য শিশুরা সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য ভোগ করে। জলের অপর্যাপ্ত পান, ফর্মুলা দুধ এবং ল্যাকটোজ-অসহিষ্ণুতা শিশুদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ। কোষ্ঠকাঠিন্য ভোগ করছে এমন একটি শিশুকে শান্ত করা খুবই কঠিন। ছোট্ট শিশুরা নিজেদেরকে সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারে না তবে আপনি সহজেই তাদের অসংযত কান্না এবং পেট ব্যাথার থেকে সহজেই বুঝতে পারেন; যে তারা কোষ্ঠকাঠিন্যের শিকার।
এখানে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য কিছু ভারতীয় ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে:-
- কিশমিশ:
রাতে জলে ৪-৫ টুকরো কিশমিশ ভিজিয়ে নিন। সুগন্ধযুক্ত আঙ্গুরের রস বের করে নিন এবং আপনার শিশুকে দিন।এটা খুব দ্রুত নির্গমনে সাহায্য করে। শুকনো লাল আঙ্গুর কোষ্ঠকাঠিন্যে ,সবুজ আঙ্গুরের তুলনায় অনেক বেশীভাল।
-
কাস্টর তেল:
মায়ের দুধের সাথে কয়েকটি ফোঁটা কাস্টরের তেল মিশ্রিত করুন এবং শিশুকে এটিকে খাওয়ান। এটি উষ্ণ জলের সাথে দেওয়া যেতে পারে। এই ডোজটি শিশুকে কোষ্ঠকাঠিন্য অব্যাহতি না হওয়া পর্যন্ত দিনে একবার করে দিতে হবে।
-
পালং ও ভাত:
পালং এর রস এবং চাল, অল্প পরিমাণ সবুজ ডালের সাথে রান্না করুন। একটি পৃথক পাত্র নিন এবং কিছু তেল নিয়ে ডাল, পালং এবং ভাত মিশ্রণটিকে এই পাত্রটির মধ্যে রাখুন এবং কয়েক মিনিটের জন্য কম আঁচে রান্না হতে দিন।এটা শিশুদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য খুব কার্যকর প্রতিকার।
-
কমলালেবুর শরবত:
গ্রীষ্মকালে, জল এবং পাতলা কমলালেবুর রস মিশ্রিত করুন। এই মিশ্রণটি কোষ্ঠকাঠিন্যের পরিত্রাণের সেরা উপায়। শীতকালে, শুধুমাত্র বিকেলে মিশ্রণ এই পান করুন।
গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য জন্য ঘরোয়া প্রতিকার:
গর্ভবতী মহিলাদের কোষ্ঠকাঠিন্য খুবই সংবেদনশীল।তারা ক্রমাগত কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায় চিন্তা করে।গর্ভাবস্থায় ফ্লাটুলেন্স, গ্যাস এবং অম্লতার সমস্যা খুব সাধারণ। গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রধান কারণ হল হরমোনাল পরিবর্তন। দেহে লোহার পরিমান বৃদ্ধি,খাদ্য ও পানীয় হ্রাসের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে।
এখানে গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য কয়েকটি ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে:
- তরমুজ:
কিছু তরমুজ বীজ এবং বীজ নির্যাসের সঙ্গে চা যোগ করুন , মিশ্রণটি পান করে নিন। তরমুজ বীজ ও চা কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম করতে সাহায্য করে।
-
ব্যায়াম:
নিয়মিত ব্যায়াম কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করতে সাহায্য করতে পারে। তবে, কোন কঠিন ব্যায়ামের জন্য যথেষ্ঠ যত্ন নেওয়া উচিত এবং সেই ব্যায়াম আপনার জন্য নিরাপদ কিনা তাও দেখে নিতে হবে।
-
নারকেল তেল:
প্রতিটি খাবারের আগে এক টেবিল চামচ নারকেলের তেল খাদ্যকে নরম করতে এবং আন্ত্রিক আন্দোলনকে সহজতর করতে সহায়তা করে।
-
যোগ-ব্যায়াম:-
যোগ-ব্যায়াম কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করতে সাহায্য করতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি শেখানো হয় যা জন্ম দেওয়ার সময় সহায়ক।এই ব্যায়ামগুলি কোষ্ঠকাঠিন্যর ক্ষেত্রে সহায়ক। ৯০ ডিগ্রীর কোণে হাঁটু ধরে রাখা,অন্ত্রকে নির্মূল করতে সহায়তা করে। আরেকটি ভঙ্গি সত্যিই খুবই সহায়ক যেটিকে বায়ু নিস্কাসন ভঙ্গি বলা হয়। এই ভঙ্গি শুধুমাত্র কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম করতে সাহায্য করে না, এটি গ্যাস চলাচলেও সহায়ক।
গর্ভবতী মহিলারা প্রায়শই প্রস্রাব করার প্রয়োজন বোধ করতে পারে। তারা কখনই একে এড়াতে পারে না, যতবার প্রয়োজন ততবার ওয়াশরুম ব্যবহার করুন। যখন আপনি টয়লেট সীটের উপরবসবেন,তখনশুধু আপনার পেলভিক পেশী শিথিল করুন। এটি মূত্রাশয়কে সম্পূর্ণরূপে খালি করতে সহায়তা করবে এবং এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্যকে মুক্ত করতে সাহায্য করবে।
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যর জন্য ঘরোয়া প্রতিকার:
'কোষ্ঠকাঠিন্য পরিত্রাণ -র উপায়'- এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে, প্রথমে কোষ্ঠকাঠিন্যের পিছনের কারণ খুঁজে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। হাইপোথাইরয়েডিজম, কোলোন ক্যানসার, পার্কিনসন রোগ, অনুপযুক্ত খাদ্য, অনিয়মিত মলের অভ্যাস এবং জলের অভাব, চাপ এবং শারীরিক ব্যায়ামের অভাব, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ।
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য এখানে কয়েকটি ভারতীয় ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে:
- আমলা পাউডার:
শোয়ার আগে প্রতিদিন জলের সাথে এক চামচ আমলা পাউডার নিন, এটা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।
-
লেবুর রস:
এক গ্লাস উষ্ণ জল নিন,তাতে এক চা চামচ লেবুর রস এবং লবণ যোগ করুন। এটি খালি পেটে সকালে পানকরুন,লবণের তৈলাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য এবং লেবুর পরিষ্কারকরণ বৈশিষ্ট্য ছাড়াও এটি অন্ত্র খালি করতে সাহায্য করবে।
-
শণবীজ:
কয়েকটি তিলের বীজ,২-৩টি সূর্যমুখী বীজ এবং কয়েকটি বাদামের সূক্ষ্ গুঁড়ো তৈরি করুন। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরিত্রাণ পেতে এই মিশ্রণ এক টেবিল চামচ করে দৈনন্দিন নিন।
-
পেয়ারা:
পেয়ারা কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম করতে সাহায্য করতে পারে, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবারথাকে।
-
ঘি ও দুধ:
এক গ্লাস গরম দুধ নিন এবং এতে একটি চামচ ঘি যোগ করুন। আপনি শোয়ার আগে এটি প্রতি রাতে পান করুন। এটিকোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য একটি প্রাচীন ঘরোয়া প্রতিকার।
-
মেথী বীজ:
কয়েকটি মেথী বীজ রাতে ভিজিয়ে নিন এবং সকালে এই জল পান করুন। এটিকোষ্ঠকাঠিন্যউপশম করতে সাহায্য করতে পারে,এটি একটি খুবই কার্যকর ভারতীয় ঘরোয়া প্রতিকার।
-
ইসবগুল (সিলিয়াম হাস্ক):
এটি কোষ্ঠকাঠিন্য তাৎক্ষণিক মুক্তির সবচেয়ে ভাল উপায় । আপনি যদি দিনে ১ বা ২ এর বেশি সময়ের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য ভোগ করে থাকেন, তাহলে ইসবগুল আপনার জন্য আদর্শ। এক গ্লাস উষ্ণ দুধের মধ্যে ১-২ টি ইসবগুল মেশান এবং এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ঘুমাতে যাবার সময় পান করুন। এটি কেবল কোষ্ঠকাঠিন্যকেই উপশম করবে না, এটি আপনার আন্ত্রিক আন্দোলনগুলিকে নিয়মিতকরণে সহায়তা করবে।