ভোজন করার পরে সাথে সাথে চা পান করা উচিত না অনুচিত?
একজন চা প্রেমীর জন্য, এক কাপ চায়ের থেকে বেশি সন্তোষজনক আর কিছুই হতে পারে না। সুখ বা দুঃখ, চাপ বা আনন্দ, সবকিছুর উত্তর এবং স্বর্গীয় আনন্দদেয়, এক কাপ চা। অতিরিক্ত চা এর প্রতি আসক্তি আছে এমন মানুষদের, সাধারণভাবে খাবারের পরে চা পান করার অভ্যাস থাকে। যদিও অনেকে এটিকে খুবই সাধারণ আসক্তি বলে মনে করেন, কিন্তু কিছু বিশেষজ্ঞ আছেন যারা এই অভ্যাসকে স্বাস্থ্যকর বলে মনে করেন। তাহলে সত্য কি? খাওয়ারের পর চা খাওয়া কি তাহলে ঠিক নাকি যেটা আমরা ভাবি সেটা সত্যি নয়! এই প্রবন্ধটি তে আমরা ঠিক এই বিষয়টি নিয়েই আজ আলোচনা করবো।
কিছু রিপোর্ট বলে যে চা খাওয়া, বিশেষ করে গ্রীন টি বা খাবারের পরে অন্য কোনও হার্বাল চা খাওয়া একটি ভাল অভ্যাস হতে পারে। গ্রীন টি তার উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পলিফেনল কন্টেন্টরজন্য পরিচিত হয়ে থাকে।
- যখন খাবারের পরে গ্রীন টি বা ভেষজ চা খাওয়া হয়, তখন এটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করে যা হজম প্রক্রিয়াতে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন ধরণের উৎসেচক উৎপাদন করে যেমন গ্যাস্ট্রিক রস, লালা ইত্যাদি।
- ক্যাটচিন (পলিফেনলিক যৌগ), গ্রীন টিতে উপস্থিত, এমন একটি সক্রিয় যৌগ যাপ্রচুর পরিমাণে পেপসিন কার্যকলাপকে বাড়িয়ে তোলে এবং একটি বর্ধিত পেপসিন, খাদ্যতালিকাগত প্রোটিন গুলিকে ভালোভাবে ভাঙতে নির্দেশ করে।
- গ্রীন টির মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি এলান এর সঙ্গে যুক্ত অনেক জটিলতা জনিত পাচক প্রক্রিয়ার সঙ্গেমোকাবেলা করতে পরিচিত। এমন কি, গ্রীন টি একটি কার্যকর পাচক উদ্দীপক বলে মনে করা হয়। এটি অন্ত্রের গ্যাসের পাশাপাশি অনিয়মিত বোলেল সিনড্রোমের শর্তাবলী (যেমন আলসারেটিক কোলাইটিস এবং ক্রোনের রোগ) থেকে পড়িত্রাণ সরবরাহের জন্য পরিচিত।
- গ্রীন টি বা অন্যান্য যে কোনো ভেষজ চা, খাদ্য পাচনে ও খাদ্য পুষ্টি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
উল্লেখিত পয়েন্টগুলি খাবারের পরে চা (প্রধানত গ্রীন টি বা ভেষজ চা) খাওয়ার সুবিধাগুলিকে প্রতিফলিত করে, অন্য দিকে আরো অনেক কিছু রয়েছে। অনেক মানুষ এমন ও আছেন যারা গ্রীন টি পছন্দ করেন না। যদিও, যখন আমরা খাওয়ারের পর চা খাওয়ার উপকারিতা বা অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করছি, তখন শুধুমাত্র গ্রীন টি বা ভেষজ চা নিয়ে কথা বললে হবে না।
চা এর মধ্যে উপস্থিত ট্যানিন অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
- এই ট্যানিন শরীরের লোহা, দস্তা এবং ক্যালসিয়াম সহ অনেক খনিজ পদার্থের মধ্যে হস্তক্ষেপ করে (শোষণকে ধীর করে)। সুতরাং, ফল অনুসারে শরীরে এই সব পদার্থের কমতি ঘটতে পারে এবং সেই সাথে বিভিন্ন ধরণের অসুবিধের সৃষ্টি হতে পারে।
- কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এই ট্যানিন, কোষ্ঠকাঠিন্যের সৃষ্টি করতে পারে।
সুতরাং, যেসব মানুষেরা, এমনিতেই এইসব সমস্যা নিয়ে ভুগছেন তাদের জন্য খাওয়ারের পর বা মাঝে চা না খাওয়াই ভালো।
চায়ের মধ্যে আরেকটি উপাদান উপস্থিত যার নাম হলো ক্যাফিন:
- বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত, যে বেশি মাত্রায় ক্যাফিন শরীরে প্রবেশ করলে রাতে ঘুমের অসুবিধে পারে যাকে সাধারণত আমরা অনিদ্রা বাইনসোমনিয়া বলে থাকি।
- যারা এমনিতেই স্টমাক আলসার নিয়ে ভুগছেন তাদের জন্য ক্যাফিন খুবই বিষাক্ত এবং এর সেবন, এই ধরণের স্টমাক আলসার এর রোগকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- ক্যাফিন, মানুষের রক্ত চাপ বৃদ্ধিতেও অত্যন্ত কার্যকর এবং এটি হৃৎস্পন্দনকে ত্বরান্বিত করতেও যথেষ্ট কার্যকর।
উপরে আলোচিত সমস্ত রকম বিশ্লেষণ (চা পানের উপকারিতা ও অপকারিতা) থেকে আমরা এটাই জানতে পারলাম যে, খাওয়ার সাথে সাথে বা খাওয়ার মাঝে চা পান না করে ভালো। তবুও যদি আপনি নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চান তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।