সার্ভিকাল ব্যথা বা বেদনার প্রতিকার
আজকাল এমন অনেক ধরণের রোগ দেখা গিয়েছে যা কিছু দিন আগে অবধি রোগ হিসাবে গণ্য করা হত না।কিন্তু এখন সেগুলি বেশ বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে যেমন জয়েন্টের ব্যাথা, ব্যাক পেইন, সার্ভিকাল ব্যথা ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা বেশ যন্ত্রণাদায়ক পর্যায় দাঁড়িয়েছে। এগুলি যারা দেখেন তারা বুঝতে পারেন না আবার যারা এই ব্যথা সহ্য করে তারা এই ব্যথার প্রকাশ করতে পারে না। যাদের এই ব্যথা হয় না তাদের জন্য এই সমস্যা কিছুই মনে হয় না, কিন্তু যারা এই ব্যথায় ভুগতভুগি তাদের জন্য এই অবস্থার মধ্যে দিয়ে প্রত্যেক মিনিট কাটানো খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই আজকে আমরা এই সার্ভিকাল রোগের সম্পর্কে আলোচনা করব।
আমরা সার্ভিকাল ব্যথা বলতে পারি। এই সমস্যা যে কোন মানুষের সাথেই ঘটতে পারে। আজকের যুগে অনিয়মিত রুটিনের কারণে, প্রায় প্রত্যেক তৃতীয় ব্যক্তির মধ্যে এই সার্ভিকালের সমস্যা দেখা যায়।নিকৃষ্ট ভঙ্গিতে বসলে, ঝুঁকে বসে থাকলে, এক ভাবে বসে থাকলে এবং আরও অন্যান্য কারণের ফলে এই রোগের সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু আমরা এই সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় জানি না। তাই আজকে আমরা সার্ভিকাল রোগের কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্বন্ধে আলোচনা করব।
সার্ভিকাল ব্যথার কারণ
- ভুল অবস্থানে ঘুমানোর জন্য সার্ভিকাল ব্যথা বাড়ে।
- ভারী ওজন উত্তোলনের কারণে সর্বাধিক মানুষের মধ্যে সার্ভিকাল ব্যথা থাকে।
- ঘাড় খুব দীর্ঘ রাখাও সার্ভিকাল ব্যথার কারণ হতে পারে।
- দীর্ঘ সময়ের জন্য একই জায়গায় বসে থাকলে সার্ভিকাল ব্যথা শুরু হয়।
- উঁচু এবং বড় কুশন বা বালিশ ব্যবহার করলেও সার্ভিকাল ব্যথা উৎপন্ন হয়।
- মোটর সাইকেল চালানোর সময় ভারী ওজনের হেলমেট পরলে এই ব্যথা শুরু হতে পারে।
- ভুল পদ্ধতিত বসা এবং ঘুমানোর কারণে এই ব্যথা শুরু হতে পারে।
সার্ভিক্যাল পেন এর লক্ষণ
- মাথা ব্যাথা
- ঘাড় সরানোর চেষ্টা করার সময়, ঘাড় থেকে হাড়ের শব্দ আসা।
- হাত, আঙ্গুল বা অন্য অঙ্গে দুর্বলতা মনে হওয়া।
- হাত ও পায়ের দুর্বলতা এবং ভারসাম্য হ্রাসের কারণে হাঁটতে সমস্যা
- ঘাড় এবং কাঁধ শক্ত
বন্ধুরা, প্রতিটি রোগের জন্য চিকিৎসা জগতের কাছে সব উপায় থাকে। কিন্তু সেই ওষুধগুলো প্রায়শই নানান ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে এবং তার সাথে টাকাও খরচ হয় অনেক। তাহলে আমরা কিছু ঘরোয়া উপায় চেষ্টা করি, যেগুলি ব্যবহার করে আমাদের পূর্বপুরুষরা ডাক্তারদের থেকে দূরে ছিল।
ঘাড়ে ব্যথার প্রতিকারের ঘরোয়া উপায়
সঠিক ভাবে ঘুমান- বেশির ভাগ সময় আমরা উঁচু নরম বালিশে বা বিছানায় ঘুমনো পছন্দ করি। কিন্তু এটা সার্ভিকাল ব্যথার কারণ তাই সবসময় শক্ত বিছানায় ঘুমানোর চেষ্টা করুন। উঁচু বালিশ ত্যাগ করাই ভাল। মেঝেতে মাথা দিয়ে শোয়াই ভাল। কিংবা মাথাকে বালিশের থেকে সর্বাধিক ১৫ ডিগ্রি পর্যন্ত ব্যবধানে ঘুমনোর চেষ্টা করুন। পিঠের ওপর চাপ দিয়ে ঘুমোবেন না। এতে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। এতে আপনি ব্যথা থেকে রেহাই পেতে পারেন এবং যাদের সমস্যা নেই তাদের এই ব্যথা কোনদিনই হবে না।
গরম বা ঠাণ্ডা সেক- ব্যথা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ঠাণ্ডা বা গরম কোন বস্তু দিয়ে প্রভাবিত জায়গায় সেক দিন। দিনে এক বারের বদলে ক্রমাগত সেক দিতে থাকুন এতে আপনি তাড়াতাড়ি আরাম পাবেন।
মালিশ- মালিশ করাতে বহু মানুষ ভালবাসেন এবং এতে যেকোনো ব্যথা থেকে তৎক্ষণা আরাম পাওয়া যায়। যাদের সার্ভিকাল ব্যথার সমস্যা রয়েছে তারা প্রভাবিত এলাকায় মালিশ করাতে পারেন।
বেশি পরিমাণ জল পান করুন- জলই জীবন এমনই বলা হয় না। আমাদের শরীরের সর্বাধিক ওজন জলের কারণে হয় এবং শরীরের বেশিরভাগ কাজের জন্য জল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদার্থ। শরীরের হাড় গুলি জুড়ে রাখতে জল খুব সাহায্য করে। তাই যতটা সম্ভব বেশি জল পান করুন।
চিন্তা এড়িয়ে চলুন – আপনার হয়তো শুনতে অদ্ভুত লাগবে কিন্তু এটা সত্যি যে বেশি চিন্তার কারণেসার্ভিকাল ব্যথা হয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষের রোগের মূল কারণ হল চিন্তা। তাই রোগ মুক্ত থাকলে গেলে আপনাকে চিন্তামুক্ত থাকতে হবে।
রুটিন মাফিক জীবন কাটান- একটি ভাল রুটিন অনুসরন করলে জীবন কাটানো অনেক সহজ হয়ে যায়। তাই আপনার দৈনন্দিন জীবনে সঠিক খাবার এবং ব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত করুন। যদি আপনি সারাদিন খুব খাটুনিযুক্ত কাজ করেন তাহলে শরীরকে সঠিক আরাম দিন।
ব্যায়ামের অভ্যাস রাখুন – প্রতিদিন কিছু ছোট ব্যায়ামের সাথে,কিছু প্রসারিত ব্যায়াম সহ করুন যেগুলি আপনার ব্যথা প্রভাবিত জায়গা গুলিকে আরাম দেবে। প্রসারিত ব্যায়াম সঞ্চালন করলেশরীর এবং ঘাড়েড় পেশী এবং সার্ভিকাল ব্যথা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
প্রয়োজনীয় অভ্যাস
- সার্ভিক্যাল ব্যথার কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার জানার সাথে সাথে আপনাকে কিছু খারাপ অভ্যাসও ত্যাগ করতে হবে এবং কিছু ভাল অভ্যাস গ্রহণ করতে হবে।
- বেশি ভারি ওজনের বস্তু চাগাবেন না।
- ব্রজাসন, চক্রাসন এবং মতসাসন ছাড়াও, ঘাড় ঘোরানোর কোন ব্যায়াম করুন।
- প্রতিদিন সূর্যোদয়ের আগে উঠে কমপক্ষে ৩ কিলোমিটার দ্রুত হাঁটুন।
- আপনি অফিসে দীর্ঘ সময়ের জন্য একই অবস্থানে বসবেন না, প্রতি ঘণ্টা বিরতি নিয়ে কথা বলার অভ্যেস করুন।
- আপনি যদি গার্হস্থ্য ভদ্রমহিলা হন তবে দীর্ঘ ঘুমাবেন না এবং গার্হস্থ্য কাজগুলির মধ্যে সামান্য বিরতি নেওয়ার মাধ্যমে শিথিল হন।
- মেঝে উপর বসুন।
- মনে রাখবেন এগুলি ব্যথাগুলির জন্যপ্রাথমিকসমাধান তবে যদি আপনি ব্যথা থেকে মুক্তি পান না তবে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।