লোমফোঁড়ার চিকিৎসা
ত্বকের অন্যান্য সমস্যার মধ্যে অন্যতম হল লোম ফোঁড়া। লোম ফোঁড়াও ত্বকের সংক্রমণের একটি প্রকার। এই সংক্রমনে সর্ব প্রথম ত্বক সংক্রমিত হয়ে লাল হয়ে যায় এবং সেখানে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। এই ফুসকুড়ি চার থেকে সাত দিনের পড়ে সাদা হতে থাকে। এর পড়ে এতে মুখ হতে শুরু হয়। লোমফোঁড়া সাধারণত মুখে, ঘাড়ে, বগলে, কাঁধে এবং পাছায় হয়। কিন্তু যখন এই ফোঁড়া চোখের পাতার ওপর হয় তখন তাকে আঞ্জনী বলা হয়। যদি এক সাথে অনেক ফোঁড়া হয়, তাহলে জানতে হবে এটা গম্ভীর সংক্রমণ হয়েছে। আসুন লোমফোঁড়ার প্রতিকার সম্পর্কে জানি।
যখনই এই ধরণের সমস্যা হবে তখন তাকে নিয়ে অবেহেলা করবেন না। সংক্রমিত সব জামা-কাপড়, বিছানা এবং গামছা সব কিছু ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করুন। এই সময় যতটা সম্ভব সুস্থ্ থাকার চেষ্টা করুন। যদি সংক্রমণ খুব গম্ভীর হয় তাহলে আপনার চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিৎ। কিন্তু যদি শুরু দিকের আপনি ঘরে উপস্থিত সব সামগ্রীর সাহায্য নেন তাহলে ব্যথা এবং সমস্যা উভয় থেকেই রেহাই পাবেন। এর প্রতিকারে সব সময় এটা খেয়াল রাখতে হয় যে এই সংক্রমণ থেকে কিভাবে জীবাণু দূর করা যায়। এর কিছু ঘরোয়া প্রতিকার আমরা এখানে জানালাম-
- রসুনের সাহায্যে
রসুনের অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিমাইকোবায়াল এবং রোগ প্রতিরোধের গুন লোমফোঁড়ার প্রতিকারের জন্য খুব সহায়ক। এর জন্য আপনাকে দু-তিন খোয়া রসুনের পেস্ট বানিয়ে ফোঁড়ার ওপর লাগাতে হবে। এক টুকরো রসুন গরম করে দিনে ১০ মিনিট করে বার বার ফোঁড়ার ওপর লাগান।
-
গরম কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করুন
যখন লোমফোঁড়া হয়, তখন এর ব্যথাকে কম করার জন্য এবং ফোঁড়ার মধ্যে রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর জন্য ফোঁড়ার ওপর গরম কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করা সবচেয়ে সহজ উপায় হয়। এর জন্য গরম জলে একটা কাপড় ভিজিয়ে ১০ মিনিটের জন্য ফোঁড়ার ওপর রাখুন। দিনে তিন থেকে চার বার এই প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করুন।
-
আটার রুটির সাহায্যে
আটার রুটি লোমফোঁড়ার প্রতিকারের জন্য খুব ভালো ঘরোয়া প্রতিকার। এক টুকরো রুটি গরম দুধ বা জলে ভিজিয়ে কিছু মিনিটের জন্য ফোঁড়ার ওপর লাগালে, এতে ফোঁড়ার মুখ বের করে এবং ফোলা কম করে।এছাড়া ওই এলাকায় শ্বেত রক্ত কণিকাকে পৌঁছাতেও সাহায্য করে। যার ফলে সংক্রমণ কম হয়।
-
কালো জিরের তেল
কালো জিরের তেল লোমফোঁড়ার সাথে বিভিন্ন প্রকার ত্বকের সংক্রমণের প্রতিকার হিসাবে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রাকৃতিক উপাদান। এতে কালো জিরের ঔষধের গুণ কাজে আসে। এটি ফোঁড়ার ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এর জন্য কালো জিরেকে বেটে পেস্ট বানিয়ে নিয়ে প্রভাবিত এলাকায় লাগান। এছাড়া এক কাপ গরম বা ঠাণ্ডা পানীয়র মধ্যে অর্ধেক চামচ কালো জিরের তেল মিশিয়ে দিনে দুবার খেতেও পারেন।
-
চা পাতার তেল
এর মধ্যে জীবাণুনাশক, অ্যান্টিফ্যাঙ্গাল এবং অ্যান্টিসেস্পটিক গুণও বর্তমান থাকে। এটি নিয়মিত ব্যবহার করে আপনি ফোঁড়ার ব্যথা কম করতে পারবেন। কিন্তু এটি প্রয়োগ করার সময় খেয়াল রাখবেন যে এটি ত্বকের ভিতরে ঢুকেতে না পারে।
-
মিল্ক ক্রিম
মিল্ক ক্রিমের সাহায্যে লোমফোঁড়ার চিকিৎসা করা যায়। এর ব্যবহার করা হয় ফোঁড়ার চিকিৎসায় দ্রুততা আনার জন্য এবং ব্যথা কমানোর জন্য। এর জন্য, এক কাপ গরম দুধে তিন চামচ লবণ মিশিয়ে নিন, এরপর তাতে অর্ধেক আটার রুটি মিশিয়ে নিন। এরপর এই মিশ্রণটি প্রভাবিত এলাকায় লাগান। দিনে কয়েকবার এই প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করুন। এছাড়া আপনি এক চামচ মিল্ক ক্রিমের সাথে হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে ফোঁড়ার ওপরে সরাসরি লাগাতে পারেন।
-
হলুদের পেস্ট
হলুদের মধ্যে ঔষধের গুণ থাকায় এটি অনেক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এই এক প্রাকৃতিক রক্ত শোধক এবং অনুত্তেজক রুপে ফোঁড়ার চিকিৎসায় সাহায্য করে। এর জন্য এক গ্লাস দুধে বা জলে এক চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। এটিকে দিনে তিন বার করে চার-পাঁচ দিন ধরে পান করুন। এছাড়া আপনি আদা এবং হলুদ সম পরিমাণ নিয়ে একটা মিশ্রণ বানিয়ে নিন এবং সেটিকে ফোঁড়ার ওপর লাগিয়ে কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন। এতেও লাভ পাওয়া যায়।
-
মকাইয়ের আটা
খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত মকাইয়ের আটা প্রয়োগ করতে পারেন। ফোঁড়ার চিকিৎসার জন্য এটি খুব ভালো প্রাকৃতিক উপায়। অর্ধেক কাপ ফোটানো জলে মকাইয়ের আটা মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে ফোঁড়ার ওপর লাগান এবং কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন। এটি ততক্ষন অব্ধি করুন যতক্ষন না পর্যন্ত ফোঁড়া নরম হয়ে মুখ বেড়িয়ে যাচ্ছে।
-
পিঁয়াজ
পিঁয়াজ আমরা দৈনন্দিন জীবনে খাবারের জন্য ব্যবহার করি। কিন্তু আপনাদের বলি দিই যে পিঁয়াজের মধ্যে অ্যান্টিসেপ্টিক গুণ রয়েছে যা লোম ফোঁড়ার চিকিৎসার ক্ষেত্রে খুব উপযোগী। এর জন্য এক বড় টুকরো পিঁয়াজ কেটে ফোঁড়ার ওপর রেখে দিন, তারপর সেটাকে কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন। কিছু সময়ের মধ্যে ফোঁড়া পেকে যাবে এবং তাতে মুখ বেড়িয়ে যাবে। দিনে ৩-৪ বার এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে আরাম পেতে পারেন।