শিশুদের কাশির চিকিৎসাঃ
কাশি হল সবচেয়ে খারাপ রোগগুলির মধ্যে একটি। কাশি যদি গুরুতর ভাবে হয় তবে স্বাস্থ্যকর, স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিও ক্লান্ত হয়ে পড়েন। শরীরের প্রতিটি অংশে ব্যথা অনুভব করতে থাকেন। কারণ এটি শুধু গলাকে প্রভাবিত করে না, এটি বুক, হাত, পা সহ সব জায়গাতেই প্রভাব ফেলে। বড়রা, নিজেদের কষ্ট এবং রোগের চিকিৎসা করিয়ে নিতে পারবেন, কিন্তু, চিন্তার ব্যাপার যে এই সব ক্ষেত্রে শিশুদের কি হবে! কারণ তারা বলতে পারে না বা তারা নিজেদেরকে সাহায্য করতে পারে না। অতএব, এটি গুরুত্বপূর্ণ যে শিশুদের কাশি এবং তার চিকিৎসার জন্য ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে আমাদের সম্পূর্ণ জ্ঞান থাকা দরকার।
মিউকাস বাইরে বেরিয়া আসার কারণে অথবা গলা বা শ্বাসনালীর মধ্যে প্রদাহের জন্য সাধারণত শিশুদের কাশি হয়।কাশির অনেক কারণ থাকতে পারে, কিন্ত সাধারণত সর্দি ও ঠাণ্ডা লাগা বা ফ্লু এর উপসর্গ রূপেই একে দেখা হয়। সুতরাং, আমরা প্রায়ই ওষুধের সাহায্য নিয়ে থাকি। কিন্ত আপনার এটা জানা থাকা উচিত যে, ঠান্ডা লাগা, সর্দি, কাশি এই ধরনের রোগ থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য পরিত্রাণের ঘরোয়া পদ্ধতির অনুসরণ করা উচিত। স্বাভাবিকভাবে এই রোগগুলির প্রাকৃতিক উপায়ে নিরাময় করার প্রচেষ্টা করাই ভাল, কারণ পাশ্চাত্য বা অ্যালোপ্যাথি ওষুধগুলির অনেক রকমের নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া চিকিৎসার সাথে সাথেই থেকে যায়। অতএব আজকে জানা যাক যে বাচ্চাদের কাশি এবং তা থেকে ত্রাণ লাভের জন্য কিছু ঘরোয়া প্রতিকার।
কাশির কারণ--
- সর্দি ও ঠান্ডা লাগাঃ
যদি সর্দি ও ঠান্ডা লাগার কারণে আপনার শিশুর কাশি হয়, তাহলে এর সাথে সাথেই তার নাক বন্ধ, সর্দি, গলা চুলকানি, চোখ জ্বালা দেওয়া, জ্বর জ্বর ভাব ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। জানবেন, ঠান্ডা লাগার জন্য সৃষ্ট অতিরিক্ত শ্লেষ্মা নিষ্কাশনের জন্যই আপনার শিশু কাছে।
-
ফ্লুঃ
ফ্লুের উপসর্গ ঠান্ডা এবং সর্দি, কাশীর অনুরূপ দেখতে পাবেন। আপনার শিশুর ফ্লু হলে, তার জ্বর, ফুসকুড়ি এবং কখনও কখনও ডায়রিয়া বা বমি হতে পারে। কিন্তু ফ্লু দ্বারা সৃষ্ট কাশি ঠান্ডা লাগা থেকে সৃষ্ট কাশি থেকে ভিন্ন হবে। এ ক্ষেত্রে সুদি সহ কাশি নয় বরং শুকনো কাশি হবে। এর অর্থ হচ্ছে আপনার বাচ্চার কাশির সাথে খুব সামান্য পরিমাণ শ্লেষ্মা নির্গত হবে।
-
সংক্রমণঃ
যদি শিশুর সংক্রমণ হয়ে থাকে তবে শিশুটির কাশী হতে পারে। শিশুদের শ্বাসনালী আপনার শ্বাসনালীর তুলনায় সংকীর্ণ এবং ছোট হয়ে থাকে। অতএব, এটি যখন ফুলে ওঠে তখন শিশুদের শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। এই সমস্যা মূলত ছয় মাস থেকে তিন বছরের মধ্যের শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে। সংক্রামক কাশীর ক্ষেত্রে প্রচন্ড শব্দের সাথে কাশী বেরিয়ে আসে। যা প্রায়ই রাতে শুরু হয়।
-
কালো কাশিঃ
কালো কাশি বা কুক্কর কাশি একটি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণ। এটা বেশ সংক্রামক। কালো কাশি খুব বেশী পরিমাণে শুকনো কাশি হয়ে থাকে সাধারণত। এতে প্রচুর জীবাণু থাকে, এবং যখন কাশির সাথে সাথেই শ্বাস নিতে গেলে জোরে শব্দ হয়।
-
হাঁপানিঃ
কাশির ফল স্বরূপ হাঁপানিও হতে পারে। অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগের সময় স্বাসকষ্ট হয়। তাদের বুকে কষ্ট হয় এবং শ্বাসের ঘাটতি অনুভূত হয়।
-
টিউবারকুলোসিসঃ
অনেকদিন ধরে হয়ে চলা কাশি টি.বি.-এর লক্ষণ হতে পারে। সাধারণত টি.বি.-এর কাশি দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলে। টি.বি. রোগে আক্রান্ত শিশুর কাশি থেকে রক্ত বের হতে পারে, শ্বাস নেওয়া কঠিন হতে পারে এবং ক্ষুধা কমে যেতে পারে। শিশুর জ্বর ও থাকতে পারে।
শিশুদের কাশির জন্য ঘরোয়া প্রতিকার--
- গরম তরল খাদ্য পান করানঃ
শিশুদের ঠাণ্ডার পরিবর্তে গরম জল পান করান এবং চেষ্টা করুন যাতে অন্য খাদ্যবস্তু উষ্ণ অবস্থাতেই খাওয়াতে পারেন। এতে আপনার শিশ গলার ব্যাথা থেকে আরাম পাবে।
-
বাষ্প বা ভেপোরাব ব্যবহার করুনঃ
ভেপোরাব আপনার ২ বছর বয়সী সন্তানের কাশীর ক্ষেত্রে দ্রুত উপশম প্রদান করে। এই জাদু মিশ্রণে থাকে মেন্থল, কর্পূর এবং ইউক্যালিপটাস মত জিনিস, যা আপনার সন্তানের আরাম দিতে পারে।
-
শিশুকে শোয়ানোর সময় তার মাথা উঁচু করে রাখুনঃ
শিশুদের ক্ষেত্রে সর্দি নাক থেকে গলা পর্যন্ত চলে আসতে পারে, যার ফলে গুরুতর কাশি হয়। শরীরের এমন ভঙ্গিমা অসুস্থতার উপশম করতে পারেনা, বরং তাকে বাড়িয়ে তোলে। অতএব, শিশুকে শোয়ানোর সময় তার মাথা উচ্চ অবস্থানে রাখা থাকলে তা তার অসুস্থতার উপশমে সহায়তা করবে এবং অসুস্থতা বাড়িয়ে তুলবে না।
-
হলুদ থেকে সাহায্য পানঃ
গরম দুধের সাথে অর্ধেক চামচ হলদ গুঁড়ো যোগ করুন এবং আরও ভাল ফল পেতে এই পানীয় উষ্ণ অবস্থাতেই পান করান। অথবা আবার, ঐ পানীয়ের মধ্যে এক চিমটি গুঁড়ো হলুদ এবং লবণ মিশিয়ে আপনার সন্তানকে দিয়ে গার্গেল করানোর চেষ্টা করুন।
-
মধু ব্যবহার করুনঃ
রাতে শুকনো কাশি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য, শিশুকে গরম দুধে মধু মিশিয়ে পান করান।
-
আদাঃ
এক কাপ জলে আদার টুকরা দিয়ে মিশ্রণটিকে ফোটাতে থাকুন যতক্ষণ না পর্যন্ত তা অর্ধেক হয়ে আসছে। এর মধ্যে এক চামচ পরিমাণ মধু দিয়ে শিশুকে পান করান।
-
তুলসীঃ
তুলসীর পাতার রস করে বাচ্চাকে খাওয়ান।
-
আঙুরের জাদুঃ
দ্রাক্ষালতা প্রাকৃতিক ভাবে কফ তোলার ক্ষেত্রে কার্যকর হয় এবং তারা আপনার ফুসফুস থেকে কফ মুছে ফেলে। এই ফলের রসে মধু মিশিয়ে ঘুমের আগে একটু একটু করে শিশুকে এই রস পান করান।
-
অ্যালোভেরাঃ
বয়স্ক হোক বা শিশু, কাশির ক্ষেত্রে, অ্যালোভেরার রস এবং মধুর মিশ্রণ বেশ কার্যকর হয়।