আমলা গুঁড়োর উপকারিতা

প্রকৃতি আমাদের এমন কিছু জিনিস উপহার স্বরূপ দিয়েছে যা, না আমাদের পেট ভরায় ,না মশলা হিসেবে আমাদের রান্নার স্বাদ বৃদ্ধি করে। কিন্তু এগুলি ঔষধি গুণে ভরপুর হয় ,যা আমাদের ভুলভাল খাবার খাওয়ার অভ্যাস,অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। এইরকম একটি উপাদান হলো

আমলা।

আমলায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। এটি পটাশিয়াম, কার্বোহাইড্রেট ,ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ,ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। আমাদের প্রায় সকলেরই বাড়িতে আমলা পাউডার আচার জুস প্রভৃতি রকম প্রকারভেদে পাওয়া যায় এবং আমলার সব থেকে বড় সুবিধা এই যে এর গুণাগুণগুলি সমস্ত প্রকারেই বর্তমান।তবে আমলার গুঁড়োটিই সাধারণত বহুল প্রচলিত কারণ এটি বাড়িতে তৈরি করা যায় এবং অনেকদিন ধরে রাখতে সুবিধা হয়।এর অপর একটি কারণ হল, অন্য যেকোনো উপায়ের থেকে এটি তুলনামূলকভাবে সহজলভ্য এবং কম ব্যয়বহুল। যদিও গুনাগুন প্রদানে অন্যগুলির থেকে কোনও অংশে কম নয়। আমলার চুর্ণের সুবিধার একটি দীর্ঘ তালিকা রয়েছে ,যার থেকে আমরা আজ কিছু সম্পর্কে জানব।

শরীরের বিভিন্ন অংশে আমলার উপকারিতা-

• মেটাবলিজম-

  আমলা মেটাবোলিক ক্রিয়া-কলাপ বাড়াতে সহায়তা করে। মেটাবলিক ক্রিয়া-কলাপের ফলে শরীর সুস্থ এবং সুন্দর হয়।আমলা খাবার হজমে সাহায্য করে। প্রাত্যহিক জীবনে চাটনি, মোরব্বা ,চবনপ্রাস বা পাউডাররূপে আমলা গ্রহণ করা উচিত। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করতে সাহায্য করে এবং বদহজম, গ্যাসের সমস্যা প্রভৃতি নিরাময় করতে সাহায্য করে। এটি অম্ল সমস্যারও সমাধান করে।

• ডায়াবেটিস-

  আমলায় ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ক্রোমিয়াম পাওয়া যায়। আমলা ইনসুলিন হরমোনকে শক্তিশালী করতে এবং রক্তে চিনির পরিমাণে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ক্রোমিয়াম বিটা ব্লকার এর প্রভাব ক্রাশ করে যা হৃৎপিণ্ড সুস্থ ও সবল করে তোলে। আমলা খারাপ কোলেস্টেরল সারিয়ে ভালো কোলেস্টেরল তৈরিতে সাহায্য করে।

• ঋতুস্রাব সমস্যা-

  আমলার দ্বারা মহিলাদের ঋতুস্রাব সম্পর্কিত অনেক সমস্যা যেমন অত্যধিক রক্তপাত,শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, পেটে ব্যথা ইত্যাদি নিরাময় করা যেতে পারে। আসলে আমলায় প্রচুর পরিমাণ খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন পাওয়া যায় ,যা আপনাকে এই সব সমস্যা থেকে আরাম দিতে সাহায্য করে।

• প্রজনন সমস্যা-

  আমলা প্রজননের সময়কালে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে প্রমাণিত। আমলার সেবনে পুরুষের শুক্রাণুর মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং মহিলাদের মধ্যে সুস্থ ডিম্বানু গঠনে সহায়তা করে ।এছারাও নিয়মিত মাসিকের জন্য এটি সহায়তা করে।

• হাড় মজবুত করতে-

  আমলার সেবনে হাড় মজবুত ও শক্তিশালী হয় ।এর দ্বারা অস্টিওপোরেসিস এবং আর্থারাইটিস রোগে আরাম পাওয়া যায়।

• মানসিক চাপ থেকে মুক্তি-

  আমলার সেবনে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি এবং ভালো নিদ্রা পাওয়া যায়। আমলার তেল মাথায় প্রয়োগ করলে বর্ণান্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।এটি মাথা ঠান্ডা রাখে এবং আরাম প্রদান করে ।অতএব আপনার দৈনন্দিন জীবন যাপনে আমলা পাউডারকে অবশ্যই রাখুন।

• হৃৎপিণ্ডজনিত সমস্যা-

  আমরা আমাদের হৃদপিন্ডের মাংসপেশী গুলির জন্য খুবই ভালো ।আমলা রক্তের সুস্থতা প্রদান করে ‌।আমলা হূদরোগে বাধা সৃষ্টি করে।ভালো কোলেস্টেরল তৈরিতে সাহায্য করে এবং এতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যা রেডিক্যাল তৈরিতে বাধা দেয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রুপে অ্যামিনো অ্যাসিড এবং পেটিনিন পাওয়া যায় ,যা কোলেস্টরেল তৈরিতে বাধা দেয় এবং হৃদপেশীগুলিকে শক্তিশালী করে তোলে।

• চোখ-

  আমলা চুর্ণ চোখের জন্য খুবই লাভজনক আমরা চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। আমলার সেবন বর্ণান্ধতা অথবা চোখের যে কোন সমস্যায় আরাম প্রদান করে। এছাড়া চোখের ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে।

• সংক্রমণ রক্ষায়-

  আমলার ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্ষমতা রয়েছে এবং এটি আমাদের বহিরাগত রোগ থেকে রক্ষা করে ।আমলা শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে।এটি ইমিউন সিস্টেমকে বাড়িয়ে তোলে এবং বিষাক্ত বস্তু কে আমাদের শরীর থেকে দূরে রাখে। আমলা আলসার পেটের সংক্রমণ প্রভৃতি রোগ নির্মূল করে। আমলার রস বা পাউডার প্রতিদিন গ্রহণ করলে প্রচুর উপকার পাওয়া যায়।

• ওজন কমাতে-

  আমরা ওজন কমাতে সাহায্য করে ‌।এটি মেটাবলিজম বাড়িয়ে ওজন কমায়। আমলার সেবনে খিদে কম পায় এবং অনেক সময় পর্যন্ত পেট ভরা থাকে।

• রক্তস্রাব-

  যদি কারো রক্ত স্রাব এর সমস্যা থাকে তাদের আমলার সেবন করা উচিত। প্রতিদিন একবার করে আমলার পাউডার জলের সাথে মিশিয়ে খেলে নাক থেকে রক্ত পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

• উত্তেজনার থেকে নিষ্কৃতি-

  আমলার সেবনে সব সময় উত্তেজনা থেকে শান্তি পাওয়া যায় ।ভয়ানক ঘাম দেওয়া ,গরম লাগা ,বিপাকীয় রোগ পুনরাবৃত্তিমূলক যৌনচিন্তা ইত্যাদি উপসর্গগুলি নিরাময় করতে সহায়তা করে। অতএব দৈনিক আমলা পাউডার এর সেবন করুন।

• বমিভাব থেকে নিষ্কৃতি-

  আমলার সাথে মধু মিশিয়ে খান অথবা আমলার রসে চিনির মিছরি মিশ্রিত করে খান। এর ফলে বমি ভাব বন্ধ হয়ে যাবে।

• রোগ প্রতিরোধ-

  আমলা এমন কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে হওয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে। তাই আমলা পাউডারের যথেষ্ট পরিমাণে সেবন করুন।