টাইফয়েড ফিভার বা জ্বর
টাইফয়েড হল সালমোনেল্লা ব্যাকটেরিয়া থেকে ছড়ানো একটি বিপজ্জনক রোগ। এটি এক ধরণের সাময়িক জ্বর। টাইফয়েড জ্বর পাচনতন্ত্র এবং রক্তপ্রবাহে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দ্বারা সৃষ্ট হয়। অপরিশুদ্ধ জল, সংক্রামিত জুস বা পানীয়র সাথে সালমোনেল্লা ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। কোনও সংক্রামিত ব্যক্তির এঁটো খাবার ও জলপান করার কারণেও এটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও, এই রোগ সংক্রামিত খাদ্য সেবন করার ফলেও সৃষ্টি হয়। পাচনতন্ত্রে সালমোনেল্লা পৌঁছানোর পরে, এই ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এই ব্যাকটেরিয়া শরীরের এক অঙ্গ থেকে অন্য অঙ্গে পৌঁছে যেতে পারে। টাইফয়েডের চিকিৎসার কোনও অবহেলা করা উচিত নয়। যদি ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ না হয় তবে এটি আবার ফিরে আসতে পারে।
টাইফয়েড কি?
টাইফয়েডের ব্যাকটেরিয়া শুধুমাত্র মানুষের শরীরে পাওয়া যায়। এই কারণে রোগীর ব্যবহৃত জল যখন নিকাশি ব্যবস্থায় পৌঁছয় এবং তা কোনও ভাবে যখন পানীয় জলের সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে মিশে যায়, টাইফয়েড ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে। এই জল নানা ভাবে খাবারেও মিশে যেতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়া বহু সপ্তাহ জল এবং শুকনো মলের মধ্যে বাস করতে পারে। এইভাবে, এটি দূষিত জল এবং খাদ্য সামগ্রীগুলির মাধ্যমে মানুষের শরীরে পৌঁছে সংক্রমণ ঘটায়। সংক্রমণ যখন গুরুতর অবস্থায় পৌঁছয়, ৩-৫ শতাংশ মানুষ এই রোগের বাহক হয়ে ওঠে। কিছু লোকের সামান্যই সমস্যা হতে পারে, তাদের লক্ষণগুলি অতটাও দৃশ্যমান হয় না, কিন্তু এই রোগের বাহকরা দীর্ঘদিন ধরে এই রোগে ভুগতে থাকেন। তারা এই রোগের লক্ষণগুলি দেখান না, কিন্তু বহু বছর ধরে তাদের টাইফয়েড ব্যাকটেরিয়া শরীরে থেকেই যায়।
লক্ষণ
সংক্রামিত জল বা খাবার খাওয়ার পরে, ক্ষুদ্রান্ত্রের মাধ্যমে রক্তের প্রবাহে সালমোনেল্লা প্রবেশ করে। যকৃৎ, প্লীহা এবং অস্থি মজ্জার সাদা রক্তকনিকার মাধ্যমে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং তারা আবার রক্ত প্রবাহে পৌঁছায়। জ্বর টাইফয়েডের একটি প্রধান উপসর্গ। সংক্রমণ বৃদ্ধির পরে খিদে কমে যাওয়া, মাথা ব্যাথা, শরীরে ব্যথা, প্রবল জ্বর, শীত করা, ডায়রিয়া, শারীরিক অস্বস্তি, দুর্বলতা এবং বমিভাব দেখা যায়। অন্ত্রের সংক্রমণের কারণে, শরীরের প্রতিটি অংশে সংক্রমণ ঘটতে পারে, যার ফলে অন্যান্য অনেকগুলি সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
সাধারণত টাইফয়েড 1 মাস পর্যন্ত চলতে থাকে তবে দুর্বলতা যদি খুব বেশি হয় তখন সেরে উঠতে দীর্ঘ সময় নিতে পারে। এই সময়ে শরীরের মধ্যে অনেক দুর্বলতা দেখা যায় এবং রোগী স্বাভাবিক হতে বহু দিন সময় নিতে পারে।
টাইফয়েড পরীক্ষা
প্রাথমিক পর্যায়ে, রোগীর রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসা করা হয়। এর পাশাপাশি, রোগীর মল পরীক্ষা করা হয় এবং এইভাবে তার শরীরের মধ্যে টাইফয়েড ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি সনাক্ত করা হয়। ‘ভিডাল টেস্ট’ টাইফয়েড পরীক্ষার একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি, তবে টাইফয়েড সেরে যাওয়ার পরেও বহুবার রোগীর রক্তের ‘ভিডাল টেস্ট’-এর ফলাফল পজিটিভ দেখায়। এই জন্য, স্টুল এবং টাইফয়েড পরীক্ষা একটি ভাল বিকল্প। যদি রোগীর ভীষণ পেটে ব্যথা হতে থাকে বা বমি হতে থাকে তখন রোগীর সোনোগ্রাফি করা হয়।
চিকিৎসা
টাইফয়েডের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের ব্যবহার করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে টাইফাইড অ্যান্টিবায়োটিক পিল এবং ইনজেকশনগুলির সাহায্যে এটি দুই সপ্তাহের মধ্যে নিরাময় করা যায়। এটি তাড়াতাড়ি সারিয়ে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রোগীর যত্ন কীভাবে করবেন
টাইফয়েডের সময়ে মাত্রাতিরিক্ত জ্বর থাকে। ঠাণ্ডা জলে কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে তা দিয়ে শরীরে লাগানো দরকার তাপমাত্রা কমানোর জন্যে। এ ছাড়া, মাথায় ঠান্ডা জলের পট্টি রাখলেও শরীরের তাপমাত্রা কমানো যায়। জামাকাপড় সময়ে সময়ে পরিবর্তন করা উচিত। এটা মনে রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে জল দিয়ে পট্টি দেওয়া হচ্ছে তা যেন বরফের মতো ঠাণ্ডা না হয়। পট্টি বাঁধার জন্যে সাধারণ তাপমাত্রার জল ব্যবহার করুন।
ঘরোয়া প্রতিকার
তুলসী পাতা ও সূর্যমুখী ফুলের পাতা বেটে তার রস দিয়ে জুস বানিয়ে পান করলে টাইফয়েড থেকে উপশম পাওয়া যায়।
রসুন শরীর গরম করে দেয় এবং এটি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক। ৫-৭ টুকরো রসুনের কোয়া থেঁতো করে ঘিয়ে ভেজে নিন এবং তা সৈন্ধব লবণের সাথে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
আপেলের রস বের করে তাতে আদার রস মিশ্রিত করুন; এটি সমস্ত ধরণের জ্বরের হাত থেকে আপনাকে মুক্তি দেবে।
একটি পাকা কলাকে বেটে এবং এতে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে দিনে দুবার গ্রহণ করুন।
টাইফয়েড সারিয়ে তোলার জন্যে লবঙ্গ ভীষণ উপকারি। লবঙ্গর তেলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আট কাপ জলে৫-৭টি লবঙ্গ দিয়ে ফুটিয়ে নিন। খানিকক্ষণ পরে তা নামিয়ে ছেঁকে নিন। সারা দিন এই জল পান করুন। টানা এক সপ্তাহ এই ঘরোয়া চিকিৎসার উপায়গুলো মেনে চলুন।